Ganesh Chaturthi: গণেশ উৎসবে জমজমাট কলকাতার সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির, কী কী হল এখানে

রণবীর ভট্টাচার্য

কলকাতার দুর্গাপুজোর যোগ্য দোসর বলা হয় মুম্বইয়ের গণেশ পুজোকে। ধারে, ভারে ও সম্ভ্রমের দিক থেকে আরব সাগর পারের গণেশ পুজো সত্যিই কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তবে চিরকাল যে এরকম চলবে এমনটাও নয়। খাস কলকাতার তথা পূর্ব ভারতের একমাত্র সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরে এবারের গণেশ পুজোয় জনসমাগম থেকে আড়ম্বর, অবাক করেছে অনেককেই। স্বয়ং সিদ্ধিবিনায়ক যেখানে বিরাজ করছেন, সেখানে আর চিন্তা কি!

কলকাতার থিম পুজোর সাথে কম বেশি সবাই ওয়াকিবহাল। কলকাতার মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে অবস্থিত শ্রী শ্রী সিদ্ধিবিনায়ক দেবস্থানম মন্দির বেশ ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায়। একদিকে রাম মন্দির, আর একদিকে বড়বাজার আর বাঙালির চিরধূসর আইকন শিবরাম চক্রবর্তীর বহু চর্চিত মেসবাড়ি। এই মন্দিরের সাথে থিম পুজোর একটা অদ্ভুত মিল রয়েছে। এখানে নিয়মিত শৃঙ্গার বদল হয়। তাই আজ সিদ্ধিবিনায়ক দর্শনের পর দুই দিন পরে এলে, মনে হতেই পারে, কি বদলে গেল! এটি মন্দির বলে, বিসর্জনের ব্যাপার নেই। তবে পাঁচদিন ব্যাপী গণেশ উৎসব কলকাতায় বিরল বটে। যারা বৃষ্টি বা ব্যস্ততায় বা ভিড় এড়াবার বিশ্বাসে অনুপস্থিত, তাদের জন্য মন্দির কমিটির সক্রিয় ওয়েবসাইট আছে, যেখানে বছরের যে কোন দিন, সব জায়গা থেকেই দর্শন করা যায়। এই বছর গণেশ চতুর্থীর দিন তিলধারণের জায়গা ছিল না বললেই চলে। ভিড় হাজার পঞ্চাশ কালো মাথা বললে, বাড়িয়ে বলা হবে না অবশ্যই।

সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরে গণেশ পুজোর আয়োজন

এখানে পুজো ছাড়াও বাড়তি পাওনা হল সবার জন্য প্রসাদ আর ভজন সন্ধ্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠান।

এই মন্দিরের ইতিহাসে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে আছে কলকাতার দুই প্রথিতযশা ব্যবসায়ীর ভালোবাসা। এই বছরে একদিকে যেমন গণেশ উৎসব চতুর্থ বছরে পদার্পণ করল, সেরকম একই সঙ্গে এই মন্দিরের সামাজিক প্রকল্পগুলো এগিয়ে চলেছে, নীরবে অথচ কার্যকরী ভূমিকা রেখে। ২০১৫ সালে সাবেক মল্লিক বাড়ির ভগ্নপ্রায় জমিদারবাড়ি আজ সুবিশাল অট্টালিকা, যেখানে একটি ইটের টুকরো ভেঙে ফেলা হয়নি। বর্তমানে এই মন্দিরে স্বাস্থ্য পরিষেবা, কর্মসংস্থান এবং দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্রও রয়েছে। একাধারে ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের দিয়ে ট্যালি, জিএসটি কোর্স করানো হয়, আবার সঙ্গে শেখানো হয় বিউটি থেরাপি, অ্যাপারেল ডিজাইনিং এর মত কোর্স। এছাড়া স্পোকেন ইংলিশ যত্ন সহকারে শেখানো হয় সব বয়সীদের, যেখানে সকলেই স্বাগত। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এখানে প্যাথলজির অন্তর্গত সব রকম রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে রক্তে শর্করা আছে কিনা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া রয়েছে অপটিমেট্রিসট এবং পোডিয়াট্রিষ্ট রয়েছে রক্তে শর্করা নির্ভর রোগের চিকিৎসার জন্য। হার্টের চিকিৎসার জন্য স্বল্পমূল্যে ইইসিপি চালু রয়েছে এখানে। এছাড়া ব্যাথা উপশমের জন্য আকুপাংচার ক্যাম্প করা হয় এখানে।

বলাই হয়, ভক্ত যেখানে, ভগবান যেখানে! তাই দিন দিন দূর দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসছেন এখানে। আশা করা যায় যে একদিন সিদ্ধিদাতার শহর হিসেবেও কলকাতার আলাদা পরিচয় তৈরি হবে।