জিয়াগঞ্জে সপরিবারে প্রাথমিক শিক্ষক খুনে ফাঁসির সাজা হল খুনি উৎপলের

মুর্শিদাবাদে প্রাথমিক শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে খুনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত উৎপল বেহেরাকে ফাঁসির সাজা শোনাল বহরমপুর আদালত। বুধবারই তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বিচারক। বিমার টাকা জমা না দেওয়ায় বন্ধুপ্রকাশকে সপরিবারে সে খুন করেছে বলে স্বীকার করেছে উৎপল।

২০১৯ সালের ৮ অক্টোবর দুর্গাপুজোর দশমীর দিন জিয়াগঞ্জের লেবুবাগানে প্রাথমিক শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, স্ত্রী বিউটি পাল ও চার বছরের পুত্রসন্তান অঙ্গনের দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার সময় অন্তঃসত্বা ছিলেন বিউটিদেবী। ঘটনার তদন্তে নেমে ৭ দিন পর সাগরদিঘির বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর উৎপল বেহেরাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পর জানা যায়, বিমার ২৮ হাজার টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করায় বন্ধুপ্রকাশকে খুন করেছেন উৎপল। প্রমাণ লোপাট করতে বিউটিদেবী ও অঙ্গনকেও খুন করে সে।

এই মামলায় মোট ৪২ জনের সাক্ষ গ্রহণ করে আদালত। যে ২ জন প্রতিবেশী উৎপলকে বন্ধুপ্রকাশের বাড়ি থেকে বেরোতে দেখেছিলেন তাঁরাও সাক্ষী দেন। যে হাঁসুয়া দিয়ে খুন করা হয়েছিল ফরেন্সিক পরীক্ষায় তার হাতলে উৎপলের হাতের ছাপ পাওয়া যায়। সঙ্গে দেশে প্রথম ইলেক্ট্রনিক প্রমাণ পেশে বিশেষ প্রযুক্তির ব্যবহার করে পুলিশ। যার ভিত্তিতে বুধবার উৎপলকে দোষী সাব্যস্ত করেন জেলা জজ আদালতের বিচারক সন্তোষ কুমার পাঠক। বৃহস্পতিবার ঘটনার প্রায় ৪ বছর পর তাকে ফাঁসির সাজা শোনালেন বিচারক। সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বন্ধুপ্রকাশের মা। তিনি বলেন, ছেলেকে খুব কষ্টে মানুষ করেছিলাম। আমার সব শেষ করে দিল ও। বাচ্চাটাকে তো ছেড়ে দিতে পারত। 

গ্রেফতারির পর উৎপল জানায়, বন্ধুপ্রকাশকে বিমার ২৮ হাজার টাকা জমা দিতে দিয়েছিল সে। কিন্তু সেই টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন বন্ধুপ্রকাশ। এর পর টাকা ফেরত চেয়ে সে বারবার ফোন করলেও টাকা তো পায়নি, উলটে বন্ধুপ্রকাশ তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বলে অভিযোগ। এর জেরেই বন্ধুপ্রকাশের প্রতি আক্রোশ তৈরি হয় তাঁর। বন্ধুপ্রকাশকে খুন করার জন্য ৫ অক্টোবর হাঁসুয়া কেনে সে। এর পর সেই হাঁসুয়া ব্যাগে নিয়ে জিয়াগঞ্জের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল সে। কিন্তু রাস্তায় বন্ধুপ্রকাশের দেখা না পেয়ে শেষে তাঁর বাড়ির খোঁজ করে সেখানে হাজির হয়।