চাকিরপশার বিলের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার রাজারহাট, চাকিরপশা এবং বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ‘চাকিরপশার’ নামক ২৮৩.২৮ একর বিল (স্থানীয়ভাবে নদী নামে পরিচিত) কোনও ব্যক্তি বা সমিতির অনুকূলে ইজারা ও বন্দোবস্ত প্রদানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসককে এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

আদালত এ বিলে থাকা সকল অননুমোদিত দখলদারকে উচ্ছেদ করতে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং রাজারহাট উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দুই মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন। পাশাপাশি চাকিরপশার বিলের ১৪১.২৯ একর জমি ‘চাকিরপশার মৎসজীবী সমবায় লিঃ’ নামক অমৎস্যজীবীদের সমিতি বরাবর ইজারা প্রদান বিষয়ে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার ও কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক গৃহীত ব্যবস্থা প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিলের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

জনস্বার্থে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র রিটের শুনানি নিয়ে সোমবার (৭ আগস্ট) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের এবং বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ প্রদান করেন।

অন্তর্বর্তীকালীন এ আদেশের পাশাপাশি অননুমোদিত দখল, বন্দোবস্ত ও ত্রুটিপূর্ণ ইজারা প্রদান থেকে উল্লেখিত বিলটি রক্ষার ব্যর্থতাকে কেন অসাংবিধানিক ও আইন বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। রুলে বিলটি পুনরুদ্ধার, সিএস ম্যাপ অনুযায়ী বিলের সীমানা নির্ধারণপূর্বক সকল স্থাপনা ও দখলদার উচ্ছেদ করে এবং বিলের ‘পাঠানহাট’ নামক স্থানে নির্মিত আড়াআড়ি বাঁধ অপসারণ করে নদী রক্ষা কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে বিল ও বিলের স্বাভাবিক প্রবাহ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। আদালত বিলটির বেআইনি ইজারা প্রদান ও বন্দোবস্তের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তা জানতেও রুল জারি করেছেন। আগামী ৩ মাসের মধ্যে বিবাদীদের এসব রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

মামলার বিবাদীরা হলেন-পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদফতরের মহাপরিচালক, এলজিইডি’র প্রধান প্রকৌশলী, রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক, কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার প্রমুখ।

আদালতে বেলা’র পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও অ্যাডভোকেট মিনহাজুল হক চৌধুরী। তাদের সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট এস. হাসানুল বান্না।

প্রসঙ্গত, ‘চাকিরপশার’ নামক বিলটি কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার রাজারহাট, চাকিরপশা এবং বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উলিপুর উপজেলায় গিয়ে ভিস্তা নদীতে মিলিত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে বিলটি নদী হিসেবে পরিচিত। মূলত এটি তিস্তা নদীর একটি উপনদী হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিগণিত হয়ে আসছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী উজানে বিলটির দৈর্ঘ্য ১৮-২০ কিলোমিটার এবং ভাটির অংশে ১৬ কিলোমিটার। এ বিলটি নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হলেও এটিকে বদ্ধ জলমহাল হিসেবে ‘চাকিরপশার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ’ নামক অমৎস্যজীবীদের নিয়ে গঠিত একটি সমিতির অনুকূলে ৩ বছর মেয়াদে ইজারা প্রদান করা হয়। যার বিরুদ্ধে স্থানীয় পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছে গ্রামবাসী।

জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিলের পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ ও দখল করে এর বিরুদ্ধ ব্যবহারের ফলে এ বিল ও বিল সংলগ্ন প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে জলাবদ্ধতায় ফসল উৎপাদন বিঘ্নিত হয় এবং অন্তত ৫ হাজার কৃষক মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিলটির নানামুখী অব্যবস্থাপনা ও বিরুদ্ধ ব্যবহাররোধে এবং যথাযথ সংরক্ষণে স্থানীয় এলাকাবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেলা উল্লেখিত মামলা দায়ের করে।