Paschim Banga Dibas on Poila Baisakh: বাঙালির দিন পয়লা বৈশাখে কেন পশ্চিমবঙ্গ দিবস হওয়া উচিত নয়? জানালেন নৃসিংহপ্রসাদ

পয়লা বৈশাখকেই কি ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে? আপাতত সেই বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। অনেকেই অবশ্য সেই দিনটির পক্ষে সওয়াল করেছে। তবে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করলেন শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি। তাঁর মতে, ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে পয়লা বৈশাখ খুব একটা প্রাসঙ্গিক নয়। বরং ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে এমন একটি দিনের পক্ষে সওয়াল করছেন তিনি, যাতে বঙ্গভঙ্গের ইতিহাস লুকিয়ে আছে। রাখিপূর্ণিমার দিনটিকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার নবান্নে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ নিয়ে আলোচনায় নৃসিংহপ্রসাদবাবু বলেন, ‘২০ জুন যে এরকম একটা ঘটনা ঘটেছিল, সেটা আমরা কোনওদিন আমাদের শ্রবণপথে আসেনি (শোনেননি)। হঠাৎ করে যেটা হল (বঙ্গভঙ্গের দিনে রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন), সেটার যদি কোনও প্রতিবাদ থাকে, তাহলে সেটা এখান থেকে করছি।’ 

আরও পড়ুন: রাজ্য সংগীত নিয়ে মতামত চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী, বিধানসভায় কবে বসছে আলোচনাসভা?

তারপর নৃসিংহপ্রসাদবাবু ব্যাখ্যা করে দেন যে কেন পয়লা বৈশাখ ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালন করার পক্ষে মত নেই তাঁর। বিখ্যাত শিক্ষাবিদ বলেন, ‘পয়লা বৈশাখের বিষয়টা নিয়ে আমি আগে বহু লেখা লিখেছি – বঙ্গাব্দ নিয়ে। যেহেতু এটা একটা হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ হয়ে যায়, (তাই বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ)। বিশেষত একটা ফসলি সনের প্রয়োজন ছিল আকবরের। চন্দ্রমাসে সময়টা এক জায়গায় পড়ে না বলে হিজরি সন নিয়ে একটা সমস্যা হচ্ছিল। ফলে প্রধানমন্ত্রী টোডরমল এবং আমির সিরাজিকে একটি সৌরমাসের পরিকল্পনা করতে বলেছিলেন আকবর।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘তাঁরা (টোডরমল ও আমির সিরাজ) পরিকল্পনা শুরু করেছিলেন যাতে (প্রতি বছর) একই সময় যাতে ফসলি সনটা পড়ে (যখন ফসল তোলা হবে, যখন খাজনা দেওয়ার সময় হবে, যখন ধার-দেনা শোধ হবে এবং রাজকোষে খাজনা পড়বে)। এই ভাবনা থেকেই ৯৬৩ যে হিজরি সন, সেটা বঙ্গাব্দের উপরে চাপিয়ে দিয়েছিলেন আকবর।’ অর্থাৎ ৯৬৩ হিজরি সন থেকে বঙ্গাব্দের সূচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। 

আরও পড়ুন: Rakhi Purnima 2023: বারবার যুদ্ধ, বিদ্রোহ রদ করেছে একটাই সুতো! রাখি বন্ধনের দিন ফিরে দেখা ইতিহাস

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের মতে, আকবরের সময় যেভাবে ‘বৃদ্ধ’ হয়ে বঙ্গাব্দের সূচনা হয়েছিল, সেরকমভাবেই শশাঙ্ককে বঙ্গাব্দের প্রবর্তক হিসেবে একটি অংশ দেখলেও সেটার পক্ষে খুব একটা জোরালো স্বর শোনা যায় না। কিছু তারিখ ব্যবহার করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেটার সংখ্যা খুব কম। সেটা বঙ্গাব্দ নয় বলে মনে করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ।

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে ‘আকবরের ধারণা থেকে যদি পয়লা বৈশাখকে (বাংলা দিবস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়), তাহলে আমি বলব যে সেটা অখণ্ড বাংলার বিষয় ছিল। শশাঙ্কের ক্ষেত্রেও তাই। কারণ তখন বঙ্গ বলতে যেটা বোঝাত, সেটা হচ্ছে একেবারে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চল। আমাদের সুন্দরবন এবং বাংলাদেশের ওপাশটা – এটাই ছিল বঙ্গ।’

নৃসিংহপ্রসাদবাবু বলেন, ‘বাংলা ভাষার সূত্রে কিন্তু বঙ্গ শব্দটা ব্যবহার করা হয়নি। এটা মাথায় রাখতে হবে। সেই ভাষার সূত্রে যদি বঙ্গ হয় এবং সেখানে যদি পশ্চিমবঙ্গের ভাবনা আনতে হয়, তাহলে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের স্মৃতি যেখানে আছে, আলাদা হল যেখানে, সেটা একটু মেনে চলার দরকার আছে। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের কোনও বিখ্যাত মানুষদের (ভিত্তিতে দিনটা নির্ধারণ করা হতে পারে)। সেটা চৈতন্যদেব হতে পারেন। সবথেকে ভালো হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।’

সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ভৌগোলিক অঞ্চলের মধ্যে অখণ্ডতা এবং জনসংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা একেবারে অখণ্ড বাংলা পাইনি। অখণ্ড বাংলাদেশ থেকে ভাঙা পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছি। পশ্চিমে একেবারে আলাদা করে পশ্চিমবঙ্গ। সেটা যেহেতু পাইনি, তাই (আমাদের এমন একটি দিন বেছে নিতে হবে), যেখানে পশ্চিমবঙ্গের স্মৃতি সামান্যতমও থাকে। সেটা কোনওভাবে ২০ জুন নয়।’ সেই পরিস্থিতিতে রাখিপূর্ণিমার দিনকে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে পালন করার পক্ষে সওয়াল করেন তিনি।