শত চেষ্টাতেও চাঁদের মাটি ছুঁতে পারেনি বহু মহাকাশযান, কেন জানেন?

রাতের আকাশে প্রতি দেখা গেলেও ছোঁয়া দুষ্কর তাকে। না, কেবল সাধারণ মানুষ নয়। নভোচারীদের পক্ষেও চাঁদের মাটি স্পর্শ করা বেশ মুশকিলের। আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে চাঁদে অবতরণ করেছিলেন আর্মস্ট্রং-এডউইনরা, কিন্তু আজও কোনও মহাকাশযানের চাঁদের মাটিতে সফল ল্যান্ডিং অত্যন্ত কঠিন কাজ।

চাঁদের বুকে যাওয়ার জন্য যাত্রা করলেও ল্যান্ডিং করতে না পেরে ব্যর্থ হয়েছে বহু মিশনI সর্বশেষ ২০১৯ সালে চাঁদের পৃষ্ঠে একটি মানববিহীন মহাকাশযান পাঠানোর চেষ্টা করেছিল ভারত, যার নাম ছিল চন্দ্রযান-২। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বিক্রম নামক ল্যান্ডারটি চাঁদের পৃষ্ঠে ল্যান্ডিং করার সময় ধ্বংস হয়। লক্ষণীয়ভাবে, একই বছরে অন্যান্য দেশের চন্দ্র অভিযানের প্রকল্পগুলিও ব্যর্থ হয়েছিল। এই বছরই ইসরায়েলের নেতৃত্বাধীন বেরেশিট মিশন ব্যর্থ হয়। চলতি বছরের এপ্রিলে, জাপান থেকে যাত্রা করা চন্দ্রযান সফল ও মসৃণ অবতরণ করতে ব্যর্থ হয়।

১৯৬০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন একের পর এক চন্দ্রাভিযান সংঘটিত করেছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত না সাফল্য এসেছে। কিছু ব্যতিক্রম অবশ্য আছে। চিন ইদানীং কালের একমাত্র দেশ যেটি চাঁদের বুকে মসৃণ অবতরণ সম্পন্ন করেছে ২০১৩ সালে। কিন্তু কেন এই উন্নত প্রযুক্তি ও পরীক্ষা নিরীক্ষার পরেও ব্যর্থ হয়েছে একের পর চন্দ্র অভিযান?

চাঁদে অবতরণের প্রসঙ্গে যেতে হলে আমাদের প্রথমেই জানতে হবে প্রাথমিক কয়েকটি বিষয়। চাঁদ আমাদের গ্রহ থেকে প্রায় ৩,৮৪,৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কিন্তু মহাকাশযানের গতিপথ অনুযায়ী সেই দূরত্ব অনেক বেশিও হতে পারে। এই দীর্ঘ যাত্রায় যে কোনও অংশেই যান্ত্রিক বিভ্রাটে ব্যর্থ হতে পারে চন্দ্র অভিযান। অনেক ক্ষেত্রে অবতরণ না করতে পেরে কেবল চাঁদে ভ্রমণ করেই মিশন সমাপ্ত করতে হয়। যেমন অতীতে নাসাকে তার লুনার ফ্ল্যাশলাইট মিশনটি বন্ধ করতে হয়েছিল মহাকাশযানের প্রপালশন সিস্টেমে ব্যর্থতার কারণে। এর ফলে মহাকাশযানটি চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশই করতে পারেনি।

এরপরও থাকে ঝুঁকি। চাঁদে যে মহাকাশযানগুলি প্রবেশ করে, তাদের জন্য অপেক্ষা করে অসম্ভব চ্যালেঞ্জ। চাঁদের বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত পাতলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে মহাকাশযানের গতি কমাতে প্রপালশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতটি সঠিক ভাবে চালনা করতে গেলে মহাকাশযানটিকে প্রচুর জ্বালানি বহন করতে হবে, যাতে নিরাপদে অবতরণের জন্য সে নিজেকে ধীর করতে পারে। কিন্তু বেশি জ্বালানি বহন করার অর্থ হল মহাকাশযানটি ভারী। এই সময় ব্যালেন্স ঠিক রাখাই মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়।

অবতরণের জন্য অবস্থান নির্ণয়ও সহজ নয় চাঁদে। সেখানে নেই কোনও জিপিএস সিস্টেম। তাই, মহাকাশযান একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবতরণ করার জন্য উপগ্রহের নেটওয়ার্কের উপরেও নির্ভর করতে পারে না। এক্ষেত্রে চাঁদের মাটিতে নির্দিষ্ট স্থানে মৃসণ ভাবে অবতরণ করতে মহাকাশযানে অবস্থিত কম্পিউটারগুলিকে দ্রুত গণনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। অবতরণের কয়েক কিলোমিটার আগে প্রপালশন সিস্টেমের ধাক্কায় সেন্সরগুলিও ঠিক করে কাজ করে না অনেক সময়। তখন দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। চাঁদের বুকে অবস্থিত গর্ত, পাহাড়ি ভূভাগ অনেক ক্ষেত্রে অবতরণের জন্য অবস্থান নির্ণয়ে বাধা দান করে। এসব মিলিয়েই সহজ হয় না চন্দ্রযানগুলির সফল অবতরণ। এখন অপেক্ষা চন্দ্রযান-থ্রি কোনও ব্যাতিক্রম স্থাপন করতে পারে কি না।