মণিপুর ইস্যুতে অচল চলতি বাদল অধিবেশন। প্রথম দিন থেকেই সংসদের উভয় কক্ষে ধারাবাহিক ভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন বিরোধী সাংসদরা। পরিস্থিতি এমনই, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা সংসদে আসবেন না বলেই জানিয়ে দিয়েছেন। আর এরই মাঝে এবার বিরোধীদের দাবি, এগিয়ে নিয়ে আসা হোক অনাস্থা প্রস্তাবের আলোচনার দিনক্ষণ। উল্লেখ্য, এর আগে জানানো হয়েছিল, আগামী ৮ থেকে ১০ অগস্ট পর্যন্ত অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হবে সংসদে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১০ তারিখ এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সংসদে বক্তব্য রাখবেন। উল্লেখ্য, আগামী ১১ অগস্ট বাদল অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা।
এদিকে মণিপুর ইস্যুতে মোদী যতক্ষণ না সংসদে বক্তব্য রাখবেন, ততদিন বিরোধীরা তাদের আন্দোলন বিক্ষোভ জারি রাখবেন বলে জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সংসদ যাতে স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরতে পারে, তার জন্য অনাস্থা প্রস্তাব এগিয়ে আনার দাবি ইন্ডিয়া জোটের। এই নিয়ে বিরোধীরা লোকসভার স্পিকারকে একটি চিঠি লিখেছেন বলেও জানা গিয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, এই হট্টগোলের মাঝেই সরকার পরপর বিল পাশ করিয়ে নিচ্ছে বিনা আলোচনায়। বিরোধীদের দাবি, তারা এই সব আলোচনায় অংশ নিতে চান।
প্রসঙ্গত, অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে সরকারের সংখ্য়াগরিষ্ঠতাকে চ্যালেঞ্জ করে বিরোধীপক্ষ। এটি একটি সংসদীয় প্রক্রিয়া। বিরোধীরা এই প্রস্তাবের ডাক দিয়ে যাচাই করে নিতে চায় যে, সরকার মসনদে থাকার যোগ্য কি না। সংসদীয় বিধি বলছে, সংসদের যেকোনও সদস্যই এই অনাস্থা প্রস্তাবের ডাক দিতে পারেন। আর তাঁর সেই প্রস্তাবকে সমর্থন জানাতে হবে অন্তত ৫০ জন সাংসদকে।
দেশে দেশে মোট ২৭ টি অনাস্থা প্রস্তাব লোকসভায় ডাকা হয়েছে এর আগে পর্যন্ত। দেশের প্রথম অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল ১৯৬৩ সালে। তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ১৫ বার অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল সংসদে। এছাড়া লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর সরকার ৩ বার ও নরসিংহ রাওয়ের সরকার ৩ বার অনাস্থা প্রস্তাব মুখোমুখি হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে ১ ভোটে অনাস্থা প্রস্তাব হেরেছিল তৎকালীন অটল বিহারী বাপেয়ীর সরকার। এরপর ২০০৩ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন সোনিয়া গান্ধী। এছাড়া ২০১৮ সালে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধেও আনা হয়েছে অনাস্থা প্রস্তাব।
এদিকে বিরোধীদের তরফে থেকে অনাস্থা প্রস্তাবে সই ছিল শুধুমাত্র কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈয়ের। যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এদিকে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হলেও তাতে যে মোদী সরকারের অবস্থা টলমল নয়, তা জানা আছে বিরোধীদেরও। তবে সংসদে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ চেহারা তুলে ধরতেই এই রাজনৈতিক চাল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তবে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ‘তাড়াহুড়ো’ করতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কিঞ্চিত বিভেদ সৃষ্টি হয়েছিল কংগ্রেসের। অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে প্রথম যেদিন আলোচনা হয়, সেদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও ‘ব্রায়েন। সেদিন ডেরেক অনাস্থা প্রস্তাব ইস্যুতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময় চান। পরে দলের সম্মতি মেলে। তবে এরপর আর আনুষ্ঠানিক কোনও বৈঠক ছাড়াই গৌরবের মাধ্যমে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করানো হয় সংসদে। যা নিয়ে মন কষাকষি শুরু হয়েছিল দুই দলের মধ্যে। তবে শেষ পর্যন্ত আর সেই বিভেদ বেশি বাড়তে দেওয়া হয়নি।