ডাইনি সন্দেহে বালুরঘাটে আদিবাসী মহিলা ও তাঁর ছেলেকে মারধর, বাড়ি পোড়ানোর হুমকি

একবিংশ শতকেও কুসংস্কার অব্যহত রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। বিভিন্ন জায়গায় ডাইনি অপবাদে প্রায়ই মারধরের অভিযোগ ওঠে। ফের ডাইনি অপবাদে এক মহিলা এবং তাঁর ছেলেকে মারধর করার অভিযোগ উঠল। ঘটনাটি ঘটেছে বালুরঘাট ব্লকের ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ শিবরামপুরের পশ্চিম চকইসমাইল গ্রামে। আক্রান্ত মহিলা এবং তাঁর ছেলে হলেন আদিবাসী। অভিযুক্তও আদিবাসী। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, গ্রামবাসীদের একজন তাঁদের মারধর করেছে। ঘটনায় তাঁরা থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: ডাইনি সন্দেহে আদিবাসী মহিলাকে নৃশংসভাবে খুন, ১১জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

কী ঘটেছিল?

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল বেশ কয়েক মাস আগে। তিনি অসুখে মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু, অভিযুক্তর ধারণা ছিল ওই মহিলার কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। তারপরেই ওই মহিলা এবং তাঁর পরিবারকে ডাইনি অপবাদ দেয় অভিযুক্তরা। সেই অপবাদ দিয়ে তাদেরকে নানাভাবে হেনস্থা করতে শুরু করেনল তারা। এমনকী তাঁদের প্রাণে মেরে ফেলা ও বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। অভিযোগ, শনিবার ওই মহিলা মাঠে ছাগল নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন রাম বাস্কে নামে এক ব্যক্তি ওই মহিলার উপর চড়াও হয় এবং তাঁকে মারধর করতে শুরু করে। মহিলার ছেলে খবর পেয়ে মাঠে গিয়ে মাকে উদ্ধার করতে গেলে সেও আক্রান্ত হয়।

পরে রবিবার ওই মহিলা প্রতিবেশীদের সহায়তায় স্থানীয় থানায় গিয়ে অভিযোগ জানান। তার ভিত্তিতে পুলিশ একটি মামলা রুজু করেছে। মহিলার অভিযোগ, রাম বাস্কে এবং তার পরিবার অনেকদিন ধরেই তাঁকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে হেনস্থা করছে। কেউ অসুস্থ হলে বা মারা গেলে, তাঁকে ডাইনি অপবাদ দিচ্ছে। এর আগেও ওই ব্যক্তি তাকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছে এমনকি বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। শনিবার তাকে একা পেয়ে মারধর করে ওই ব্যক্তি। এই ঘটনায় অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। যদিও ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি।দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তল জানিয়েছেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, মাস খানেক আগেই অন্ডালের দক্ষিণখণ্ড ডামারি বাঁধ আদিবাসী পাড়ায় এক বৃদ্ধকে ডাইনি সন্দেহে মারধর করার পাশাপাশি ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। শুধু তাই নয়, তাঁকে নগ্ন করে দেওয়া হয়েছিল এবং মলমূত্রও জোর করে খাওয়ানো হয়েছিল। শরীরের বিভিন্ন অংশে ছ্যাঁকা দিয়ে বাঁশ ও লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। সেই ঘটনায় পুলিশ ৩ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।