ময়মনসিংহের কারখানাগুলোতে নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে মিষ্টি

ময়মনসিংহ নগরীর বিভিন্ন কারখানায় নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা হচ্ছে মিষ্টি। নগরীর মিষ্টি দোকানগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হলেও এর বিপরীত চিত্র কারখানাগুলোর।

শনিবার (০৯ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন মিষ্টি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, চরপাড়া মোড়ে লাজিজ মিষ্টির দোকানে সুন্দর পরিবেশে মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে। তবে লাজিজের মিষ্টি তৈরির কারখানায় দেখা গেছে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। মিষ্টি তৈরি করে অপরিষ্কার মেঝেতে রাখা হচ্ছে। কারখানার কারিগরদের পোশাকও অপরিচ্ছন্ন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করে সেই মিষ্টি নগরবাসীকে খাওয়ানো হচ্ছে। 

এ বিষয়ে লাজিজ মিষ্টি কারখানার কর্মচারী আক্কাস আলী বলেন, ‘অনেক পুরোনো কারখানা, ওপরে টিনের চাল। মেঝে অপরিষ্কার। কারখানার সংস্কার এবং সুন্দর পরিবেশের জন্য মালিকপক্ষের উদ্যোগ নেই। এ জন্য এই পরিবেশে মিষ্টি তৈরি করতে হচ্ছে আমাদের।’ 

এ ব্যাপারে লাজিজ মিষ্টি দোকানের ম্যানেজার দীপক কুমার বলেন, ‘কারখানাগুলো প্রশাসনের লোকজন তেমন একটা পরিদর্শন করেন না। তবে নোংরা পরিবেশ থেকে সুন্দর পরিবেশে কারখানা স্থানান্তরের চেষ্টা চলছে।’

এদিকে, নগরীর স্টেশন রোড এলাকার বিক্রমপুর সুইটসের কারখানায় গিয়ে একই অবস্থা দেখা গেছে। কারখানার নোংরা মেঝেতে মিষ্টি তৈরি করা হচ্ছে। ভেতরে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। পাশেই রাখা হয় তৈরিকৃত মিষ্টি। কারখানা কর্মচারীদের নেই স্বাস্থ্যসম্মত কোনও পোশাক-আশাক।’

নোংরা পরিবেশে মিষ্টি তৈরির কথা স্বীকার করে বিক্রমপুর সুইটসের মালিক দুলাল চন্দ্র ঘোষের ছেলে শুভ ঘোষ বলেন, ‘সারাদিন কাজ করার পর রাতে কারখানা পরিষ্কার করা হয়। এ কারণে নোংরা থাকে। ময়লা-আবর্জনার পাশে তৈরি করা মিষ্টি রেখে দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে। ভাড়া বাসায় কারখানা করার কারণে পরিবেশ সুন্দর করা যাচ্ছে না।’

লাজিজের মিষ্টি তৈরির কারখানায় দেখা গেছে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ

এর পাশেই জয়গুরু মিষ্টান্ন ভান্ডারের কারখানারও একই অবস্থা। এই কারখানার মালিক রাধা মোহন পাল বলেন, ‘বাড়ির মালিককে কারখানা সংস্কারের জন্য বারবার বলার পরও সংস্কার করে দিচ্ছেন না। মেঝে টাইলস করাসহ কারখানা স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে উন্নয়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে আমার।’

নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি এসব মিষ্টি খেলে জন্ডিস, টাইফয়েড, পেটের পীড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ, এমনটি জানালেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ফরহাদ হোসেন হিরা। তিনি বলেন, ‘সুস্থ থাকার জন্য পরিষ্কার খাদ্য গ্রহণের বিকল্প নেই। এসব খাবার গ্রহণের ব্যাপারে সবার সচেতন হওয়া জরুরি।’

কারখানার কারিগরদের পোশাকও অপরিচ্ছন্ন

অস্বাস্থ্যকর কারখানায় অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মিষ্টি তৈরি করা কারখানা মালিকদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে কারখানার কারিগরদের অবশ্যই পরিষ্কার পোশাক থাকতে হবে।’ 

এসব মিষ্টির দোকান তদারকির ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ময়মনসিংহ বিভাগীয় উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাঝেমধ্যে মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী কারখানায় অভিযান চালানো হয়। তবে অভিযান আরও জোরদার করা হবে।’