মতামত: ফের ডিসেম্বর ডেডলাইন, নিজেদের পায়ে কি নিজেরাই কুড়ুল মারছেন BJP নেতারা?

পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে বেলাগাম হিংসায় জ্বলছে গোটা পশ্চিমবঙ্গ। এরই মধ্যে রাজ্যে ৩৫৫ ধারা জারির দাবিতে নতুন করে সরব হয়েছে বিজেপি। শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে সেই দাবি জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এরই মধ্যে শনিবার বিকেলে এক দলীয় সভায় বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর দাবি বলেছেন, এই সরকার আর বড় জোর ৫ মাস টিকবে। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি। যাকে ঘিরে নতুন করে শুরু হয়েছে জল্পনা। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, বারবার এই ধরণের ডেডলাইনে রাজ্যে বিজেপি নেতাদের বক্তব্যের ভার কমছে। যার ফলে আগামীতে সমস্যায় পড়তে হতে পারে তাঁদের।

শনিবার শান্তনু বলেন, ‘বাংলায় শাসকদল যেভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন করিয়েছে তাতে গণতন্ত্র চলতে পারে না। তৃণমূল সন্ত্রাস না করলে বিজেপি ১০ গুণ বেশি ভোট পেত। এদের ভাবনা এরা চিরস্থায়ী। কিন্তু এরা চিরস্থায়ী নয়, আগামী ৫ মাসের মধ্যেই এদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি’। শান্তনু ঠাকুরের বক্তব্য নিয়ে রবিবার দুপুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে প্রশ্ন করা হলে এক কদম এগিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার পাঁচ মাস ছ’মাস যখন খুশি পড়ে যেতে পারে। অসুবিধার তো কিছু নেই। সরকার কী ভাবে চলে? বিধায়কদের সমর্থনে। বিধায়কেরা হঠাৎ মনে করল, আমরা সমর্থন করব না। আমরা অন্য কাউকে সমর্থন করব। বিধায়কদের তো মনে হতেই পারে। না হওয়ার তো কিছু নেই। আবার ধরুন, এমন গণআন্দোলন শুরু হল, যে বিধায়কেরা বলল, ‘আমরা আজ থেকে আর বিধায়ক পদে থাকব না।’ হাত জোড় করে সবাই বিধায়ক পদ ছেড়ে দিল। এরকমও গণআন্দোলন হতে পারে’।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এই ধরণের আলটপকা মন্তব্য করে দলের উপকারের থেকে ক্ষতিই বেশি করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দুইতৃতীয়াংশের বেশি আসন জিতে ক্ষমতায় থাকা তৃণমূল সরকারকে কি বিধায়কদের সমর্থন তুলে নিয়ে ফেলে দেওয়া সম্ভব? তার থেকেও বড় কথা, বিজেপি নেতাদের একাধিক ভবিষ্যদ্বাণী এর আগে যখন ফলেনি তখন কেন তাদের এই ধরণের কথা আর বিশ্বাস করবে মানুষ বা নিচুতলার দলীয় কর্মীরা।

গত ডিসেম্বরে ‘বড় কিছু হবে’ বলে তিনটি তারিখ জানিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। একাধিকবার সেই তারিখগুলির উল্লেখ করেছিলেন তিনি। কিন্তু শুভেন্দুবাবুর উল্লেখ করা কোনও তারিখেই তাৎপর্যপূর্ণ কিছু ঘটেনি। এর পর সুর বদলে শুভেন্দুবাবু বলেন, এমাসে ঘটেনি, কয়েক মাসের মধ্যে ঘটবে। কিন্তু তার পর মাসের পর মাস কাটলেও তেমন কিছু ঘটতে দেখেনি রাজ্যবাসী। ওদিকে শুভেন্দুবাবুর বক্তব্য নিয়ে বিজেপি নেতাদের প্রশ্ন করলে তারা এড়িয়ে গিয়েছেন। বলেছেন, শুভেন্দুবাবুর কাছে নিশ্চই নির্দিষ্ট কোনও তথ্য রয়েছে যার ভিত্তিতে তিনি একথা বলেছেন। কিন্তু তার পর থেকেই বিজেপি নেতারা কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করলেই শুভেন্দুবাবুর সেই কথার নজির দিয়ে কটাক্ষ করছে তৃণমূল। সংবাদমাধ্যমে শুভেন্দুবাবুর মন্তব্য নিয়ে বহুল চর্চা হয়েছে। কিছু হবে ভেবে হাঁ করে সে সব দেখেছে, পড়েছে জনতা। কিন্তু নিট ফল শূন্য।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, শুভেন্দু অধিকারী কিসের ভিত্তিতে সেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা কি তাঁর কাছে জানতে চেয়েছে বিজেপির রাজ্য বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব? দিন তারিখ ঘোষণার আগে কি তিনি দলের অনুমতি নিয়েছিলেন?

শনিবার কলকাতায় ফিরে সুকান্তবাবু বলেছিলেন, রাজ্যে ৩৫৫ ধারা জারির মতো পরিস্তিতি রয়েছে। কিন্তু কখন তা প্রয়োগ করা হবে সেব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তার পর শান্তনুর ‘৫ মাসের মধ্যে সরকার পড়ে যাবে’ মন্তব্যে শনিবার সুকান্তবাবুর মন্তব্যকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিচ্ছে। তাছাড়া কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দিয়েছে, সোনার চামচে করে ক্ষমতা এরাজ্যের নেতাদের হাতে তুলে দেবে না তারা। সেজন্য তৃণমূলের সঙ্গে তাদের লড়াই করতে হবে। এমনকী এক বৈঠকে মমতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মমতাকেই নজির হিসাবে উল্লেখ করেন অমিত শাহ।

বিজেপির একাংশের মতে, রাজ্য বিজেপি এখনো রাজনৈতিকভাবে পরিণত নয়। রাজ্যে দলের কার্যকলাপ শুরু হয়েছে বছর দশেক। অধিকাংশ নেতাই কম বয়সী ও বেশ অপরিণত। ফলে তাদের ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্খা রয়েছে। সেই উচ্চাকাঙ্খা বাস্তবায়িত করার চেষ্টায় অনেক সময় তারা এমন সব দাবি করে বসছেন যাতে দলের ক্ষতি হচ্ছে।