Jadavpur Row: খুন-আত্মহত্যার ‘হয়তো’র মাঝে মৃত্যুটি ‘হয়তো নয়! সেটি নিয়ে রাজনীতি বন্ধ হোক

সুদক্ষিণা গুপ্ত

 

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চরম দুর্ভাগ্যজনক ও মর্মান্তিক ঘটনাটি সম্পর্কে দুঃখপ্রকাশ করার মতো ভাষা নেই। এই ঘটনা সমস্ত সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে। যেহেতু তদন্ত চলছে, সেহেতু স্পষ্ট করে কিছুই হয়তো বলা যাবে না। তবে মৃত্যুর আগে র‌্যাগিংয়ের নামে চরমতম মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার যে আঠেরো না ছোঁয়া ছেলেটি হয়েছিল, তা পরিষ্কার। 

‘র‌্যাগিং’ একটি মানসিক ব্যাধি কি না, এবং হলে তা মানসিক নাকি সামাজিক— তা সমাজতত্ত্ববিদরা বলতে পারবেন। এটি দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার, না নতুনের উপর পুরনোর অধিকার বোধ ফলানো, নাকি ঈর্ষাবশত তাকে জায়গা না ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা, তাও তাঁরাই হয়তো বলতে পারবেন। গত ৬০-৭০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে কলেজ, হোস্টেল বা ক্লাসে র‌্যাগিং চলে আসছে। কিন্তু যুগের পর যুগ ধরে শ্বশুরবাড়িতে নতুন প্রবেশ করা বধূকে যখন প্রায়শই পরিজনের হাতে নিগ্রহের স্বীকার হতে হয়, তাও কি ‘র‌্যাগিং’ নয়? কত হত্যা বা আত্মহত্যার কারও তো এই নিগ্রহ। কত জন আমরা ভাবিত তা নিয়ে? যাদবপুরে সাম্প্রতিক ঘটনা না ঘটলে হোস্টেলে র‌্যাগিং নিয়েই বা কে ভাবত? আমরা কি দায় এড়াতে পারি? আমরাই তো পরের প্রজন্মকে রক্ষণ করতে পারি না। ‘পৃথিবীতে শিশু বাসযোগ্য’ করে তুলতে পারি না। আমরা শিক্ষকরা ‘শিক্ষিত’ করে তুলতে পারি না ছাত্রছাত্রীদের, মা-বাবারা মানুষ করে তুলতে পারি না সন্তানদের। 

লক্ষ্য করার বিষয় হল সাম্প্রতিক ক্ষেত্রটিতে নিগ্রহের শিকার এবং নিগ্রহকারী এরা কেউই কিন্তু ঝাঁচকচকে ধনী বাড়ির সন্তান নয়। অতএব শ্রেণীবিভাগের তত্ত্বও এখানে প্রযোজ্য নয়। রাজনৈতিক দখলদারি উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা সময়ই বলবে। তবে এমন একটি চরম বেদনাদায়ক ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি বা টিভি চ্যানেলগুলির শ্রোতা দর্শকের আবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে টিআরপি বাড়ানোর প্রতিযোগিতা কাম্য ছিল না। তার পরিপ্রেক্ষিত এই মৃত্যুটি নয়। 

পরিশেষ বলি, এই মৃত্যুটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যে মাত্রাতিরিক্ত র‌্যাগিং একটি জঘন্যতম অপরাধ। আশা করি, নির্দোষ অসহায় মৃত ছেলেটি সুবিচার পাবে, দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি হবে। তবে নির্দোষ ছাত্ররা যারা বাধ্য হয়ে এই ঘটনায় জড়িয়েছে তারাও সুবিচার পাক। কেরিয়ারে সবারই তো কালো ছাপ পড়ল।

হয়তো এটি খুন, হয়তো আত্মহত্যা, হয়তো অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে চেয়ে তিনতলা থেকে ঝাঁপ দেওয়া—  এগুলি সবই ‘হয়তো’। কিন্তু মৃত্যুটি ‘হয়তো’ নয়, এই মুহূর্তে সেটি চরম সত্য। 

 

(লেখক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক। মতামত ব্যক্তিগত)