ডিসি-এসপি দিলেন অর্থ সহায়তা, শিক্ষাবৃত্তির আশ্বাসও পেয়েছেন সেই নাজমুল

জাহাঙ্গীরনগরসহ তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া কুড়িগ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলামকে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ এবং পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম। বুধবার (১৯ জুলাই) দুপুরে নিজ নিজ কার্যালয়ে তারা নাজমুলের হাতে অর্থ সহায়তা তুলে দেন। এ সময় নাজমুলের বাবা নজরুল ইসলাম সঙ্গে ছিলেন। নাজমুল নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন।

নাজমুলের বাড়ি ভূরুঙ্গামারী উপজেলার তিলাই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম ছাট গোপালপুর গ্রামে। তার বাবা নজরুল ইসলাম পেশায় দর্জি সহকারী। বাবা-মায়ের বড় ছেলে নাজমুল ২০২২ সালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি এ বছর স্নাতক ভর্তি পরীক্ষায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় ৮০তম হয়েছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০৭তম হয়ে ব্যবস্থাপনা বিষয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ৬৬৬তম স্থান অধিকার করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন অপেক্ষমান তালিকায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যত পড়াশোনার খরচ কীভাবে চালাবেন, সেই দুশ্চিন্তা নিয়ে অনিশ্চতায় ভুগছিলেন নাজমুল ও তার পরিবার।

নাজমুল জানান, বাড়িতে থাকা গরু বিক্রি এবং এনজিও থেকে নেওয়া লোনের টাকা দিয়ে ভর্তি প্রস্তুতি ও আবেদন খরচ চালিয়েছেন। তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ মিললেও ভর্তি পরবর্তী খরচ মেটানো নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েন। বাবা স্বল্প আয়ের কর্মজীবী হওয়ায় ভবিষ্যত পড়াশোনার খরচ মেটানো তার পক্ষে সম্ভব নয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার তাকে ডেকে পাঠান। বুধবার তিনি তাদের সঙ্গে দেখা করলে প্রত্যেকে ১৫ হাজার টাকা করে ৩০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দেন। এ ছাড়া ‘এফসি এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ও ‘এগিয়ে যাও কুড়িগ্রাম’ নামে একটি সংগঠন থেকে যোগাযোগ করে শিক্ষাবৃত্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

নাজমুল বলেন, ‘জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার অনেক আন্তরিক। তারা অর্থ সহায়তা দেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। ভর্তির পর বিশ্ববিদ্যালয় হলে আসন পাওয়ার বিষয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার। যে ৩০ হাজার টাকা পেয়েছি, তা দিয়ে ভর্তি খরচ মিটিয়ে বইপত্র কিনবো।’

নাজমুল আরও বলেন, ‘আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেখানে হিসাববিজ্ঞান বিষয় প্রথম পছন্দ দিয়েছি। এ ছাড়া ব্যবস্থাপনা, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং এবং মার্কেটিং বিষয়ও পছন্দের তালিকায় রয়েছে। আগামী ২৪ জুলাই বিষয় নির্ধারণী ফল প্রকাশ হবে। ২৭ জুলাই থেকে ভর্তি শুরু।’

‘এফসি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ও এগিয়ে যাও কুড়িগ্রাম নামে একটি সংগঠন শিক্ষাবৃত্তির আশ্বাস দিয়েছে। ভর্তির পর তারা যোগাযোগ করতে বলেছে। তাদের আশ্বাসে লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। সবার সহযোগিতা ও দোয়া নিয়ে স্বপ্নপূরণ করতে চাই’ বলেন নাজমুল।

নাজমুলের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, ‌‘আমার সীমিত আয়। ডিসি ও এসপি যে সাহায্য করলেন, তাতে অনেক উপকার হয়েছে। ছেলেটার ভর্তি ও অন্য খরচ জোগাড় হয়েছে। এখন বৃত্তির ব্যবস্থা হলে আর চিন্তা থাকবে না।’

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নাজমুলের পড়াশোনার খরচ জোগান দেওয়ার বিষয়ে এগিয়ে যাও কুড়িগ্রাম নামে সংগঠনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা নাজমুলকে সহায়তা করবে। আমার পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা থাকবে।’

পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে নাজমুলকে সামান্য সহায়তা করেছি। আমরা চাই নাজমুলের মতো শিক্ষার্থীরা সুশিক্ষিত হয়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসুক।’