‘মনে হয় আমাকে দিয়ে কখনও কিছু হবে না’

প্রশ্ন: আমার বয়স ২১ বছর। পড়াশোনায় একদম মন বসাতে পারি না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারিনি। অনেক ইচ্ছে ছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। প্রাইভেটে পড়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই। তাই বাধ্য হয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালএয় ভর্তি হতে হয়েছে। এরপর থেকেই খুব আপসেট লাগে। মনে হয় আমাকে দিয়ে কখনও কিছু হবে না। এভাবে চলতে থাকলে পড়াশোনায় ভালো ফলও করতে পারবো না।

উত্তর: এরকম হতাশাবব্যাঞ্জক পরিস্থিতিতে জীবনে সবাইকেই কমবেশী পড়তে হয়। আপনাকে মনে রাখতে হবে, আপনার চাইতে ভালো অবস্থানে যেমন অনেকে আছে, আপনার চাইতে খারাপ পরিস্থতিতেও আছে অনেকে। আপনি অনেকের চাইতেই এখনও অনেক ভাগ্যবান! এই শুকরিয়া আপনার মনের কষ্টকে লাঘব করবে এবং আপনার মধ্যে কর্মোদ্দীপনা তৈরি করবে। এই মুহূর্তে যে কঠোর বাস্তবতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন, তা আপনাকে সহনশীল এবং সাহসী যোদ্ধায় পরিণত করছে। নিজের নেতিবাচক আবেগ অনুভূতির সাথে যুদ্ধ বন্ধ করে একে আপনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মেনে নিতে হবে। এর সমালোচনা করা যাবে না বা এর জন্য নিজেকে তিরস্কার করা বা দায়ী মনে করা যাবে না। তবে হতাশা যদি আপনার মোকাবিলা ক্ষমতার বাইরে হয়, এর জন্য যদি আপনার পেশাগত জীবন ব্যহত হয় বা, আপনার ভেতরে আত্মহত্যার চিন্তা বা প্রবণতা তৈরি হয়, তবে দ্রুত কোন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। হতাশা বা ডিপ্রেশন মোকাবিলায় নিচের পরামর্শগুলো আপনাকে সাহায্য করবে-

১। আপনার মনের চাপ ও হতাশার কারণ চিন্তা করুন। এটি সমাধানের প্রথম ধাপ।

২। পরিবার, বন্ধু, জন্মাণ্ডল বা পেশাদার সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করুন। এই সমর্থন আপনাকে হতাশা মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

৩। যদি আপনি মনে করেন যে আপনার হতাশা দীর্ঘমেয়াদী এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তাহলে একজন মানসিক চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করার চিন্তা করুন।

৪। ধারণাগুলো পরিবর্তন করুন: নেগেটিভ চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে পজিটিভ এবং কন্ট্রোলাবল চিন্তা চর্চা করুন।

৫। নিয়মিত ব্যায়াম, সুস্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।

৬।  ধ্যান, প্রাণায়াম, সংগীত শুনুন বা কার্যক্রম চর্চা করুন যা আপনাকে শান্তি ও স্বাস্থ্যকর মনোভাব দেবে।

৭। শ্বাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। শ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। তারপর মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে শ্বাস ধরে রাখুন। সবশেষে মনে মনে ১-২-৩-৪-৫-৬ গুনতে গুনতে পেট ভিতর দিকে টেনে নাক দিয়েই ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। যখনই মনে হবে তখন একটানা কয়েবার এরকম করুন।

সবশেষে, এটি স্মারণ করুন যে হতাশা স্বাভাবিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যর অংশ। যথাসাধ্য সাহায্য খুঁজে নিন এবং পরামর্শের জন্য একজন পেশাদারের সাথে যোগাযোগ করার চিন্তা করুন।

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩২ বছর। অন্য ধর্মের একটা ছেলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল। প্রায় ৫ বছরের সম্পর্ক। সে আমাকে অপেক্ষা করতে বলছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে হঠাৎ সে বিয়ে করে ফেলে এবং বলে তাকে ভুলে যেতে। কারণ হিসেবে বলে তার পরিবার অন্য ধর্মের মেয়েকে মেনে নেবে না। আমি প্রচণ্ড ভেঙে পড়েছি। আত্মহত্যার চিন্তা আসছে। কীভাবে মানসিক অবস্থা ঠিক করবো?

উত্তর: ঘনিষ্ঠজনের সাথে চিরবিচ্ছেদ তীব্র বেদনাদায়ক একটি অভিজ্ঞতা। তবে এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো যা আপনার মানসিক অবস্থাকে দ্রুত স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসবে। প্রথমত, ঘনিষ্ঠজনের সাথে চিরবিচ্ছেদের মনেদৈহিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানুন। আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের জীবনে সবসময় প্রিয়জনদের উপস্থিতি প্রত্যাশা করে। তাদের অনুপস্থিতিজনিত শূন্যতা পূরণ হতে সাধারণত ২ বছর সময় লাগে। আরও আগেও তা পূরণ হতে পারে যদি কারোর মনেবল বেশি হয়। আপনার মনেবল বেশি বলেই আপনি বিষয়টি শেয়ার করেছেন। দ্বিতীয়ত, সামাজিক যোগাযোগ বাড়াতে চেষ্টা করুন। পুরনো সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আপনি খুবই একাকী বোধ করতে পারেন, যদিও এই অনুভূতি দীর্ঘস্থায়ী নয়। আপনি আপনার পরিবার, বন্ধু এবং প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটাতে চেষ্টা করুন। আপনার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য সমাজে পুনরায় সম্পৃক্ত হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি শক্তিশালী প্রণোদনা প্রদানকারী হতে পারে। তৃতীয়ত, আপনার স্বাস্থ্যের প্রতি অধিকতর মনোযোগ দিন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, যথেষ্ট ঘুম এবং নিয়মিত ব্যায়াম আপনার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যে সাহায্য করবে। চতুর্থত, স্ট্রেস মোকাবিলা করুন। স্ট্রেস হ্রাস করার জন্য ধ্যান, শ্বাস নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম বা অন্যান্য শারীরিক ক্রিয়াকলাপ অনুশীলন করুন। পঞ্চমত, কাউন্সিলিং এবং থেরাপি গ্রহণ করুন। একজন পেশাদার মানসিক চিকিৎসক বা সামাজিক কর্মী আপনাকে এই ট্রানজিশনাল সময় ধরে সাহায্য করতে পারে। তারা আপনাকে আপনার অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে এবং নতুন জীবনের জন্য তৈরি হতে সাহায্য করতে পারে।