মেডিক্যাল ডিভাইস আমদানি ও বিক্রয়মূল্যে বিস্তর ফারাক: ভোক্তার ডিজি

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে আমাদের দেশে ডিভাইসগুলোর বিক্রয়মূল্য অনেক বেশি দেখা হয়। আবার দেখা যায়, একই এইচএস কোডে আমদানিকৃত মেডিক্যাল ডিভাইসের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্যের ব্যাপক পার্থক্য।

রবিবার (৬ জুলাই) মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহযোগিতায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এই কথা বলেন। হার্টের পেসমেকার ও ভাল্বসহ অন্যান্য ইকুইপমেন্ট সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী ন্যায্য মূল্যে বিক্রয়ের লক্ষ্যে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন অধিদফতরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালকরা, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি, ডিজিএফআইয়ের প্রতিনিধি, এনএসআইয়ের প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের প্রতিনিধি, মেডিক্যাল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সদস্যরা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ভোক্তারা প্রায়ই হার্টের পেসমেকার, রিং ও ভাল্বসহ অন্যান্য ইকুইপমেন্ট উচ্চ মূল্যে কেনার বিষয়ে অধিদফতরে অভিযোগ করেন। এরকম সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৩ জুলাই রাজধানীর কাওরান বাজারে দ্য স্পন্দন লিনিটেড নামে হার্টের পেসমেকার ও ভাল্ব বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদফতর নির্ধারিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে ডিভাইস বিক্রি, মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করা, মেয়াদোত্তীর্ণ ডিভাইস রাখা, ফ্রিজে ডিভাইস ও ঔষধের সঙ্গে কাঁচা সবজিপণ্য সংরক্ষণ করে রাখা, পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে বিক্রয় রশিদে কার্বন কপি ব্যবহার না করা ইত্যাদি বিষয় দেখা যায়।

আলোচনায় মেডিক্যাল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গাজী এ কে শাহীন বলেন, ২০১৭ সাল থেকেই আমদানিকৃত মেডিক্যাল ডিভাইসে মূল্য থাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং তাদের অ্যাসোসিয়েশনের সব সদস্য তা মেনে চলেন। তাছাড়াও চিকিৎসকরা এসব ডিভাইসের মেয়াদ মূল্য যাচাই করে স্থাপন বা ব্যবহার করেন।

মেডিকেল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৭ সালে প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী মেডিক্যাল ডিভাইস রেজিস্ট্রেশন ও মূল্য ছাড়া বাজারজাত করা যায় না। আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল ডিভাইসের ৯৫ শতাংশই আমদানি করা হয়। স্বল্প সময়ে সব মেডিক্যাল ডিভাইসের রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব হয়নি, তবে তা চলমান রেয়েছে। এছাড়াও নীতিমালা অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য লাল কালি দিয়ে ‘নট ফর সেল’ লিখে মূল স্টোরের বাইরে সংরক্ষণ করতে হবে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি জানান, গত কয়েক মাসের ডাটা এনালাইসিস করে আমদানিকৃত মেডিক্যাল ডিভাইসের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্যের ব্যাপক পার্থক্য দেখা যায়।

অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, মূল্যের বিস্তর ফারাকের বিষয়গুলোতে স্পষ্ট হওয়ার জন্য জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি, ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট অব বাংলাদেশ এর প্রতিনিধি এবং মেডিক্যাল ডিভাইস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি আমদানিকৃত মেডিক্যাল ডিভাইসের সব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এক্ষেত্রে অস্পষ্টতা দূর করার পাশাপাশি মূল্যের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় আছে কিনা তা জানিয়ে আগামী এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে।