ব্রিকস-এর সম্প্রসারণ চায় চীন, বিরোধিতায় ভারত-ব্রাজিল

উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো দ্রুত ব্রিকসের সম্প্রসারণের তাগিদ দিচ্ছে চীন। কিন্তু তাদের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে ভারত ও ব্রাজিল। বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞাত সূত্রের বরাতে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এ খবর জানিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, উদীয়মান বাজারগুলোতে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার ও যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলার জন্য এমন পদক্ষেপের পথে হাঁটছে বেইজিং।

আগামী মাসে জোহানেসবার্গে ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি আরবকে ব্রিকসে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা করবে এই সংস্থার সদস্য দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে ভারত ও ব্রাজিলের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগে আপত্তি তলে ধরা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেছেন, কিন্তু চীন নতুন সদস্য নেওয়ার বিষয়ে লবিং শুরু করেছে।

এক প্রতিক্রিয়ায় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্লুমবার্গকে বলেছে, গত বছর ব্রিকস নেতাদের বৈঠকে, সদস্যপদ গ্রহণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সদস্যপদ গ্রহণ করা ব্রিকসের রাজনৈতিক ঐকমত্য।

আরও ডজন খানেক দেশ ব্রিকসের সদস্য হতে চায়। এর ফলে ব্রিকস ওয়াশিংটন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন-বিরোধী একটি সংস্থায় পরিণত হতে পারে। এই উদ্বেগ থেকে আপত্তি জানাচ্ছে ব্রাজিল।

ভারত চায় নতুন সদস্য নেওয়ার ক্ষেত্রে স্পষ্ট বিধিমালা জারি হোক। যার মাধ্যমে সহজেই অন্য দেশ ও সংস্থার কাছাকাছি আসতে পারে এবং প্রয়োজনে সদস্য করে নেওয়া যাবে। ব্রিকসের যেকোনও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সব সদস্য দেশের সম্মতি প্রয়োজন হয়। এই ঐকমত্যের জন্যই ২২-২৪ অগাস্টে মিলিত হবেন তারা।

কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারত এবং ব্রাজিল পর্যবেক্ষক দেশগুলোকে আনার বিষয়ে আলোচনা করতে চায়।

এই সম্মেলনের লক্ষ্য, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা। যা কিছু আছে তা প্রদর্শন করা। ব্রিকস একটি সাধারণ মুদ্রা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা করেছিল। যদিও সেই লক্ষ্যের দিকে তেমনভাবে অগ্রসর হয়নি ব্রিকস।

ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। দক্ষিণ আফ্রিকা যাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা দিয়ে আটকাতে না পারে সেকারণে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন পুতিন।

রাশিয়া পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতি কাউন্সিলের প্রধান ফিওদর লুকিয়ানভ বলেছেন, রাশিয়া ব্রিকস সম্প্রসারণের বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান রাখে না। তিনি আরও বলেন, আমরা ব্রিকস সম্প্রসারণের পক্ষে। আমরা কোনও সিদ্ধান্তে বাধা দেব না।

সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবের জন্য ২০০৯-২০১০ সালে গঠিত হয়েছিল ব্রিকস। আর বর্তমানে ব্রিকস সদস্যরা বিশ্বের জনসংখ্যার ৪২ শতাংশেরও বেশি। বিশ্বব্যাপী মোট দেশজ উৎপাদনের ২৩ শতাংশ ও মোট বাণিজ্যের ১৮ শতাংশ তারাই করছে।

ভারতীয় এক কর্মকর্তার মতে, সৌদি আরবের পরিবর্তে উদীয়মান অর্থনীতির পাশাপাশি আর্জেন্টিনা এবং নাইজেরিয়ার মতো গণতন্ত্রের দিকে নজর দেওয়া উচিত ব্রিকসের।

ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত মাসে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারপর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। এদিকে সৌদি আরবের সরকারও সাড়া দেয়নি।

ব্রাজিলের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ব্রিকসের মতভেদ এড়াতে, জি-৭ কে চ্যালেঞ্জ জানাতে ও  চীনের চাপ প্রতিরোধ করতে পারে এমন একটি সংস্থার জন্য নীরবে কাজ করছে ব্রাজিল।

ব্রাজিলের কর্মকর্তা বলেন, ব্রাজিল ইন্দোনেশিয়াকে সহায়তা করবে। ব্রাজিল একটি প্রস্তাব দিয়েছে, পর্যবেক্ষক ও সহযোগী দেশের তালিকা তৈরি করতে হবে।

/এসএইচএম/