Pregnancy: হিস্টেরোস্কোপি মেটাবে সন্তানহীনতার সমস্যা! ওয়ার্কশপে জানালেন স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী হোক বা বাংলাদেশ থেকে স্যুইজারল্যান্ড বিশ্বের সব দেশের নারীর মধ্যেই বোধহয় এক মা বাস করে। তাই কম বেশি সব মেয়েই একটা বয়সের পর সন্তানের কামনা করেন। কিন্তু নারী পুরুষের নানান শারীরিক অসুবিধা মা হওয়ার পথে বাধা তৈরি করে। ঠিক এই ঘটনাই ঘটেছিল বাংলাদেশের রশিদা, স্যুইজারল্যান্ডের অনীতা ও মুর্শিদাবাদের রেশমার। অনেক চেষ্টা করেও সন্তানধারণের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছিল না। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এই তিনজনের কোলেই সন্তান তুলে দিতে পেরেছে।

এই তিন সন্তানাকাঙ্খী মায়েদের সমস্যায় একটা মিল ছিল। তিন জনেরই জরায়ুর সমস্যা মা হওয়ার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হিস্টেরোস্কোপের সাহায্যে সেই সমস্যা নিখুঁত ভাবে ধরা গিয়েছে। একইসঙ্গে সঠিক চিকিৎসার পর এঁরা মা হয়েছেন। হিস্টেরোস্কোপিতে জরায়ুমুখ ও জরায়ুর ভিতরের নানান ত্রুটি বিচ্যুতি পরিষ্কার ভাবে দেখা যায়। অতিরিক্ত রক্তপাত, পেটে ব্যথাসহ নানা স্ত্রীরোগ নির্ণয় করার পাশাপাশি চিকিৎসাও করা সম্ভব। সম্প্রতি কলকাতার আর জি স্টোন হাসপাতালে ‘হিস্টেরোস্কোপি মাস্টারক্লাস’ ওয়ার্কশপের আয়োজন করেছিলেন সৃষ্টি ক্লিনিকের অধিকর্তা চিকিৎসক সুদীপ বসু। সারাদিন ব্যাপী ওই ওয়ার্কশপে গোটা রাজ্য ও বাংলাদেশ থেকে ৩০০ অভিজ্ঞ ও তরুণ শিক্ষার্থী স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। সৃষ্টি ক্লিনিকে মোট এক হাজার হিস্টেরোস্কোপি করেছেন চিকিৎসক সুদীপ বসু। এই দিন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন তিনি। পুণের খ্যাতনামা চিকিৎসক মিলিন্দ তেলাঙ্গ এবং মুম্বইয়ের বিখ্যাত হিস্টেরোস্কোপিক সার্জন চিকিৎসক এস কৃষ্ণকুমার ও চিকিৎসক আর কৃষ্ণকুমার আর জি স্টোন হাসপাতালে ১৪ টি জটিল হিস্টেরোস্কোপি করেন যা সরাসরি শিক্ষার্থী চিকিৎসকরা দেখতে পান।

আরও পড়ুন: ঠিক করে দাঁত মেজেও কমানো যায় হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা! কখন মাজবেন, জানেন 

আরও পড়ুন: ৫ শস্যই নিয়ন্ত্রণে রাখে ডায়াবিটিস, আপনার হেঁশেলে এগুলি আছে কি না দেখুন তো

স্ত্রীরোগের চিকিৎসায় হিস্টেরোস্কোপি নতুন নয়। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। ব্যথাহীন এই পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয়ের সময় রোগী নিজেই নিজের জরায়ুর অন্দর খুঁটিয়ে দেখে নিতে পারবেন। চিকিৎসকের থেকে জেনে নেবেন ঠিক কী ধরণের সমস্যা আছে। এখানেই শেষ নয়, চিকিৎসক সুদীপ বসু জানালেন হিস্টেরোস্কোপি হয়ে যাবার পর রোগী সোজা অফিস চলে যেতে পারেন, ছুটি নিয়ে বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।

প্রবাসী অনীতা স্যুইজারল্যান্ড থেকে কলকাতার বাড়িতে এসেছিলেন, মন খারাপ নিয়ে। কেননা দুবার আইভিএফ-এর সাহায্যে সন্তান নেওয়ার চেষ্টা বিফলে যায়। কলকাতায় সৃষ্টি ক্লিনিকে পরামর্শ নিতে আসায় হিস্টেরোস্কোপি করে দেখা যায়, তাঁর জেনিটাল টিউবারক্যুলোসিস হয়েছে। এটাই সন্তান হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। টিবির চিকিৎসা করে রোগ নির্মূল করার পর আইভিএফ করে সুস্থ সন্তানের জন্ম দেন এই প্রবাসী দম্পতি।

বাংলাদেশের রশিদার ঘটনাটা একটু আলাদা। অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের জন্য তিনি প্রায় গৃহবন্দী জীবনযাপন করছিলেন। ওদেশের চিকিৎসকরা ডিম্বাশয় ও জরায়ু অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তিনি কলকাতায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে আসেন। হিস্টেরোস্কোপি করে দেখা যায়, তাঁর জরায়ুর মধ্যে একটি বড়সড় সাবমিউকাস ফাইব্রয়েড আছে। জরায়ু বাঁচিয়ে শুধুমাত্র ফাইব্রয়েড বাদ দিতেই ওঁর সমস্যা মিটে যায়। রশিদা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যান। মধ্য তিরিশের তরুণী রেশমা সন্তানসম্ভবা ছিলেন। আচমকা ২৬ সপ্তাহে ভয়ানক লেবার পেন শুরু হয়। অনেক জটিলতার মধ্যে দিয়ে মাকে বাঁচানো গেলেও ভ্রূণটি নষ্ট হয়ে যায়। এরপর আর কিছুতেই তিনি গর্ভবতী হতে পারছিলেন না। এখানেও মুশকিল আসান সেই হিস্টেরোস্কোপি। চিকিৎসক সুদীপ বসু দেখেন, তাঁর জরায়ুমুখ ও জরায়ুর মাঝখানে একটি পর্দা থাকায় এই সমস্যা। হিস্ট্রোস্কোপিক কমপ্লিট সেপ্টাম রিমুভাল করে তাঁর সমস্যা দূর করা হয়। এর তিন মাসের মধ্যেই তিনি স্বাভাবিকভাবে গর্ভধারণ করেন ও যথাসময়ে সন্তানের জন্ম দেন। এমনই অনেক জটিল স্ত্রী রোগ মুক্তিতে হিস্টেরোস্কোপি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়।