ছিনতাইকালে পকেটে টাকা না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে হত্যা

গাজীপুরে ছিনতাইয়ের সময় পকেটে টাকা না পেয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় ও হত্যা করেছে ছিনতাইকারীরা। এ ঘটনায় জড়িত দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)। সোমবার (১৭ জুলাই) জিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। 

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- কালীগঞ্জ উপজেলার ফুলদি মাঝুখান এলাকার লোকমান সরকারের ছেলে পলাশ সরকার (২৬) এবং মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি থানার চিতারা দিঘীরপাড় এলাকার মৃত আলী আকবরের ছেলে আল আমিন (২১)।

নিহতের খালাতো ভাই ইব্রাহীম জানান, গত ঈদের আগে ২৬ জুন রাতে গাজীপুরের মীরের বাজার এলাকার খালার বাসা থেকে ইজিবাইকযোগে সাইনবোর্ড এলাকায় মামার বাড়ি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন উত্তরার একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তামিম হোসেন (২৫)। তাকে টঙ্গী রেলস্টেশনের আউটার সিগনালের পাশে তিস্তার গেইট এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ রেললাইনের পাশ থেকে উদ্ধার করে প্রথমে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় রেলওয়ে পুলিশ। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। কুমিল্লার হোমনা থানার শ্রীমুদ্দি গ্রামের ছানাউল্লাহর ছেলে তামিম তার খালার বাসায় থেকে লেখাপড়া করতেন।  

টঙ্গী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই ছোটন শর্মা জানান, টঙ্গীর তিস্তার গেইট এলাকার রেলইনের পাশ থেকে রাত ১০টার দিকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত আড়াইটার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার নাম পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় ঈদের ভীড়ে চলন্ত ট্রেন থেকে পড়ে তিনি আহত হন। অন্য কোনও ক্লু না পাওয়ায় এ ব্যাপারে রেলওয়ের কমলাপুর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়।

জিএমপির ওই কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান জানান, ক্লুলেস এ ঘটনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ছায়া তদন্ত শুরু করে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তদন্তের এক পর্যায়ে বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই ছিনতাইকারী পলাশ সরকার ও আল আমিনকে টঙ্গীর গোপালপুর বস্তি এলাকা থেকে রবিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রেঞ্জ (সিলাই রেঞ্জ) এবং মুক্তিপণের চার হাজার টাকা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে রবিবার টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি মামলা করেন। গ্রেফতার ব্যক্তিরা সোমবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।  

তিনি আরও জানান, ঘটনার রাতে ইজিবাইকটি টঙ্গী আমতলী এলাকায় পৌঁছালে পাঁচ থেকে ছয় জন ছিনতাইকারী অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ও মারধর করে আরোহী তামিম ও অপর যাত্রী সোহেল রানার কাছ থেকে দুটি মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় তাদের কাছে পর্যাপ্ত টাকা না পেয়ে ছিনতাইকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই দুই জনকে অপহরণ করে স্থানীয় শিলমন স্পেশালাইজড হাসপাতালের পেছনের অন্ধকার গলিতে নিয়ে যায়। সেখানে ছিনতাইকারীরা তাদের বেধড়ক মারধর করে এবং পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবী করে। ছিনতাইকারীরা তামিমের পরিবারের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। বেধড়ক মারধরের কারণে তামিম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তার মৃত্যু হয়েছে ভেবে তামিমকে রেললাইনের পাশে ফেলে রেখে ছিনতাইকারীরা ইজিবাইকযোগে পালিয়ে যায়। যাওয়ার পথে তারা স্থানীয় একটি বিকাশের দোকান থেকে ওই টাকা উত্তোলন করে বলে তারা জানায়।