চীনকে আটকে দেওয়ার খুশিতে ভাগ বসালো ‘দীর্ঘশ্বাস’

হুয়াংলং স্পোর্টস সেন্টার স্টেডিয়ামে ৩৭ হাজার দর্শকের সামনে চীনকে আটকে দিয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়ান গেমসে গ্রুপের শেষ ম্যাচে স্বাগতিকদের বিপক্ষে লড়াকু পারফরম্যান্স ছিল আশা জাগানিয়া। এমন ম্যাচে পয়েন্ট নেওয়ার পর আফসোসটা যেন বেড়ে দ্বিগুণ।  ইশ… আগের দুই ম্যাচে ভারত ও মিয়ানমারের বিপক্ষে যদি পয়েন্ট নেওয়া যেতো! তাহলে হয়তো নক আউট পর্বে নাম লেখানোর সুযোগ ছিল হাভিয়ের কাবরেরার দলের।

মাঠ থেকে হোটেলে ফেরার সময় তাই খুশির সঙ্গে আফসোসও বেশি হচ্ছে রহমত মিয়া-মিতুল মার্মাদের! যেই মিয়ানমার ও ভারতের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে এক গোলে, সেখানে চীন ভারতকে ৫-১ গোলে ও মিয়ানমারকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে।

আর আজ তো চোখে চোখ রেখে খেলে চীনকে আটকে দিলো বাংলাদেশ। তাই আফসোস ঝরলো অধিনায়ক রহমতের কণ্ঠে। আইস বাথ নেওয়ার শেষ পর্যায়ে বাংলা ট্রিবিউনকে রহমত বলেছেন, ‘দেখুন আজও আমরা ভালো খেলেছি। চীনের বিপক্ষে সবাই উজার করে খেলেছে। বল দখল থেকে শুরু করে সব জায়গাতে ওদের বিপক্ষে আমরা লড়াই করেছি। আমরা যে এখন বল পায়ে রেখে খেলতে পারি সেটাই প্রমাণ হয়েছে। আগের দুই ম্যাচ থেকে পয়েন্ট পেলে আমরা  হয়তো এখন নক আউট পর্বে যেতাম। আল্লাহ চাননি বলে তা হয়নি।’

এবার বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড় না পেয়ে কাবরেরাকে কিছুটা নতুনদের ওপর ভরসা রাখতে হয়েছিল। স্প্যানিশ কোচ চেয়েছিলেন মূল জাতীয় দলের জন্য পাইপ লাইন তৈরি হোক। চীনের এশিয়াডে অন্তত সেটা পেয়েও গেছেন ৩৭ বছর বয়সী কোচ। রহমত সেটাই  জানালেন, ‘কোচ চেয়েছিলেন গেমস থেকে পাইপ লাইনে খেলোয়াড় তৈরি করতে। আমার মনে এখানে সবাই নিজেদের পরীক্ষায় পাস করেছে। কোচও অনেকটা খুশি। সামনে এই দলটির খেলোয়াড়েরা আরও ভালো করবে।’

এশিয়াডে মিয়ানমার ও ভারত ম্যাচে নিজেদের ভুলে গোল হজম করতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রহমত বলছেন, ‘আমরা ওই দুই ম্যাচে তিন পয়েন্ট হারিয়েছি। প্রথমটা আত্মঘাতী ও পরেরটাতে পেনাল্টি থেকে। অথচ তা হওয়ার কথা ছিল না। ভালো খেলেও হারতে হয়েছে। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য বলতে পারেন।’

গত এশিয়াডে জামাল ভূঁইয়ার গোলে কাতারকে হারিয়ে নক আউট পর্বে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। সেই দলে ছিলেন রহমতও। দুই আসরের পার্থক্য করতে গিয়ে আবাহনী লিমিটেডের ডিফেন্ডার বলেছেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার অভিজ্ঞ খেলোয়াড় কম ছিল। অপেক্ষাকৃত তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে কাবরেরার অধীনে আমরা একটি দল হয়ে খেলার চেষ্টা করেছি। বিল্ডআপ ফুটবল খেলেছি। আগের চেয়ে দলের পারফরম্যান্স ভালো হয়েছে।’

আজ চীনের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে স্থানীয় দর্শকদের হাততালিও পেয়েছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ৮২ তম স্থানে থাকা দেশটির বিপক্ষে প্রায় সমান তালে খেলে প্রশংসাই প্রাপ্য তাদের। রহমত বলেছেন, ‘দর্শকরা আমাদের খেলায় খুশি। আমাদের পারফরম্যান্স সত্যি আজ ভালো হয়েছে। আমার ফেসবুক পেজে একটা পরিসংখ্যানও দিয়েছি। তাহলেই সব কিছু বুঝতে পারবেন। ওদের বিপক্ষে সত্যিকার অর্থে লড়াই করে পয়েন্ট পেয়েছি।’

দলের পারফরম্যান্সে গর্বিত কোচ কাবরেরা, ‘অবশ্যই এটা খুব ভালো পারফরম্যান্স এবং আমি খুশি। দল ও খেলোয়াড়দের জন্য ভালো লাগছে। কিন্তু আমি মনে করি এখনও আমরা এই টুর্নামেন্টে থাকতে পারতাম। আমরা শেষ ষোলোতে খেলার যোগ্য ছিলাম। আমরা টুর্নামেন্ট শেষ করলাম এক পয়েন্ট নিয়ে। দুটি গোল খেয়েছি, একটি পেনাল্টি আরেকটি আত্মঘাতী। আমরা তো আজ জিততেও পারতাম।’

সামনের মাসে রয়েছে বিশ্বকাপ বাছাই। মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচ। এশিয়াডের অভিজ্ঞতা সেখানে কাজে লাগানোর অপেক্ষায় সবাই। যেন দুটি ম্যাচে ভালোভাবেই উতরে যাওয়া যায়।