বেহালার রণক্ষেত্রের ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত?‌ নির্দেশিকা জারি করে খুঁজছে পুলিশ

পথ দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যুর সাক্ষী থেকেছে বেহালা। বেপরোয়া লরির ধাক্কায় মৃত্যু হয় বেহালার বড়িশা হাইস্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া সৌরনীলের। পথ দুর্ঘটনার পর রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল বেহালা। উত্তেজিত জনতা সৌরনীলের দেহ রাস্তায় আগলে রেখে বিক্ষোভ দেখিয়ে ছিলেন। পুলিশের ভ্যানে আগুন লাগিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ ডায়মন্ড হারবার রোডের ট্রাফিক গার্ডের উপর পড়ে। তার জেরে সেখানকার সিসিটিভি মনিটর, কম্পিউটার এবং সার্ভার ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনার পিছনে কারা আছে এবং কেন আছে?‌ সেটা খুঁজছে পুলিশ। এই ঘটনার পর এবার বেহালা চৌরাস্তায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে ম্যানুয়াল ড্রপ গেট। বড়িশা হাইস্কুলের সামনেও বসানো হয়েছে ম্যানুয়াল ড্রপ গেট।

এদিকে এই ঘটনার পর লালবাজার নির্দেশ দিয়েছে, এবার থেকে সকাল ৬টার পর কলকাতায় ঢুকবে না কোনও ট্রাক। আজ শনিবার থেকেই চালু হয়ে গিয়েছে এই নিয়ম। আর সমস্ত ট্রাফিক গার্ডকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি এবং বেসরকারি, কলকাতার সমস্ত স্কুলের বাইরে থাকতে হবে ওসি বা অ্যাডিশনাল ওসি পদমর্যাদার একজন অফিসারকে। সমস্ত স্কুলের বাইরে যান নিয়ন্ত্রণ সামলাবে পুলিশ। আর এবার থেকে কোথাও কোনও পথ দুর্ঘটনা ঘটলে সবার প্রথমে আগে দেহ সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সম্প্রতি এখানে নাকা চেকিং হয়েছিল। তাতে প্রচুর জরিমানা করা হয়েছিল। ফলে একটা রাগ ছিলই। তারপর এমন ঘটনা ঘটায় পুলিশের উপর প্রতিশোধ নিয়েছেন তাঁরা বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে এই ঘটনার নেপথ্যে আরও একটি বিষয় উঠে এসেছে। সেটি হল—চৌরাস্তা থেকে অটো স্ট্যান্ড সরানো হয়। তাতে ট্রাফিক পুলিশের উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন অটো চালকরা। তাঁরাই এই ঘটনার পর ইন্ধন জুগিয়েছে জনতাকে। ফলে এমন রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল বলে মনে করছে পুলিশ। তাই লালবাজারের সমস্ত ডিভিশন লোকাল থানাগুলিতে নির্দেশিকা পাঠিয়ে দিয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, থানায় যেন সবসময় ওসি কিংবা অতিরিক্ত ওসিকে পাওয়া যায়। কলকাতা পুলিশের প্রত্যেকটি ইউনিটে মোট ফোর্সের ২৫ শতাংশ থাকা বাধ্যতামূলক। আইশৃঙ্খলার পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত কমিশনার, ওসি এবং কন্ট্রোল রুম ফোর্স মোতায়েন করবে। মোতায়েন করতে হবে পর্যাপ্ত মহিলা পুলিশবাহিনী। ডিসি–সহ উচ্চপদস্থ অফিসাররা সবটা নজরদারি করবেন।

আরও পড়ুন:‌ বাংলার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীরা স্বেচ্ছা মৃত্যুর আবেদন করলেন, রাষ্ট্রপতিকে ইমেল

আর কী করা হচ্ছে?‌ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজছে পুলিশ। তাই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করার কাজ করছে পুলিশ বলে সূত্রের খবর। এখন দেখা যাচ্ছে একাধিক জায়গায় বসানো হয়েছে মুভেবল ড্রপগেট। আজ বেহালা চৌরাস্তার মোড়ে পুলিশি তৎপরতা বেড়েছে। সকলে জেব্রা ক্রসিং ধরে রাস্তা পারাপার করছেন। বাস বা অটোয় ওঠার জন্য নির্ধারিত জায়গায় দাঁড়াচ্ছেন যাত্রীরা। রাস্তায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণে করছে পুলিশ। অন ডিউটি রয়েছেন দু’‌জন ট্রাফিক সার্জেন্ট। তিনজন ট্রাফিক পুলিশকর্মী এবং আটজন হোমগার্ড। মোট পাঁচটি ম্যানুয়াল ড্রপগেট আনা হয়েছে এলাকায়। বেহালা চৌরাস্তা এলাকায় দুটি, বেহালা ট্রাম ডিপোয় একটি এবং রাস্তার ভিড় খতিয়ে দেখে আরও দুটি ড্রপ গেট বসবে।