প্রাক্তনীদের নিখরচার ‘গেস্ট হাউস’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল, তদন্তে নয়া মোড়

এখানে গুরু থাকা ফ্রি। কেনাকাটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের হস্টেলে এই স্লোগানই কায়েম রয়েছে। তাই তো কলকাতায় বেড়াতে এলে বা চাকরির জন্য এলে—ডেরা ছেলেদের হস্টেল। প্রাক্তনীরা নিখরচায় হস্টেলকে ‘গেস্ট হাউস’ বানিয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনকার সিনিয়র পড়ুয়াদের সঙ্গে প্রাক্তনীদের একটা অলিখিত সমঝোতা রয়েছে। আর সেই সমঝোতার জেরেই বছরের পর বছর ধরে অলিখিত গেস্ট হাউস চলে আসছে। আর তাই ভুগতে হয় প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের। এবার তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ মিলল বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদ্বীপ কুণ্ডুর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।

ঠিক কী ব্যবস্থা এখানে?‌ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক গবেষকের কথায়, ‘‌কিছু প্রাক্তনী হস্টেলে থাকে। তাঁদের মধ্যে কেউ কোথাও চাকরি করেন। কেউ অন্য রাজ্যে থাকতেন। কলকাতায় এসে ১০ দিন থাকলেন। এমনকী এখানে থেকে চাকরির জন্য প্রস্তুতিও নেয় অনেকে।’‌ আর এক স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া বলেন, ‘‌এখানে পাসআউটরা হস্টেলে থাকেন। হস্টেল ছাড়েনই না। আর প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের এসে সিনিয়রদের মানিয়ে নিতে হয়।’‌ এই সমঝোতার ফলে ৮–১০ হাজার টাকা বেঁচে যায়। এখানে ইন্টারনেট থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় সুযোগ পায় তাঁরা বলে সূত্রের খবর।

এখন ঠিক কী হয়েছে?‌ স্বপ্নদ্বীপ কুণ্ডুর মৃত্যুর পর এখন এইসব তথ্য সামনে চলে এসেছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় যথেষ্ট বেকায়দায় পড়েছে। তাই মেন হস্টেলের এ–ওয়ান এবং এ–টু ব্লকে থাকা প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের অস্থায়ীভাবে নিউ বয়েজ হস্টেলে থাকতে দেওয়া হয়েছে। প্রাক্তনী এবং বহিরাগতদের হস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায় বলেন, ‘‌আমার কাছে তেমনভাবে রিপোর্ট নেই। হস্টেলে ভিজিটর্স রুম আছে। সেখানে ভিজিটর আসবে, দেখা করবে এবং চলে যাবে। তার বাইরে লিখিত কোনও নীতি নেই।’‌

আরও পড়ুন:‌ অন্ধকার গলি থেকে শিক্ষার আলোয়, স্বাধীনতার পথে যৌনপল্লীর কচিকাঁচারা‌

আর কী জানা যাচ্ছে?‌ বছরের পর বছর ‘অতিথি’ হিসাবে হস্টেলে থাকছেন প্রাক্তনীরা। সেটা কেন কর্তৃপক্ষ জানেন না?‌ সেটা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ভবিষ্যতে প্রাক্তনীরা যাতে হস্টেলে না থাকেন সেটা সুনিশ্চিত করা হবে বলে দাবি করেছেন ডিন। তিনি বলেন, ‘‌ইতিমধ্যেই বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। আমরা নিশ্চিত করব পাসআউট পড়ুয়ারা এখানে যেন না থাকেন।’‌ আফসুর সদস্য শৌর্যদীপ্ত রায় সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‌প্রাক্তনীদের প্রভাবেই বছরের পর বছর ধরে র‌্যাগিং চলছে। হস্টেলটা টুরিস্টদের গেস্ট হাউস হয়ে গিয়েছে।’‌