নির্মাণাধীন ভবনে থাকতে হবে নিজস্ব পরিচ্ছন্নতাকর্মী

ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে। চলতি বছরেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৫৬ জন (২৮ আগস্ট পর্যন্ত)। আর প্রতিদিনই নতুন করে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন হাজারেরও বেশি রোগী। প্রতিদিন নতুন আক্রান্ত রোগী এবং মৃতের সংখ্যা রাজধানীতেই বেশি। ডেঙ্গুর টালমাটাল এই পরিস্থিতি সামলাতে নানান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন। এরই মধ্যে নতুন একটি পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-২। এই অঞ্চলের আওতাধীন এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে নিজস্ব পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ বাধ্যতামূলক করেছে সংস্থাটি। উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ এবং সিটি করপোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। অন্যান্য অঞ্চলেও এই উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবছে ডিএনসিসি।

অঞ্চল-২-এর এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করাসহ বিভিন্ন ধরনের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে দেখা যায়, প্রায় ৭০ ভাগ নির্মাণাধীন ভবনে পানি জমে থাকার কারণে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এই সমস্যা সমাধানে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমের পাশাপাশি জনসম্পৃক্ততা একান্ত প্রয়োজন। তারই অংশ হিসেবে এডিস মশার প্রজনন ধ্বংস ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ভবন মালিকদের ভবনের স্পেস অনুযায়ী পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ করতে অনুরোধ করা গেলো।

এছাড়া এই এডিস মশার প্রজনন নিয়ন্ত্রণে ভবনের আঙিনা, লিফটের স্থান, ছাদ এবং ওপেন স্পেস নিজ উদ্যোগে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে বলেও আদেশপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপরও কোনও ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে সিটি করপোরেশন আইন এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

ডিএনসিসির অঞ্চল-২-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশটি গত রবিবার (২৭ আগস্ট) জারি করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কাজ করে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। তাই মশক নিধন কার্যক্রমে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতেই আমার আওতাধীন অঞ্চল-২-এ এই আদেশ জারি করেছি। প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগ নেওয়ায় এখন ভবন মালিকদের চিঠি প্রদানের মাধ্যমে অনুরোধ করা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে এটি বাধ্যতামূলক করা হবে এবং এই আদেশ অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নির্মাণাধীন ভবনে নিজস্ব পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ফলাফল দেবে—এমনটাই প্রত্যাশা করছেন ডিএনসিসির এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে হেড অফিসে (নগর ভবন) জানিয়েছি। আশা করছি, ডিএনসিসির অন্যান্য অঞ্চলেও এই আদেশ জারি করা হবে।’

আপাতত নির্মাণাধীন ভবনের ক্ষেত্রে এই আদেশ জারি করা হলেও পরবর্তী সময়ে পরিধি বাড়িয়ে বহুতল ভবন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও ক্ষেত্রেও তা জারি করা হবে বলে জানান মো. জিয়াউর রহমান।

মিরপুরের সেকশন ১, ২, ৭, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৫, পল্লবী, বোটানিক্যাল গার্ডেন আবাসিক এলাকা, মানিকদী, মাটিকাটা, বালুঘাট ও ভাসানটেকসহ বেশ কিছু এলাকা ‘অঞ্চল ২’-এর আওতাধীন। এই অঞ্চলের আদেশপত্রের বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘অধিকাংশ নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে পানি জমে থাকার কারণে মশার লার্ভার জন্ম হয়। সেখানে ভবন মালিক বা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান নিজস্ব একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাখেন, তাহলে একদিকে তাকে মশার লার্ভা জন্মানোর জন্য জরিমানা দিতে হচ্ছে না, পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণও করা সহজ হবে।’

অঞ্চল-২-এর আদেশকে ‘ইতিবাচক’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে বারবার বলে থাকি, নিজ নিজ স্থাপনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে একটি অনুরোধপত্র থাকতেই পারে এবং আমরা ডিএনসিসির অন্যান্য অঞ্চলে এই আদেশ জারি করার কথা ভাবছি।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক নগরবিদ আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘এমনিতে নির্মাণাধীন ভবনে অনেক ধরনের নির্মাণ শ্রমিক থাকেন। সেখানে যদি বিশেষভাবে কাউকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, সেটা অবশ্যই ভালো। তবে নির্মাণাধীন ভবনের জমে থাকা পানিতে জন্মানো মশার লার্ভা ধ্বংসের পাশাপাশি নির্মাণাধীন ভবনের বাইরে যেসব ইট-বালি পড়ে থাকে, পরিবেশ দূষণ করে তার সব কিছু দেখভাল করার জন্যও সেই পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।’

এমন পরামর্শের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘একটি ভবন নির্মাণে দীর্ঘ সময় লাগে। সেক্ষেত্রে এসব ইট-বালি ভবনের বাইরে সড়কে পড়ে থাকে এবং এটি পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি নগরবাসীর স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। এ ক্ষেত্রে শুধু পরিচ্ছন্নতাকর্মী নন, সার্বিকভাবে দায়িত্বশীল সবাইকে জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে। এই উদ্যোগকে একটি ফরম্যাটে নিয়ে আসতে পারলে ভালো হবে।’