বাস্তবের পান্না কায়সারকে হারিয়ে স্তব্ধ পর্দার পান্না কায়সার

অনেকেই জানেন না, যে (পান্না কায়সার) মানুষটি অদ্য (৪ আগস্ট) সকালে (সোয়া ১১টা) মারা গেছেন; গত দুই মাস ধরে তাকেই হৃদয়ে লালন করে আসছিলেন নায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম। আরও কাকতালীয় ঘটনা, আজ অথবা কাল তার সঙ্গে প্রথমবার দেখা হওয়ার কথা ছিল। দেখা তো হলোই না, বরং শেষ বিদায়ের খবরটা পেলেন ঘুম ভাঙতেই। 

বলা দরকার, দুই মাস ধরে মিম কাজ করছিলেন তার নতুন সিনেমা ‘দিগন্তে ফুলের আগুন’-এ। প্রস্তুতি ও রিহার্সাল পর্ব শেষে সম্প্রতি শুরু হলো এর শুটিং। শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সার ও অধ্যাপক পান্না কায়সার দম্পতির যোগ্য উত্তরসূরি শমী কায়সারের প্রযোজনায় সরকারি অনুদানের এই ছবিটি নির্মাণ করছেন ওয়াহিদ তারেক। 

ছবিটি নির্মিত হচ্ছে এই দম্পতিকে ঘিরে। যাতে পান্না কায়সার চরিত্রে অভিনয় করছেন বিদ্যা সিনহা মিম। আর শহীদুল্লাহ কায়সার চরিত্রে মোস্তফা মনওয়ার। মূলত চলমান এই শুটিংয়ের ফাঁকে গতকালই (৩ আগস্ট) শমী কায়সার মিমকে জানালেন, তার মায়ের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার বিষয়ে। এমনকি সেটা এই শুক্রবারেই (আজই) হওয়ার কথা ছিল।     

পান্না কায়সারের মৃত্যুর খবর পেয়ে মিম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘বিধাতার কি এক অদ্ভুত সমীকরণ। আমরা ভাবী এক, কিন্তু তাঁর পরিকল্পনা আরেক—যা সাধারণের বোঝা বড় দায়। ‘দিগন্তে ফুলের আগুন’ সিনেমার শুটিং করছি। এই সিনেমায় আমি পান্না কায়সারের চরিত্রে অভিনয় করছি। গতকাল (৩ আগস্ট) শমী আপু (শমী কায়সার) বললেন, তোমাদের তো শুক্র ও শনিবার শুটিং নেই। তাহলে রেডি থেকো। তোমাদের আম্মার সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যাবো।’’

মিম জানান, গতকাল (৩ আগস্ট) থেকেই তিনি খুব এক্সাইটেড ছিলেন পান্না কায়সারের সঙ্গে দেখা করবেন বলে। কারণ, গত দুই মাস ধরে তিনি পান্না কায়সারের জীবনের নানান গল্প শুনে নিজেকে গড়ে তুলছিলেন সেই চরিত্রে। ফলে চরিত্রের লোকটিকে বাস্তবে দেখতে পাওয়া যেকোনও শিল্পীর জন্য লোভনীয় বিষয়। মিম বলেন, ‘গতকাল শমী আপুর কথা শুনে আমি ভীষণ এক্সাইটেড হই। একজন মহীয়সী নারীর সঙ্গে দেখা করবো। গেলো দুই মাস ধরে যাকে বই পড়ে, টেলিভিশনের বিভিন্ন ইন্টারভিউ থেকে জানার চেষ্টা করেছি, সেই মানুষটার সঙ্গে মুখোমুখি বসে গল্প করবো। নানান অভিজ্ঞতা শুনবো। আড্ডা দেবো। জীবনের অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা হবে আমার। অসাধারণ মুহূর্তের সাক্ষী হবো। আরও কত কি যে ভাবনা মনের মধ্যে। চাইলেই কি আর সব পূরণ হয়। রাত শেষে সকালবেলা এমন একটা খবর অপেক্ষা করছে ভাবিনি। ঘুম থেকে ওঠেই শুনি পান্না কায়সার আন্টি চিরদিনের জন্য আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর খবরে থমকে গেলাম। স্তব্ধ হলাম।’ 

‘গেলো কিছু দিন ধরে মনের মধ্যে লালন করা মহীয়সী পান্না কায়সারকে হারিয়ে মনে হচ্ছে, আমারই একজন আপনজন হারালাম। সৃষ্টিকর্তার কাছে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি’—বাস্তবের পান্না কায়সার সম্পর্কে যোগ করেন পর্দার পান্না কায়সার।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অনুদানপ্রাপ্ত ছবি ‘দিগন্তে ফুলের আগুন’। ছবিটির মাধ্যমে পান্না কায়সারের দৃষ্টিকোণ থেকে শহীদুল্লাহ কায়সারকে আবিষ্কার করা হবে। ১ আগস্ট ঢাকার ইস্কাটনের একটি বাড়িতে শুরু হয়েছে এই ছবির শুটিং।

শহীদজায়া পান্না কায়সারের জীবনাবসান