সবাই বলছে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, তবু তারা একতরফা নির্বাচন করতে চায়: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নিম্ন আদালতে আমাদের নেতাকর্মীরা জামিন নিতে গেলে তাদের রিমান্ডে পাঠায়। বিদেশিরা শুনলে অবাক হন, একটি গণতান্ত্রিক দেশের বিরোধী দলের প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলছে। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে তারা এই কাজটি করেছে। এজন্য সারা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক দেশগুলো বলছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। অতীতে কোনও নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এরপরও আরেকটি একতরফা নির্বাচন করতে চায় তারা। এই নির্বাচন থেকে সব রাজনৈতিক দলকে দূরে রাখার জন্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আরও মামলা এবং সাজা দিচ্ছে। কারণ একটাই, একাই মাঠে থাকবে তারা। আর কাউকে মাঠে রাখবে না। ওই নির্বাচন আমরা মেনে নেবো না।’

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে দিনাজপুর শহরের বটতলী এলাকার ট্রাক টার্মিনাল মাঠে ‘তারুণ্যের রোডমার্চ’ কর্মসূচি শেষে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের উদ্যোগে এ রোডমার্চ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (পিটিআই) সংবাদ সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পিটিআই কয়েকদিন আগে একটি প্রবন্ধে লিখেছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন লাইফ সাপোর্টে আছে। বিগত দুটি নির্বাচন রাতের আঁধারে আয়োজন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে এই সরকার। আগামীতেও একটি পাতানো নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে নিজেদের ইচ্ছেমতো জেলায় জেলায় ডিসি-এসপি পদায়ন করছে সরকার।’

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নিউইয়র্ক টাইমস তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র নীরবে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকার প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রায় ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপিকে মাঠশূন্য করার পাঁয়তারা করছে। ভোটের অধিকার আমাদের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার আদায়ে কারও ওপর বিএনপি নির্ভরশীল নয়। তারুণ্যের নেতৃত্বে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো। সেইসঙ্গে সরকারের পতন ঘটিয়ে সুষ্ঠু ভোটের আয়োজন করবো।’ 

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া গৃহবন্দি অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। দেশে তার চিকিৎসা হচ্ছে না। এই দিনাজপুর ঐতিহ্যবাহী একটি জেলা। সমাবেশস্থলের পাশেই চেহেলগাজী মাজার ও একাত্তরের বীর শহীদেরা ঘুমিয়ে আছেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের বাড়িও এই জেলায়। তেভাগা আন্দোলনের জনপদ দিনাজপুর। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই জেলার মানুষ তাদের অধিকার আদায় করতে জানেন। কয়েক বছর ধরে আমরা বলে আসছি, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আজকে শুধু বিএনপি নয়, সরকারের শরিক দলসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল এমনকি পৃথিবীর প্রায় সব দেশ বলছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র আজ নীরবে ধ্বংস হয়ে গেছে। অতীতের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হবে। অংশীদারত্বমূলক হতে হবে।’

এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এত বছর অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার পরও আরও থাকতে চায়। আবারও আরেকটি নির্বাচন করতে চায় ২০১৪ ও ২০১৮ সালের কায়দায়। বারবার জনগণকে বোকা বানিয়ে ভোট ছাড়াই নিজেদের নির্বাচিত করতে চায়। কিন্তু এবার দেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মানুষকে যতই বোকা বানাতে চান, পারবেন না এবার। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবো না। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে অতীতে কোনও নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি, হতে পারে না। গত ১৫ বছরে এই সরকার সবগুলো গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিচারব্যবস্থা পর্যন্ত দলীয়করণ করেছে।’ 

যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল আলম, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম ও দিনাজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ।