সংসদ না ভাঙলে ১ নভেম্বরের আগে তফসিল ঘোষণার সুযোগ নেই

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের এক বক্তব্য নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিইসি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘সংসদ ভেঙে দিয়ে ভোট হলে সেটা সংসদ ভেঙে যাওয়ার তারিখ সাপেক্ষে সিইসির ঘোষিত সেপ্টেম্বর কিংবা তার আগেও তফসিল হতে পারে। তবে সংসদের মেয়াদ বহাল রেখে ভোট হলে মেয়াদ শেষের পূর্ববর্তী ৯০ দিনের আগে তফসিল ঘোষণার কোনও আইনি সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে ৯০ দিনের কাউন্টডাউন শুরু হলেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় শুরু হবে।’

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বেসরকারি টেলিভিশনে সিইসি সাক্ষাৎকারে দেখা গেছে সাংবাদিক সিইসিকে প্রশ্ন করেছেন,  ‘আপনারা রোড ম্যাপ এ ঘোষণা করেছেন এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ কিংবা আগামী বছর জানুয়ারির প্রথম দিকেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের সংবিধানও সেটা বলে।’ সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের তফসিল কবে কোনও মাসে ঘোষণা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমার যতদূর মনে পড়ে এটা ৯০ দিন আগে তো করতে হবে। সেপ্টেম্বরের আগে  হওয়ার কথা নয়। আমরা এখনও স্থির করিনি। তবে অনুমান করে বলতে পারি সেপ্টেম্বরের কোনও এক সময়। আমরা শেষের দিকে বা মাঝামাঝির দিকে আমরা তফসিল ঘোষণা করবো।

পরে অবশ্য একাধিক গণমাধ্যম থেকে সিইসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অন্যভাবে ব্যাখ্যা দেন। বলেন, তার বক্তব্যটি ছিল অনুমান নির্ভর। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল নিয়ে তারা এখনও কমিশনে আলোচনা করেননি।

তিনি আরও বলেন, সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। আগামী বছরের জানুয়ারির শেষ (২৯ জানুয়ারি) দিক থেকে আগের ৯০ দিন। নির্বাচনের তফসিল ৫০, ৬০ অথবা ৭০ দিন আগে দিতে হবে। সিইসি বলেন, কবে তফসিল ঘোষণা করতে হবে তা আইনে উল্লেখ নেই। সেটা ৫০ থেকে ৬০ দিন আগে হতে পারে, অক্টোবরের শেষেও হতে পারে।

টেলিভিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তফসিল ঘোষণা সময়কালের বিষয়টি কথার কথা হিসেবে এসেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সিইসির এই বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনি ব্যাখ্যা জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে যাওয়া এবং সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার প্রেক্ষাপটে ৯০ দিন পরে বা ৯০ দিন আগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান সংসদের ক্ষেত্রে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার সাপেক্ষে ভোট হবে নাকি সংসদ ভেঙে ভোট হবে সরকারের তরফ থেকে এমন কোনও ঘোষণা হয়েছে বলে শুনিনি। সে ক্ষেত্রে সিইসি কোন কারণে সেপ্টেম্বরের তফসিলের কথা বলেছেন সেটি স্পষ্ট নয়। এটা উনি কোন কারণে বলেছেন তার ব্যাখ্যা তিনি নিজেই ভালো দিতে পারবেন।

এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সংসদ ভেঙে ভোট হলে সেপ্টেম্বরে তফসিল ঘোষণা হতেই পারে। তবে সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার সাপেক্ষে নির্বাচন হলে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের আগে তফশিল ঘোষণার কোন আইনি সুযোগ নেই।

নির্বাচনী তফসিল নির্বাচনের অংশ সাবেক এই কমিশনার বলেন, সংসদের মেয়াদ বহাল রেখে ভোট হলে ৯০ দিনের আগে ভোট করা যেমন সম্ভব নয় তেমনি তফসিল ঘোষণার সুযোগ নেই। 

এ প্রসঙ্গে সদ্য শেষ হওয়া পাঁচ সিটি নির্বাচনের তফসিলের ঘটনা তুলে ধরে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা সাবেক এই আমলা বলেন, বর্তমান কমিশনকে দেখেছি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপযোগী হওয়ার আগেই গণমাধ্যমকে তফসিল জানিয়েছে। সেভাবে চাইলে হয়তো তারা সংসদ নির্বাচনের তফসিল সেপ্টেম্বরে জানিয়ে দিতে পারেন, এমন কি চাইলে এখনও জানিয়ে দিতে পারেন। তবে ৯০ দিনের পূর্বে তারা ওই তফসিলের প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারবেন না। আর প্রজ্ঞাপন জারি না হলে সেটাকে আমরা আনুষ্ঠানিক তফসিল বলতে পারি না।

প্রসঙ্গত চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ প্রথম বৈঠক থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। এই হিসেবে চলতি সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছর ২৯ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সংসদ বহাল রেখে আগামী নির্বাচন হলে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোট করতে হবে। এ হিসেবে নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হবে আগামী এক নভেম্বর। ফলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে এক নভেম্বর বা তারপরে যে কোনও তারিখে।