৪২ লাখ টাকার স্বর্ণ পকেটে লুকিয়ে রেখেছিল এভসেক সদস্য

চোরাচালানে সহযোগিতা করতে গিয়ে শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন এভিয়েশন সিকিউরিটির (এভসেক) একজন সদস্য। ৪২ লাখ টাকা মূল্যমানের ছয়টি সোনার বার পকেটে লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। একই ঘটনায় জড়িত এক যাত্রীকেও আটক করা হয়েছে। শনিবার ভোরে এ ঘটনা ঘটলেও দিনভর নানা গোপনীয়তার মধ্যে রাতে বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়েছে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক মিয়া।

গ্রেফতার হওয়া এভসেক সদস্য হচ্ছেন মো. নাহিদ মিয়া। তিনি আনসার থেকে এভসেকে যুক্ত হন।  প্রসঙ্গত বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিজস্ব জনবলের ঘাড়তি থাকায় বিমান বাহিনীর  কর্মকর্তার নেতৃত্বে এভিয়েশন সিউরিটিতে বেবিচকের নিজস্ব জনবলের পাশাপাশি বিমান বাহিনী, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা কাজ করেন।

আটক হওয়ার সময় এভসেক সদস্য মো. নাহিদ মিয়ার দেহ তল্লাশি করা হলে, তার প্যান্টের ডান পাশের পকেট থেকে ৬ পিস গোল্ডবার পাওয়া  যায়। প্রতিটি সোনার বারের ওজন ১১৬ গ্রাম। ৬টি বারের মোট ওজন ৬৯৬ গ্রাম। আনুমানিক বাজারমূল্য ৪২ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, সৌদি প্রবাসী মজিবর রহমান দীর্ঘদিন ধরেই শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সোনা চোরাচালানের কারবারে যুক্ত। গত ২৫ জুলাই  শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কৌশলে ৪টি সোনার বার ও ২টি চুড়িসহ আটক হয় সৌদি প্রবাসী মজিবর রহমান। বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) তার কাছ থেকে ৫১৭ গ্রাম সোনা জব্দ করে। মোজার ভেতর ৪ পিস সোনার বার লুকিয়ে রাখে মজিবর। বিশেষ ক্ষমতা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা করে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ।

সূত্র জানায়, মজিবর রহমান গ্রেফতার হলেও তার চক্রের চোরাকারবার বন্ধ নেই। তার স্ত্রী এখন এই কারবারে নেতৃত্বে দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত শুল্ক ফাঁকি দেয়ে সোনা চোরাচালান করছে তারা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এভসেক সদস্যদের সহায়তা নিচ্ছে এই চক্র।

১৬ সেপ্টেম্বর গালফ এয়ারের জিএফ ২৫০ ফ্লাইটটি ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকায় অবতরণ করে। সেই ফ্লাইটে মজিবর চক্রের সদস্যরা সৌদি প্রবাসী কাদের, তোফাজ্জল ও জাকির হোসেনের কাছে ২ পিস করে সোনার বার দিয়ে দেয়। ফ্লাইট থেকে নামার পর বাকিদের কাছ থেকে ৪টি সোনার বার নিয়ে নেয় সেই ফ্লাইটের আরেক যাত্রী সৌদি প্রবাসী মো. জাকির হোসেন (২১)। ৬ পিস গোল্ড বার নিয়ে যাত্রী জাকির হোসেন এভসেক সদস্য মো. নাহিদ মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরবর্তীতে এভসেক সদস্য নাহিদ মিয়ার যাত্রীকে বোর্ডিং ব্রিজ এলাকা স্মোকিং রুমে যেতে বলে। সেখানেই যাত্রীর কাছ থেকে নিজের কাছে সোনার বার নেয় এভসেক সদস্য নাহিদ মিয়া।

তবে পুরো ঘটনায় নজর রাখছিলো বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের গোয়েন্দা দল। ৬টি সোনার বার বিমানবন্দরের বাইরে নেওয়ার সময় হাতেনাতে এভসেক সদস্য নাহিদ মিয়াকে  আটক করে তারা। একই সঙ্গে যাত্রী জাকির হোসেনকেও আটক করে আর্মড পুলিশ।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সৌদি প্রবাসী মো. জাকির হোসেন (২১) ৬টি গোল্ডবার স্মোকিং রুমে এভসেক সদস্য নাহিদ মিয়াকে দিয়ে দেয়। সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে সেই ৬টি বার নিয়ে নাহিদ ১ নম্বর বহির্গমন টার্মিনালের ৬ নম্বর গেট দিয়ে বের হওয়ার জন্য আসে। তবে সেখান থেকে তাকে আটক করে আর্মড পুলিশ সদস্যরা। পরবর্তীতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এপিবিএন অফিসে নিয়ে আসা হয়। সোনার বারের বিষয়ে কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি নাহিদ। অন্যদিকে যাত্রী জাকির হোসেনকে সাড়ে ১১টার দিকে বিমানবন্দরের আগমনী ক্যানোপি-১ এর বাহির গেট থেকে আটক করা হয়।

আরও পড়ুন- শাহজালালে সোনা পাচারকালে প্রবাসী আটক