Fever issues: জ্বর ‘উপকারী’ তো বটেই, কিন্তু কাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা বেশি? কী করতে হবে?

গায়ে জ্বর এলে কী করা বা না করা উচিত, সে বিষয়ে নানা প্রচলিত ধারণা চালু আছে৷ কিন্তু জ্বর সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা, বয়স ও শরীরের অবস্থার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে৷ বিশেষজ্ঞরা কিছু ক্ষেত্রে জ্বর কমানোর পরামর্শ দেন৷

জ্বর হলে অনেকে প্রচণ্ড কাহিল হয়ে পড়েন৷ কিন্তু জ্বর আসলে দেখিয়ে দেয়, যে শরীর কোনও শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের লড়াই চালাচ্ছে৷ শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে সেটা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে৷ কারণ অনেক ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়া বেশি উত্তাপ সহ্য করতে পারে না৷ ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো তাপমাত্রায় সেগুলির সবচেয়ে ভালো বংশবৃদ্ধি ঘটে৷

জ্বরের কারণে চারপাশের পরিবেশ আরও উষ্ণ হয়ে পড়লে কিছু জীবাণুর প্রোটিন গুটি পাকিয়ে যায়৷ ফলে বংশবৃদ্ধির পথে বাধা আসে বা জীবাণু মরে যায়৷ অর্থাৎ জ্বর শরীরের জন্য উপকারী৷

রোগের প্যাথোজেন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে লিম্ফোসাইটের এক জরুরি ভূমিকা রয়েছে৷ সেই প্রতিরোধী কোষ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মতো হানাদার শনাক্ত করে সেগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে৷ সংক্রমণের জায়গায় পৌঁছে গিয়ে সেখানে প্রতিরোধ গড়ে তোলে৷ জ্বর সেই প্রক্রিয়ার গতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে৷ কারণ তখন হিট স্টক প্রোটিনের নিঃসরণ ঘটে৷ লিম্ফোসাইটের গতি আচমকা বাড়িয়ে দেয়৷ আরও দ্রুত গতিতে এবং আরও ভালোভাবে সেগুলি ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে পারে৷

জ্বর সাহায্য করে না ক্ষতি করে, এর কোনো সহজ উত্তর নেই৷ জ্বর কমানোর চেষ্টা করা উচিত কিনা, সেটাও কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর নির্ভর করে৷ সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ড. টিল কখ মনে করেন, ‘কিছু বয়সের মানুষের জন্য জ্বর বিশেষভাবে বিপজ্জনক৷ একদিকে খুব কমবয়সি রোগী অর্থাৎ বয়স এক বছরেরও কম৷ অন্যদিকে ৭৫ বছরেরও বেশি বয়সি মানুষ৷ এটা হল, বয়স সংক্রান্ত একটি বিষয়৷ এছাড়া যাদের আগে কোনও কঠিন রোগ হয়েছে, তাদেরও ঝুঁকি বেশি৷ এমন মানুষের ক্ষেত্রে আমি উপসর্গের থেকে জ্বরকে বেশি গুরুত্ব দিই৷’

কারণ আমাদের শরীরের বেশিরভাগ প্রক্রিয়া ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভালো ঘটে৷ শরীরের তাপমাত্রা দীর্ঘ সময় ধরে বেড়ে গেলে সেটা বিপজ্জনক হতে পারে৷ এমনকী স্বাস্থ্যবান মানুষের জ্বর ৪০ ডিগ্রি বা তার বেশি হলে কঠিন পরিণতি ডেকে আনতে পারে৷ ইন্টেনসিভ কেয়ারের ডাক্তার প্রো. স্টেফান ক্লুগে বলেন, ‘যেমন কঠিন ডিহাইড্রেশন, অত্যন্ত দ্রুত হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ কমার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে৷ এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই জ্বর কমাতে হয়৷’

তবে ঠিক কখন জ্বর কমানো উচিত, এর কোনও সাধারণ নিয়ম নেই৷ যাবতীয় গবেষণার ফল একটি বিষয়ে ঐকমত্য সৃষ্টি করে৷ শুধু জ্বর কমানোর মাধ্যমে রোগের সময় কমানো সম্ভব নয়৷ চিকিৎসক হিসেবে ড. টোমাস গ্যুন্টার বলেন, ‘জ্বর আসলে শরীরের অ্যালার্ম৷ শরীর বলে, আমার একটা সমস্যা হয়েছে, আমাকে শান্তিতে থাকতে দাও৷ আমাকে এখন অন্য বিষয়ে মনোযাগ দিতে হবে৷ অর্থাৎ উৎসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে৷ তার জন্য শরীরের শক্তির প্রয়োজন হয়৷ কিন্তু জ্বর উপেক্ষা করে স্বাভাবিকভাবে কাজ চালিয়ে গেলে, শরীরের উপর চাপ সৃষ্টি করলে রোগ আরও অনেক কঠিন হয়ে পড়তে পারে৷’

জ্বর এলে যথেষ্ট পরিমাণ জল পান করা অত্যন্ত জরুরি৷ শরীরের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বাড়লেই বাড়তি এক লিটার করে পান করতে হবে৷ অর্থাৎ সাড়ে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা দেখা দিলে দিনে প্রায় পাঁচ লিটার জল খেতে হবে৷ কেউ সেটা না পারলে তাকে জ্বর কমানোর চেষ্টা করতে হবে৷

ওষুধের মাধ্যমে কয়েক ঘণ্টার জন্য তাপমাত্রা কমানো সম্ভব৷ বাইরে থেকেও শরীরকে ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করা যায়৷ যেমন কপালে জলপটি দিয়ে সেটা করা হয়৷ জলে ভিনিগার মিশিয়ে কাপড় ভিজিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য পায়ে জড়িয়ে রাখলে আরাম পাওয়া যায়৷

এক রোগীর শরীরের তাপমাত্রা আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে৷ তিনি জ্বর কাটিয়ে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গিয়েছেন৷

(বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)