‘মাদক আছে’ বলে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে রাজমিস্ত্রিকে অপহরণ, পুলিশ সদস্যসহ গ্রেফতার ৪

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ‘মাদক আছে’ বলে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে এক রাজমিস্ত্রিকে অপহরণের অভিযোগে পুলিশ সদস্যসহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে অপহরণে ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল ও হ্যান্ডকাপ উদ্ধার করা হয়েছে।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে তাদের মুন্সীগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে শ্রীনগর ও ঢাকার দোহার এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন শ্রীনগর উপজেলার উত্তর কামারগাঁও গ্রামের আক্তার খানের ছেলে ফয়সাল খান (২৩), দামলা গ্রামের শেখ খলিলের ছেলে আরিফ হোসেন (২০), মাহি শেখের ছেলে মুজিবুর রহমান শাফিন ও পুলিশ সদস্য লিয়াকত হোসেন লিমন (২৫)। লিয়াকত মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী থানার কুন্ডেরবাজার ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। অপহরণের শিকার মো. সুজন (২০) কোলাপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ পাইকসা গ্রামের মৃত জাহাঙ্গীর মোল্লার ছেলে।

পুলিশ ও সুজনের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার ফুলকচি এলাকার হৃদয় মার্কেটের সামনে রাজমিস্ত্রি সুজন কোমলপানীয় পান করার সময় দুটি মোটরসাইকেলে এসে কনস্টেবল লিয়াকতসহ ছয় যুবক উপস্থিত হন। এ সময় তারা সুজনের কাছে ‘মাদক আছে’ বলে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে নিয়ে যান। পরে তাকে রাঢ়ীখাল এলাকার নির্জন স্থানে এবং বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের ছনবাড়ি ফ্লাইওভারের নিচে এনে মুক্তিপণ দাবি করেন। ১৬ দিন আগে বাবা মারা গেছেন এবং মা পিঠা বিক্রি করেন জানিয়ে টাকা দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করেন সুজন। এতে অপহরণকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করেন। রাত ৯টার দিকে সুজনের মায়ের কাছে ফোন করে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন তারা। সুজনের মা আনোয়ারা বেগম বিষয়টি শ্রীনগর থানা পুলিশকে জানান।

এরপর পুলিশের পরামর্শে আনোয়ারা বেগম টাকা নেওয়ার জন্য অপহরণকারীদের সমষপুর এলাকায় আসতে বলেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি মোটরসাইকেল নিয়ে টাকা নিতে পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণপাইকসা মসজিদের সামনে এলে আগে থেকে অবস্থান করা শ্রীনগর থানা পুলিশ ফয়সাল খান, আরিফ হোসেন ও শাফিনকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের সঙ্গে নিয়ে রাতেই ছনবাড়ি এলাকায় যায় পুলিশ। তখন পুলিশ দেখে লিয়াকত হোসেন ও আরিফ মির্জাসহ অজ্ঞাত আরও একজন পালিয়ে যান।

শুক্রবার দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে দোহার উপজেলার নিকরা গ্রাম থেকে লিয়াকতকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে একটি হ্যান্ডকাপ, স্প্রিংয়ের লাঠি ও অপহরণ কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। তাদের সহযোগী ভাগ্যকুল মান্দ্র গ্রামের দুলাল সর্দারের ছেলে আরিফ মির্জা ও অজ্ঞাত আরেকজন পলাতক রয়েছেন। 

সুজনের স্ত্রী বন্যা আক্তার বলেন, ‌‘বৃহস্পতিবার রাতে স্বামীকে পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ করা হয়। পরে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন, নয়তো মাদক মামলায় চালান দেওয়ার হুমকি দেন। টাকা নিতে এলে তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেইসঙ্গে ছনবাড়ি এলাকা থেকে স্বামীকে উদ্ধার করা হয়। আমি এর বিচার চাই।’

শ্রীনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘অপহরণের ঘটনায় জড়িত ছয় জনের বিরুদ্ধে শ্রীনগর থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ সদস্যসহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে। অপর দুই জনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

মুন্সীগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক জামাল হোসেন বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যায় শ্রীনগরের অপহরণের মামলায় পুলিশ সদস্যসহ চার জনকে আদালতে তোলা হয়েছে। তবে আদালত আদেশ দেননি। রবিবার আদেশ দেবেন।’