গ্রন্থাগারিক নেই, অব্যবস্থার নানা অভিযোগ ঐতিহ্যবাহী জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরিতে

দীর্ঘদিন ধরে গ্রন্থাগারিক ছাড়াই চলছে ঐতিহ্যবাহী উত্তরপাড়া জয়কৃষ্ণ সাধারণ লাইব্রেরি। কাজ চালানো হচ্ছে একজন সহকারী লাইব্রেরী টেকনিশিয়ানকে দিয়ে। অন্যান্যপদ শূন্য থাকলেও কোনও নিয়োগ হয়নি। ফলে পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে এই লাইব্রেরির মূল্যবান সব বই। এই বিষয়গুলি জানিয়ে প্রাক্তন বিধায়ক এবং সাংসদ শান্তশ্রী চট্টোপাধ্যায় চিঠি পাঠান রাজ্যের জনশিক্ষা ও লাইব্রেরি দফতরের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে। কিন্তু মাস পার হয়ে গেলেও তার কাছ থেকে কোনও উত্তর আসেনি। তবে লাইব্রেরি দফতরের দাবি, লোক কম থাকলেও পরিষেবাতে ঘাটতি নেই। বরং পরিষেবা আগের তুলনায় অনেকটা ভাল হয়েছে।

ইতালিয়ান স্থাপত্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি এই লাইব্রেরীকে জেলার অন্যতম আর্কষণীয় স্থান। জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এই লাইব্রেরি তৈরি হয়। ১৮৫৯ সালে তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি এই লাইব্রেরিকে হেরিটেজও ঘোষণা করা হয়েছে। লেগেছে বোর্ডও। লাইব্রেরিতে এমন কিছু বই ও প্রচীন পুঁথিও রয়েছে, যা দেশের অন্য কোনও গ্রন্থাগারে মিলবে না। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারেই একাংশের অভিযোগ কার্যত নামমাত্র কর্মী দিয়ে চলছে এই ঐতিহশালী লাইব্রেরি।

(পড়তে পারেন। ‘নিশানায় যাদবপুরের সব পড়ুয়া, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী! এগুলি তাঁদের প্রাপ্য কি?’)

চিঠিতে মন্ত্রীকে চিঠিতে শান্তশ্রী জানিয়েছিলেন, ২০১৩ সাল থেকে এখানে স্থায়ী লাইব্রেরিয়ান নেই। অনুমোদিত ২৪টি পদের মধ্যে ১৯টি শূন্য। ফলে, পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। নিযুক্ত ঠিকাশ্রমিকেরা নিয়মিত মজুরি পাচ্ছেন না। ১৯৬৪ সালে রাজ্য সরকার এই গ্রন্থাগার অধিগ্রহণের সময় পরিচালন সমিতি গঠনের যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলেও তাঁর অভিযোগ। তিনি মন্ত্রীকে সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখে যাওয়ার আর্জি জানান।

লাইব্রেরিতে গুটেনবার্গে ছাপা বাইবেলের একটি কপি রয়েছে। এছাড়া আরও বহু মূল্যবান বই ও নথি রয়েছে। সেগুলির সবই সঠিক রক্ষণাবেক্ষণে অভাবে নষ্ট হতে চলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, লাইব্রেরির বিভিন্ন সম্পত্তি বাইরে পড়ে রয়েছে। এজেন্সির নিরাপত্তা কর্মীরা ঠিকমতো বেতন না পাওয়ায় সেগুলি কার্যত অরক্ষিত ভাবে রয়েছে বলে অভিযোগ। এলাকাবাসীদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, মেহগিনী-সহ একাধিক পুরনো গাছ কাটা হয়েছে। যদিও সরকারি নথিতে এর কোনও তথ্য নেই বলে জানা গিয়েছে।

স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, উত্তরপাড়া জয়কৃষ্ণ সাধারণ লাইব্রেরি এর গ্রন্হাগারিক পদটি অত্যন্ত সম্মানের। বিভিন্ন বিদগ্ধ পন্ডিত, অধ্যাপক তথা সর্বজন শ্রদ্ধেয় গ্রন্থাগারিকের এই আসন অলংকৃত করেছেন যা এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অত্যন্ত সাযুজ্যপূর্ণ।

তাই এলাকাবাসীর দাবি অবিলম্বে গ্রন্থাগারিক নিয়োগ করা হোক এই শতাব্দী প্রাচীন লাইব্রেরিতে।