TB free West Bengal: দু’বছরের মধ্যে ‘যক্ষ্মা মুক্ত বাংলা’র জন্য একাধিক সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য দফতরের

গত কয়েক বছরে রাজ্যে টিবি বা যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর। এই পরিস্থিতির  মোকাবেলায় ইতিমধ্যেই বৈঠক করেছে স্বাস্থ্য ভবন। তাতে টিবি রুখতে কী কী করণীয় সে বিষয়ে নির্দেশিকা দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। আর এবার সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী দুবছরের মধ্যে বাংলা থেকে যক্ষ্মাকে নির্মূল করা হবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে ‘যক্ষ্মা মুক্ত বাংলা’ গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। এনিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। 

আগামী ২ বছর সময়ের মধ্যে বাংলার ৭০ শতাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতকে যাতে যক্ষা মুক্ত করা যায় সে বিষয়ে জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। আধিকারিকদের মতে, যক্ষ্মা মুক্ত বাংলা গড়তে গেলে তার জন্য একমাত্র উপায় হল প্রতিটি গ্রামে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। তাই গ্রামে গ্রামে গিয়ে যক্ষ্মা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। লক্ষ্য একটাই ২০২৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মাকে বাংলা থেকে নির্মূল করা। বর্তমানে পঞ্চায়েত নির্বাচন মিটে গিয়েছে এবার নতুন বোর্ড গঠনের পালা। তাই এখন থেকে এ বিষয়টি নিয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে স্বাস্থ্য এবং পঞ্চায়েত দফতর। এই রোগকে পঞ্চায়েত উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে রেখেছে কেন্দ্র সরকার। তবে পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন না হওয়া পর্যন্ত এই রোগ নিয়ে প্রচার সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা। তাদের মতে, যক্ষ্মা মুক্ত করার জন্য প্রচার করতে হবে পঞ্চায়েতের প্রশাসনিক স্তরে। এখন যেহেতু পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন হয়নি। তাই এখনই প্রচার করা সম্ভব হবে না। বোর্ড গঠন করার পরেই এ নিয়ে জোর কদমে প্রচার চালানো হবে। 

আরও পড়ুন: যক্ষ্মার হাত থেকে কীভাবে বাঁচবেন? রইল প্রতিরোধের উপায়

ইতিমধ্যেই, স্বাস্থ্য দফতরের তরফে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে তাতে জানানো হয়েছে, কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর পঞ্চায়েত গুলি নিজেরাই ‘আমরা টিভি মুক্ত’ বলে দাবি করবে। তবে সেই দাবি আদৌ সত্যি কিনা  পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে এবং জেলা পরিষদ স্তরে খতিয়ে দেখা হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতকে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর যক্ষ্মা মুক্তের তকমা দেবে। তবে যক্ষ্মামুক্ত দাবি করার মাপকাটিও নির্ধারণ করে দিয়েছে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্যের অধিকর্তা শুভাঞ্জন দাস। তিনি জানান, প্রতিবছরের হাজার পিছু ৫০ জন যক্ষ্মা রোগীর পরীক্ষা করতে হবে। তার মধ্যে যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা দুইজনের কম হলেই সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতকে যক্ষ্মা মুক্ত বলে ঘোষণা করা হবে। তাছাড়া রোগীদের সম্পূর্ণ চিকিৎসা করাতে হবে এবং স্ক্রিনিং করাতে হবে। 

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কলকাতায় টিবি আক্রান্তের সংখ্যা ১২, ৮২৯ জন। এছাড়া, মৃত্যু হয়েছে ২৭২ জনের। কলকাতার পরেই রয়েছে মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনা স্থান। এই দুই জেলাতেও টিবি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। এই পরিস্থিতিতে কলকাতায় টিবি আক্রান্তের সংখ্যা কমানোর উপরে জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সম্প্রতি স্বাস্থ্য ভবনের তরফে কলকাতা পুরসভার কাছে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে কলকাতা ১০ টি জোনে ভাগ করতে হবে। তারপর প্রতিটি জোনে নজরদারি চালাতে হবে। বাড়ি বাড়ি স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠিয়ে মানুষকে টিবি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। কী কারণে টিভি হতে পারে? টিবি আক্রান্ত হলে কী করা উচিত? এবিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের মতে, টিবি আক্রান্ত হলে প্রথমে অনেকেই তাতে বেশি গুরুত্ব দিতে চান না। ফলে পরবর্তী সময়ে এটি আরও বাড়তে থাকে। তাই টিভি আক্রান্তের সংখ্যা খুঁজে বের করাটা খুবই প্রয়োজন।

স্বাস্থ দফতরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, ২০১৮ সালে যেখানে কলকাতায় টিবি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৮৪০ জন, সেখানে ২০২২ সালে প্রায় তিনগুণ বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। তা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, রোগের উৎস চিহ্নিত করা গেলে সে ক্ষেত্রে রোগের মোকাবিলা করা সহজ হবে। স্বাস্থ্য আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, মূলত অপুষ্টি, ধূমপান, কলকারখানায় কাজ এসবের জন্য টিবি বেশি হয়ে থাকে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। তবেই টিবির বিরুদ্ধে মোকাবেলা করা যাবে।