বিসিবিকে তানজিম সাকিব, ‘আমি নারীবিদ্বেষী নই, আমার মাও তো একজন নারী’

নারীবিদ্বেষী মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তানজিম হাসান সাকিব। বিশেষ করে কর্মজীবী নারীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা তার পোস্ট নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে যায়। প্রবল সমালোচনার পর তার সঙ্গে কথা বলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সংশ্লিষ্টদের কাছে নিজের পোস্টের দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন যুব বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার। এসব পোস্টের জন্য অবশ্য কোনও শাস্তি পাচ্ছেন না বাংলাদেশের জার্সিতে একটি ওয়ানডে খেলা এই ক্রিকেটার। তার দাবি, তিনি নারীবিদ্বেষী নন।

বিসিবির পরিচালক ও ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বলেছেন, ‘ক্রিকেট বোর্ড থেকে, ক্রিকেট অপারেশনস থেকে তানজিম সাকিবের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। ওর সাথে আমরা কথা বলেছি। মিডিয়া কমিটি থেকেও তার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাকে আমরা অবগত করেছিলাম।’

জালাল ইউনুস আরও বলেছেন, ‘যেসব পোস্ট ফেসবুকে এসেছে… তার বক্তব্য হচ্ছে কাউকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে এরকম পোস্ট দেওয়ার কথা না। সে যেসব পোস্ট দিয়েছে, তার নিজ থেকে দিয়েছে, কাউকে উদ্দেশ্য করে না। এটা দেওয়ার পর কারও যদি মনে আঘাত লেগে থাকে সেটার জন্য সে দুঃখিত।’

এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হয় তানজিম সাকিবের। ভারতের বিপক্ষে দুই উইকেট নিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। প্রশংসায় ভাসার মধ্যে তার ফেসবুকের কিছু পুরোনো বিতর্কিত পোস্টও ভাইরাল হয়ে পড়ে। যাতে কর্মজীবী নারীদের প্রতি তার বিষোদগার দেখা যায়।  

জুনিয়র সাকিব অবশ্য দাবি করেছেন তিনি নারীবিদ্বেষী নন। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যানকে তিনি এসব কথা বলেছেন। জালাল ইউনুস জানিয়েছেন, ‘একটা কথা এসেছে নারীদের ব্যাপারে। নারীদের ব্যাপারে যেসব পোস্ট ছিল, “সে বলেছে আমি এটার দায় নিচ্ছি। আমি নারীবিদ্বেষী নই।” এই দাবি পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে। সে বলেছে, “আমার মা একজন নারী। আমি কোনোদিনও নারীবিদ্বেষী হতে পারি না।” এটা হচ্ছে তার বক্তব্য। আমরা তাকে সতর্ক থাকার জন্য বলেছি। ভবিষ্যতে যদি কোনও পোস্ট দেয়, সেটা বোর্ড থেকে মনিটর করা হবে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘সে (তানজিম) দুঃখিত বলেছে। আমরা সতর্ক করেছি ভবিষ্যতে যাতে এমন পোস্ট না দেওয়া হয়। সে বলেছে এ ধরনের পোস্ট থেকে বিরত থাকবে। সে যেহেতু ভুল স্বীকার করেছে। সে একটা বড় কথা বলেছে, সে নারীবিদ্বেষী নয়। সে বলেছে, “আমার মা-ই তো একজন নারী। আমি কীভাবে নারীবিদ্বেষী হতে পারি।” 

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের গাইডলাইন অনুযায়ী, এসব বিদ্বেষমূলক আচরণে ক্রিকেটারদের তদন্ত হওয়ার কথা। তদন্তে অভিযুক্ত প্রমাণিত হলে শাস্তিও অনিবার্য। কিন্তু তানজিম সাকিব কেবল ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে গেলেন। বিসিবি তানজিম সাকিবকে কেবল সতর্ক করেই দায়িত্ব শেষ করেছে। যদিও বিসিবি জানিয়েছে, ভবিষ্যতে শুধু তানজিম সাকিব নয়, সব ক্রিকেটারের দিকে বাড়তি নজর দেবেন তারা।

এ ব্যাপারে জালাল ইউনুস বলেছেন, ‘আমরা তাকে পর্যবেক্ষণ করবো। তার পরিবারও এ ব্যাপারে খুবই শঙ্কিত। এমন পরিস্থিতি তারাও আশা করেনি। তারাও দুঃখিত। সামনে বিশ্বকাপ আছে, সে তরুণ ছেলে, বয়স কম। এ জন্য তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে ওরকম কিছু যদি করে, তাহলে আমরা পর্যবেক্ষণ করবো এবং অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।’

২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেছিলেন তানজিম সাকিব। ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়।’

তানজিমের আরেকটি পোস্ট ছিল এমন, ‘ভার্সিটির ফ্রি-মিক্সিং আড্ডায় অভ্যস্ত মেয়েকে বিয়ে করলে আর যাই হোক সন্তানের জন্য একজন লজ্জাশীলা মা দিতে পারবেন না।’