নন্দীগ্রামে পঞ্চায়েত সমিতিতে BJP ঝড়, শুভেন্দু বললেন, আমাদের সঙ্গে লড়তে দম লাগে

টানটান উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার হল নন্দীগ্রাম ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি গঠন। তৃণমূল ও বিজেপি পঞ্চায়েত সমিতিতে সমান সংখ্যক আসন জিতলেও এদিন স্থায়ী সমিতির সমস্ত পদে জয় হয় গেরুয়া প্রার্থীদের। পরাজয় নিশ্চিত বুঝে স্থায়ী সমিতি গঠনের প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে তৃণমূল। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। এদিন তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী কোথায় ভোট দিয়েছেন তা নিয়ে তীব্র জল্পনা শুরু হয়েছে।

এর আগে বোর্ড গঠনে লটারির মাধ্যমে নন্দীগ্রাম ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পদটি ছিনিয়ে নিয়েছিল বিজেপি। মঙ্গলবার স্থায়ী সমিতির সব কটি পদেই জিতল বিজেপি। সমিতি দখলের পর শুভেন্দুর উক্তি, “আমার সঙ্গে লড়তে গেলে দম লাগে”।

এদিন ভোটাভুটি চলাকালীন তৃণমূলের এক সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়ায় ঘাসফুল শিবির ভোট বাতিলের দাবি জানায়। কিন্তু সেই দাবী মানতে রাজি হননি BDO। এরপরেই স্থায়ী সমিতি গঠনের ভোটাভুটি বয়কট করে বেরিয়ে আসেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। তাঁরা নন্দীগ্রাম ১ ব্লক অফিসের বাইরে রাস্তায় বসে পড়ে শ্লোগান দিতে থাকেন। তবে এতেও স্থায়ী সমিতি গঠনে কোনও প্রভাব পড়েনি। কিছু সময় বাদেই শুভেন্দু অধিকারী বাইরে এসে জানিয়ে দেন, তাঁরাই সবকটি সমিতি দখলে রেখেছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারেন বলে নন্দীগ্রামের তৃণমূল নেতৃত্বরা জানিয়েছেন।

এদিন নন্দীগ্রামের পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি গঠন ঘিরে সকাল থেকেই ছিল চাপা উত্তেজনা। ব্লক অফিস চত্বরে জারি হয় ১৪৪ ধারা। নিয়ম অনুযায়ী পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি গঠনে অংশ নেন সমিতির জয়ী সদস্যরা। সেই সঙ্গে পঞ্চায়েতগুলির প্রধান এবং এলাকার বিধায়ক ও সাংসদ এই ভোটাভুটিতে ভাগ নেন। সেই মতোই এদিন সকাল ১০টা নাগাদ পঞ্চায়েত সমিতিতে হাজির হন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। কিছু সময় বাদেই দল বেঁধে গাড়িতে করে আসেন বিজেপির জন প্রতিনিধিরা। সমিতির অফিসে আসেন সাংসদ দিব্যেন্দু ও বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী।

নন্দীগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির ৩০টি আসনের মধ্যে ১৫টি করে আসন জিতেছে যথাক্রমে তৃণমূল ও বিজেপি। তবে গ্রাম পঞ্চায়েত, বিধায়ক ও সাংসদ মিলিয়ে বিজেপির হাতে ছিল ২৩টি ভোট। এদিন স্থায়ী সমিতি গঠনের ভোট শেষে শুভেন্দু অধিকারী জানান, ‘আজ প্রথমে তৃণমূল ভোটে অংশ নিয়েছিল। সেখানে আমরা ২৩ জন ছিলাম অথচ ভোট পেলাম ২৪টি। এর পরেই তৃণমূল অসুস্থতার কথা বলে ভোট দান থেকে বেরিয়ে আসে’। শুভেন্দুর দাবি, ‘তৃণমূলের কেউ ভোট দিতে জানে না আবার কেউ ভুল জায়গায় ভোট দিয়েছে’। তাঁর উক্তি, ‘এরা অশিক্ষিত তৃণমূল, ওরা আরও পড়াশোনা করুক’। এরপরেই শুভেন্দু জানান, ‘আমার সঙ্গে লড়তে গেলে দম লাগে। ওদের মালিককেও তো আমিই হারিয়েছি’।

তবে স্থায়ী সমিতির ভোটদান প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে এসে তৃণমূলের তমলুক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক শেখ সাহাবুদ্দিনের দাবি, ‘ভোট চলাকালীন আমাদের এক সদস্য অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। সেই সময় আমরা ভোটাভুটি স্থগিত রাখতে আবেদন জানাই। কিন্তু ব্লক আধিকারিক সেই কথায় কর্ণপাত করেননি। আমরা প্রয়োজনে এর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হব’।

তবে সব কিছু ছাপিয়ে এদিনের ভোটদানে তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর উপস্থিতি নিয়ে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়। তিনি তৃণমূলে নাকি বিজেপিতে ভোট দিয়েছেন এই নিয়েই শুরু হয় জল্পনা। ভোটদান শেষ করে দিব্যেন্দু জানান, ‘আমি সংবিধানের নিয়ম মেনেই ভোট দিতে এসেছিলাম। কাকে ভোট দিয়েছি সবাই জানেন। কারা বোর্ড দখল করল তা প্রিসাইডিং অফিসার জানাবেন। তবে আমি উন্নয়নের কাজে অংশ নিতেই নিয়ম মেনে এসেছিলাম’। দিব্যেন্দুর দাবী, ‘উন্নয়নের কাজে যাতে কোনও রাজনীতি না দেখা হয় সেটাই আশা করব’।