বিশ্বব্যাপী অপুষ্টির শিকার শিশুর এক-তৃতীয়াংশই দক্ষিণ এশিয়ায়: ইউনিসেফ

ইউনিসেফের ‘অপুষ্টি ও উপেক্ষার শিকার’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী অপুষ্টির শিকার শিশুদের এক তৃতীয়াংশই বাস করে দক্ষিণ এশিয়ায়। একইভাবে এ অঞ্চলে প্রতি পাঁচ জন নারীর মধ্যে একজনের ওজন কম এবং দুই জনের মধ্যে একজন রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। ইউনিসেফের গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলে মাতৃত্বকালীন অপুষ্টি সর্বোচ্চ মাত্রায় বিদ্যমান, সেসব অঞ্চলে অপুষ্টির শিকার শিশুর সংখ্যাও সর্বোচ্চ। তাই বিশ্বের অপুষ্টি ও রক্তস্বল্পতায় ভোগা কিশোরী ও নারীদের কেন্দ্র দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ। সংস্থাটি জানয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার অপুষ্টির এই আন্তপ্রজন্মীয় চক্র ভাঙার লক্ষ্যে নারীদের জন্য সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা আবশ্যক।

দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়ে ও নারীদের জন্য সঠিক পুষ্টি পরিচর্যা জোরদার করার লক্ষ্যে সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) নেপালের কাঠমান্ডুতে পুষ্টি বিষয়ক তিন দিনব্যাপী এক আঞ্চলিক সম্মেলনের সূচনা করেছে ইউনিসেফ। সম্মেলন থেকে এই আহ্বান জানান হয়।

ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক কার্যালয় আয়োজিত এই সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়া বিভিন্ন দেশ (আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা) থেকে সরকারি প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী, গবেষক, আইনবিদ ও অন্যান্য অংশীদাররা অংশগ্রহণ করছেন। আগামী তিন দিন বিশেষজ্ঞরা এই অঞ্চলের কিশোরী ও নারীদের পুষ্টি পরিস্থিতি নিয়ে আলচোনা করবেন; পাশাপাশি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মেয়ে ও নারীদের পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশের ক্ষেত্রে এই সংকট মোকাবিলার জন্য নতুন কার্যকরী সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হবে।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সঞ্জয় উইজেসেকেরা বলেন, ‘মেয়ে ও নারীদের পূর্ণ বিকাশ এবং জীবনে সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে সঠিক পুষ্টির ভূমিকা অপরিহার্য। একজন মায়ের পুষ্টির প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখা যায় তার সন্তানের ওপর। এ কারণেই দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়ে ও নারীদের অপুষ্টির বিষয়টির সমাধান ছাড়া শিশুদের অপুষ্টির সমস্যার সমাধান করা যাবে না। নারী ও শিশুদের পুষ্টির বিষয়টি যেন জাতীয় উন্নয়ন এজেন্ডার কেন্দ্রে থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশের সরকার শিশু ও নারীদের মধ্যে অপুষ্টি মোকাবিলায় সমন্বিত প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তবে এর অগ্রগতি খুব কম এবং একেক দেশের সাফল্য অর্জনের হার একেক রকম। তর ওপর করোনা মহামারি, অবিরাম ও ক্রমবর্ধমান সংঘাত এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ও বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য, খাদ্য ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ভেতরে পুষ্টি সেবাকে অন্তর্ভুক্ত করা গেলে সর্বাধিক সাফল্য নিশ্চিত করা যাবে। শুধু এইভাবে আমরা কিশোরী, অন্তঃসত্ত্বা এবং যেসব শিশুরা এখনও মায়ের বুকের দুধ খায় সেসব নারীদের অপুষ্টির সমস্যা মোকাবিলার পাশাপাশি তাদের শিশুদেরও অপুষ্টির সমস্যার সমাধান করতে পারি।’ কিশোরী ও নারীদের পুষ্টির পেছনে পর্যাপ্ত লোকবল ও বিনিয়োগ বরাদ্দ করার জন্য তিনি দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

এই আঞ্চলিক সম্মেলনে ইউনিসেফ দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলোর প্রতি কয়েকটি আহ্বান জানায়। এর মধ্যে আছে– ফলমূল, শাকসবজি, ডিম, মাছ, মাংস ও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার (ফরটিফাইড খাবার) সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাপ্তির সুযোগ বাড়ানো, পুষ্টিহীন ও অস্বাস্থ্যকর অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং পানীয় থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য নীতিমালা এবং বাধ্যতামূলক আইনি পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা, গর্ভধারণের আগে ও গর্ভধারণের সময় এবং সন্তানকে দুধ খাওয়ানোর সময় অপরিহার্য পুষ্টি পরিষেবাগুলো প্রাপ্তির সুযোগ বাড়ানো, মানবিক সংকটময় সময়েও এই পরিষেবা নিশ্চিত করা, যেকোনও অনিশ্চিত পরিস্থিতি ও মানবিক সংকটসহ সোশাল ট্রান্সফার কর্মসূচিগুলোতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ বাড়ানোর এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নকে শক্তিশালী করে– এমন জেন্ডার রূপান্তরমূলক নীতিমালা ও আইনি ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা।