কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে বিএনপি?

সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে বিএনপি এবং দলটির সঙ্গে যুগপতে যুক্ত বিরোধী দলগুলো। শুক্রবার (২৮ জুলাই) রাজধানীতে অনুষ্ঠিত মহসমাবেশে দলগুলোর সিনিয়র নেতারা এই ইঙ্গিত দিয়েছেন। যে কারণে আশুরার ছুটি থাকলেও শনিবার (২৯ জুলাই) ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এর আগে সমাবেশে সমাগত নেতাকর্মীদেরও ঢাকাত্যাগ না করার পরামর্শও দিয়েছেন নেতারা। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার মধ্যরাতে ডিএমপি থেকে রাজধানীতে সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিএনপির কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই আওতায় পড়েছে অবস্থান কর্মসূচি ডাকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও।

যদিও ডিএমপির নিষেধাজ্ঞার খবরে বিএনপি ও বিরোধীদলীয় নেতারা বিষয়টিকে ‘আন্দোলনের স্বাভাবিক অবস্থা’ হিসেবেই মূল্যায়ন করছেন। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে কর্মসূচি নিয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা জানতে অপেক্ষা করছেন যুগপতে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষনেতারা।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্র বলছে, বিএনপির কর্মসূচি থেকে পিছু হটার কোনও সুযোগ নেই। আন্দোলন এখন চূড়ায়, সে ক্ষেত্রে শনিবার থেকেই রাজপথে থাকা নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি। এ ক্ষেত্রে গ্রেফতার-আটকের প্রস্তুতিও এরই মধ্যে হয়েছে বলে জানান কোনও কোনও প্রভাবশালী নেতা।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুক্রবারের মিটিংয়ে নিঃসন্দেহে প্রমাণ হয়েছে– এই সরকারকে জনগণ “না” করে দিয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এই ধরনের ফ্যাসিস্ট সরকারকে আমলে না নিলে আরও অত্যাচারী হয়ে ওঠে। যেটি অতীতে দেখেছি। পাকিস্তান আমলে দেখেছি। কিন্তু এগুলো করার পরে যখন মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে, সেই মানুষকে ফেরানো যায়নি। কোনও আন্দোলনই ব্যর্থ হয় না।’

শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে শনিবার (২৯ জুলাই) ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়নি’ বলে জানায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বার্তায় ডিএমপির কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছ থেকে শনিবারের অবস্থান কর্মসূচি পালনের জন্য কোনও অনুমতি গ্রহণ করেনি।’

শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ডিএমপির নির্দেশনা জারির পরই তারা উচ্চপর্যায়ে আলোচনা শুরু করেছেন। যদিও ডিএমপির নিষেধাজ্ঞার খবরে যুগপতে যুক্ত নেতারা একটু চমকে গেছেন। ডিএমপির নির্দেশনা ভঙ্গ করে তারা স্ব-স্ব নির্ধারিত স্থানে অবস্থান নেবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন। এ ক্ষেত্রে সংঘাত অনিবার্য, এমন পরিস্থিতির শঙ্কা করছেন তারা।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম এক নেতার ভাষ্য, ‘জমায়েতের পর্ব শেষ। কোনও নিষেধাজ্ঞা আন্দোলনের এই পর্ব ব্রেক করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে সংঘাত হতে পারে।’

আরেক নেতার মন্তব্য, ‘প্রোগ্রাম স্থগিতের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপি ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেবে।’

 

বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতা বলেন, ‘আজকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় থেকে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাজপথেই সিদ্ধান্ত হবে। তারেক রহমানের বক্তব্যে মেসেজ পরিষ্কার।’

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি জানি না বিএনপি কী করবে। কর্মসূচি নিয়ে তো আলোচনা হয়নি। ফলে, ডিএমপি নিষেধাজ্ঞা দিলে কী হবে, সেটি তারা ঠিক করবেন।’

শুক্রবার মহাসমাবেশে বিএনপির সিনিয়র নেতারা তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ‘এখন থেকে প্রোগ্রাম বাস্তবায়নে পুলিশের অনুমতি নেওয়া হবে না’ এবং ‘নেতাকর্মীদের আর গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না।’

শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত, বিএনপির পক্ষ থেকে যুগপতে যুক্ত কোনও দলকেই জানানো হয়নি, ডিএমপির নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে কী করা হবে।

কোনও-কোনও নেতা মনে করছেন, ‘বিএনপি প্রোগ্রাম ডিক্লেয়ার করেছে, প্রোগ্রামে অংশ নেবে, তবে সেটা যেন শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে হয়, সেটার ওপর গুরুত্ব দেবে। সে ক্ষেত্রে শনিবার সময়মতো প্রোগ্রামে যোগ দেবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।’

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম একজন সম্পাদক রাত সোয়া ১টার দিকে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’