সংস্কার আসছে আনসারে

বেশ কিছু ক্ষেত্রে আনসারে সংস্কার বা পরিবর্তন আসছে। তবে একসঙ্গে নয়, পর্যায়ক্রমেই এসব পরিবর্তন আনা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। আনসারকে অন্য বাহিনীর সহায়ক শক্তির পরিবর্তে আলাদা সত্ত্বা দেওয়ার কাজও চলছে। বিশেষ আনসার ও হিল আনসারকে ব্যাটালিয়ন আনসারে সংযুক্ত করতে সরকারি আদেশ (জিও) জারি করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আনসার ব্যাটালিয়ন সদর দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এরইমধ্যে বিদ্রোহ ও প্ররোচনাসহ বিভিন্ন অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ২০২৩ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। জাতীয় সংসদের মাধ্যমে শিগগিরই এটাকে আইনে পরিণত করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ২০২৩ এর খসড়া চুড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত আইনে বিদ্রোহসহ গুরুতর অপরাধের বিচারে একটি বিশেষ আদালত বা স্পেশাল আনসার ব্যাটালিয়ন কোর্ট গঠন ও লঘুদণ্ড কিংবা অভ্যন্তরীণ অপরাধ বিচারে সামারি আনসার ব্যাটালিয়ন কোর্ট গঠনের বিধান রাখা হয়। মহাপরিচালক (ডিজি) ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) এ দুটি আদালতের নেতৃত্ব দিবেন। যখন প্রয়োজন হবে তখনই বিধি অনুযায়ী এসব আদালত গঠন করে সংশ্লিষ্ট সদস্যের বিচার করা যাবে। এবারের সংশোধিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৪৩৯ জন বিশেষ আনসার ও ৬০০ হিল আনসারসহ মোট ১০৩৯ জনের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৯৭২ জন। অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ থেকে নির্ধারণ করা বেতন গ্রেড অনুযায়ী ব্যাটালিয়ন আনসারের শূন্য পদে স্থায়ীকরণ বা নিয়মিত করণে সাময়িক মঞ্জুরীকৃত চিঠি আসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেই অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কে এম সালাহউদ্দিন স্বাক্ষরিত সরকারি আদেশের (জিও) কপি আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হয় গত ১১ এপ্রিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশেষ আনসার ও হিল আনসার হিসেবে কর্মরত কয়েকজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ বা নিয়মিতকরণের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও নির্দেশনা ছিল। কিন্তু এখনও বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও হতাশা বিরাজ করছে। জিও বা সরকারি আদেশ জারির পরও কোনও কোনও মহল থেকে আপত্তি আসছে। যা অমানবিক।

তারা জানান, বিশেষ আনসার সদস্যরা গত ২৩ বছর এবং হিল আনসার সদস্যরা প্রায় ৩৭ বছর ধরে অস্থায়ীভাবে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কাজ করে আসছেন। ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আনসার একাডেমিতে আনসার সদস্যদের এক দরবারে বিশেষ আনসার ও হিল আনসার সদস্যদের চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়টি মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উত্থাপন করার নির্দেশনা দেন সংশ্লিষ্টদের। বিশেষ আনসার ও হিল আনসারদের চাকরি স্থায়ীকরণে চাকরি বিধিমালার নিয়োগনীতিতেও একবারের জন্য শর্ত শিথিল করে দেন রাষ্ট্রপতি। এরপরও তাদের  ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি আজও।

আনসার সদর দফতরের একটি আপত্তির বিষয়ে সর্বশেষ গত ২১ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জোসেফা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত আনসারের ডিজি বরাবর দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর পুনরায় একই প্রস্তাব নিয়ে পদ সৃজনের কার্যক্রম শুরু করা সমীচীন হবে না। হিল আনসার ও বিশেষ আনসার সদস্যদের স্থায়ী করণের জন্য নতুন ব্যাটালিয়ন গঠন করে পদ সৃজনের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়ক শক্তির পরিবর্তে আলাদা সত্ত্বা হিসেবে বিবেচনারও দাবি উঠেছিল। সেটিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়ক শক্তির পরিবর্তে আলাদা সত্ত্বা হিসেবে বিবেচনার একটি প্রক্রিয়া চলছে। তবে তার আগে আর্থিক সংশ্লেষ, আন্তঃবাহিনী সম্পর্ক, কর্মপরিধির বিস্তৃতি ইত্যাদি পর্যালোচনার জন্য আনসার ও ভিডিপি অধিদফতরে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিভাগের সহকারী পরিচালক ও জনসংযোগ মো. জাহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সবগুলো বিষয় বর্তমানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে। কবে নাগাদ কী বাস্তবায়ন হবে সেটাও তারাই বলতে পারবেন।

আরও পড়ুন-

আনসারে বিদ্রোহ করলে মৃত্যুদণ্ড

কাজ বেশি, বেতন ও সুযোগ কম সাধারণ আনসারের

ব্যাটালিয়নে যুক্ত হচ্ছে বিশেষ ও হিল আনসার

ব্যাটালিয়ন আনসার: চাকরি স্থায়ী হতেই কেটে যায় অর্ধযুগ