জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপশক্তির ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে: ওবায়দুল কাদের

‘বিএনপি গণতন্ত্রকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির এই ধরনের তথাকথিত রূপরেখা ও আন্দোলনের হুমকি বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে এই অপশক্তির ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে।’

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি। এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উত্থাপিত রূপরেখাকে ‘অন্তঃসারশূন্য ও অকার্যকর’ বলে প্রত্যাখ্যান করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ।

বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি বিভ্রান্তিতে ঘুরপাক খাচ্ছে। কখনও ১০ দফা, কখনও ২৭ দফা কখনও এক দফা, আবার কখনও ৩১ দফা। বিএনপি কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে ঘোষিত এসব দফা জনগণ কর্তৃক ইতোমধ্যে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তাই তারা কিছু দিন পর পর নতুন নতুন দফা নিয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির এই দফা জনগণের চাহিদা বিবেচনা করে নয় বরং ঐতিহ্যগতভাবে তাদের দুর্নীতি, লুটপাটতন্ত্র এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের স্বৈরতান্ত্রিক অপরাজনীতি ফিরিয়ে আনার কূটকৌশল। তাদের এসব দফা ও রূপরেখায় জনকল্যাণের সুনির্দিষ্ট কোনও কর্মপন্থা নেই। জনগণ তাদের আস্থায় না নিলেও জনগণকে বিভ্রান্ত করতে তারা মরিয়া হয়ে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি আজ  যেসব রূপরেখা ও দফা তুলে ধরছে, প্রকৃতপক্ষে তারা তা বিশ্বাস ও ধারণ করে না। কারণ, তারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এসব নীতির বিরুদ্ধে সব ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে ছিল—গণতন্ত্রকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে।’

তিনি বলেন, ‘‘তারা দুর্নীতির বরপুত্র, একুশে আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিএনপি জনগণকে সেই ‘হাওয়া ভবন’-এর দুঃশাসনের যুগে ফিরিয়ে নিতে চায়। আজ তারা দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের কথা বলছে। অথচ বিএনপির শাসনামলে টানা পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়নের কলঙ্কের কথা জনগণ ভুলে যায়নি।’’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি তাদের তথাকথিত রূপরেখায় ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলেছে। শ্রমিকের ন্যায্য মজুরির কথা বলেছে। কৃষকের অধিকারের কথা বলেছে। এ যেন ভূতের মুখে রামনাম। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক স্বৈরাচার জিয়াউর রহমানই এদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর প্রথম আঘাত হেনেছিল এবং বিএনপির এমপি, মন্ত্রী ও ক্যাডার বাহিনী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারীদের ওপর পাশবিক ও বর্বর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছিল। তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর বারবার আঘাত হেনেছে বিএনপি।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি তাদের শাসনামলে শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে কিছুই করেনি, বরং তাদের হাত শ্রমিকের রক্তে রঞ্জিত। এমনকি পবিত্র রমজান মাসে বেতন-বোনাসের দাবিতে আন্দোলন করায় ১৭ জন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছিল। কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনরত মানুষকে গুলি করে হত্যা এবং সার ও তেলের দাবিতে আন্দোলন করায় কৃষকের বুকে বুলেট বিদ্ধ করেছিল বিএনপি। তাদের অতীত অপকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হয়ে, জাতির সামনে ক্ষমা প্রার্থনা না করে, আজ তারা বিভ্রান্তির রূপরেখা উপস্থাপন করছে। মুখে গণতন্ত্রের কথা বলছে। আসলে গণতন্ত্রের মোড়কে তারা তাদের সেই হিংস্র রাজনীতির পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চায়। গণতান্ত্রিক পন্থায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নত-সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণকর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রধানতম অন্তরায় বিএনপি এবং তার দোসররা।’

বিবৃতিতে বলা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী সবার অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। আজকের বাংলাদেশে কৃষক, শ্রমিক, জনতার ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রান্তিক মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেছে। যে কয়বার শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে, তা আওয়ামী লীগের আমলেই হয়েছে। কৃষি খাতে ব্যাপক প্রণোদনা ও কৃষি গবেষণার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ক্ষুধা ও চরম দারিদ্র্যের অভিঘাত থেকে মুক্তি পেয়েছে জাতি। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন-গৃহহীন অসহায় মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই এবং অর্থনীতির মূলধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামীর উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশে জনকল্যাণের এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’

ছবি: নাসিরুল ইসলাম