জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের নতুন কমিটি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ১১টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে।

এতে ২০২৩-২০২৪ সেশনের জন্য সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শরণ এহসান ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া জাহান। তবে নতুন কমিটি গঠনের এক দিন পর এক সদস্য পদত্যাগ করেছেন।

রবিবার (১৬ জুলাই) বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করে দফতর সম্পাদক আহসান লাবিব বলেন, শুক্রবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে রাত ১টার দিকে নির্বাচন কমিশন ফল ঘোষণা করেন। তিন সদস্য বিশিষ্ট এই কমিশনের ছিলেন প্রাপ্তি তাপসী, নাফিস শাহরিয়ার ও আরিফ হোসেন। এ ছাড়া ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে এক সদস্য এবারের কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন।

কমিটির অপর সদস্যরা হলেন ১ নম্বর সহসভাপতি সাদ্দাম হোসেন রোহান (জলসিঁড়ি), ২ নম্বর সহসভাপতি আব্দুর রহমান নাহিদ (সুস্বর), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক বান্না (জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার টিএসসি), অর্থ সম্পাদক নওশিন উলফাত সুকন্যা (জাহাঙ্গীরনগর সিনে সোসাইটি), দফতর সম্পাদক আহসান লাবিব (চিরকুট), প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাদমান অলীভ (জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেট অর্গানাইজেশন)।

এ ছাড়া কার্যনির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বেদত্রয়ী গোস্বামী (জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেট সোসাইটি), আ র ক রাসেল (চারণ) ও রিফাত হাসান (ধ্বনি)।

জোটের নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের একজন করে প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পান। শরণ এহসান জহির রায়হান চলচ্চিত্র সংসদের প্রতিনিধি হিসেবে এবং সুমাইয়া জাহান জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার অডিটরিয়ামের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনে প্রার্থী হন।

কমিটি গঠনের এক দিন পর কার্যনির্বাহী সদস্য আ র ক রাসেল পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে চারণের প্রতিনিধি হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু তা আমি জানতাম না। তাই চারণ থেকে পদত্যাগ করেছি। যেহেতু চারণের সঙ্গে যুক্ত নেই, সেহেতু জোটেও থাকার সুযোগ নেই। তাই সেখান থেকেও পদত্যাগ করেছি।’

চারণ থেকে পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে রাসেল বলেন, ‘চারণ বাসদের একটি অঙ্গসংগঠন। বাসদের সাম্প্রতিক যৌন হয়রানির অভিযোগকেন্দ্রিক কর্মকাণ্ডের কারণে আমার আদর্শিক জায়গা থেকে পদত্যাগ করেছি।’

এদিকে নির্বাচন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জোটভুক্ত সংগঠনগুলোর শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে সাবেক নেতারা প্রকাশ্যে কাজ করেছেন। জোটভুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যদের মতামত না নিয়ে লেজুড়বৃত্তির আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া অপরিচিত ব্যক্তিকে শীর্ষ পদে বিজয়ী করতে বিকাল ৫টার সম্মেলন রাত পৌনে ১২টার দিকে শুরু করেছেন বলে দাবি করেন তারা।

ক্ষোভ জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেট অরগানাইজেশনের (জেইউডিও) সদস্য মোহাম্মদ রায়হান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘কমিটির উপরে খুশি না অবশ্যই। তাই তাদের অভিনন্দন জানানোর প্রশ্ন আসে না। সাংস্কৃতিক জোট সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা হারাতে যাচ্ছে, এটা নিশ্চিত। সামনের দিনে সাংস্কৃতিক জোটকে হয়তো আর দশটা সাধারণ মেরুদণ্ডহীন সংগঠনের মতোই দেখবে সবাই। এই কমিটি যেন জোটের লিগ্যাসিতে ফুলস্টপ দিয়ে দিল।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদায়ী কমিটির সভাপতি সৌমিক বাগচী বলেন, ‘যদি পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করতাম, তাহলে কি আর নির্বাচন হতো! এটিকে আমি অপরিপক্ব মানসিকতা হিসেবে দেখছি। জোটের নতুন কমিটিতে যারাই নির্বাচনে হেরেছে, তারাই এসব ক্ষোভ প্রকাশ করে কাদা ছোড়াছুড়ি ও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ভোট হতে দেরি হওয়ায় তো কেউ চলে যায়নি। নির্বাচন ১২টায় নয়, ১০টায় শুরু হয়েছে। একটি সংগঠনের প্রতিনিধি অনুপস্থিত থাকায় আমাদের দেরি হয়েছে। তবে সবার সম্মতি থাকায় আমরা এতক্ষণ অপেক্ষা করেছি।’

উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিল্পী-লেখক-সাংস্কৃতিক কর্মীদের সমন্বিত সামাজিক-রাজনৈতিক জোট বা সংগঠন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট। ১৯৯৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করে এটি। এর আগে এই জোটে ১২টি সংগঠন থাকলেও গত বছর নির্বাচনের সময় গ্রুপিং ও নির্বাচনকে ম্যানিপুলেট করার অভিযোগ এনে ‘চলচ্চিত্র আন্দোলন’ জোট থেকে বের হয়ে যায়।