গ্রাম সড়ক যোজনা নিয়ে নয়া ফরমান কেন্দ্রের, রাজ্যে চিঠি আসতেই উঠল আপত্তি

সদ্য শেষ হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। আর তার রেশ কাটতে না কাটতেই চাপ বাড়াতে শুরু করল কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলায় আবার গোহারা হয়েছে বিজেপি। তার মধ্যেই তীব্র সংঘাত বেঁধেছে কেন্দ্র–রাজ্যের মধ্যে। কারণ প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্প। এবার নরেন্দ্র মোদীর সরকার নয়া ফরমান জারি করেছে। যা নিয়ে নবান্নে চিঠি আসতেই তীব্র আপত্তি উঠেছে বলে সূত্রের খবর। তবে কেন্দ্রের এই নয়া ফরমান নিয়ে শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই আপত্তি তোলেনি, বরং আপত্তি তুলেছে সব অবিজেপি শাসিত রাজ্যের সরকারগুলিও।

কেন আপত্তি তোলা হয়েছে?‌ কেন্দ্রের নয়া ফরমানে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের যে পাকা রাস্তাগুলি তৈরি হচ্ছে, তার পরিকল্পনা থেকে উদ্বোধন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে সাংসদের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। এখন রাজ্যের ১৬টি সাংসদ রয়েছে বিজেপির। তাই গ্রাম সড়ক যোজনার কাজ করতে গেলে তাঁদের অনুমতি নিতে হবে। আর এই নয়া ফরমান মানতে নারাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কারণ এমনিতেই পথশ্রী বা রাস্তাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্য সরকারই গ্রামীণ রাস্তা তৈরি থেকে মেরামত সবই করতে শুরু করেছে। যদিও কেন্দ্রের এই নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে বলে দেশের সবকটি রাজ্যকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। তা নিয়েই আপত্তি উঠেছে।

কোন বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জোরাল হচ্ছে?‌ সাংসদরাই একমাত্র জনপ্রতিনিধি নন বলেই মনে করেন রাজ্য সরকার। গ্রামীণ রাস্তা তৈরি করতে এলাকার নির্বাচিত বিধায়ক, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের সদস্যরাও জনপ্রতিনিধি। তাঁদেরকে সরিয়ে রেখে সাংসদদের শুধু যুক্ত করার পিছনে আধিপত্য কায়েম করার রাজনীতি রয়েছে বলে মনে করে নবান্ন। তাই সকলের মতামত নেওয়াও উচিত বলেও মনে করছেন নবান্নের অফিসাররা। কেন্দ্রের চিঠিতে শুধু সাংসদদের অনুমতি নিতে বলা হয়েছে। রাজ্যের আপত্তি এখানেই। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব অমিত শুক্লার সই করা ওই চিঠি এখন চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে।

আরও পড়ুন:‌ সরাসরি হেঁটে সেনা ছাউনিতে ঢুকে পড়ল হাতি, শিলিগুড়ির ক্যান্টনমেন্টে আতঙ্ক

আর কী আছে চিঠিতে?‌ এই চিঠিতে বেশ কিছু গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। এক, কোনও নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পে কোথায়, কত রাস্তা তৈরি হবে তার তালিকা তৈরি করতে হবে। দুই, সাংসদদের অনুমতি নিতে হবে। সাংসদের পরামর্শে গুরুত্ব দিতে হবে। তিন, সাংসদের পরামর্শ মানা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখবে স্টেট লেবেল স্ট্যান্ডিং কমিটি। চার, রাস্তার উদ্বোধনে সাংসদকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক তাপস রায় সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘এটা আসলে রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল। এটা গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক। দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্র–রাজ্যের সমান ভূমিকা। সেখানে রাজ্যের উপর কেন্দ্রের এই খবরদারি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পরিপন্থী।’‌