খুলনায় গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালসহ খুলনা জেলায় এ বছর ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের হার গত বছরের দ্বিগুণ। ২০২২ সালে খুলনায় ডেঙ্গু শনাক্ত ছিল ১৬০০ জন। আর মৃত্যু ছিল ১৬। এ বছরের নয় মাসে খুলনায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ২৮০০ জনের এবং মারা গেছেন ১৫ জন। ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত গত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত বছর ৬৬৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় এবং মারা যান আট জন। আর খুলনা সদর হাসপাতালসহ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গত বছর ৯৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত এবং ৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ বছর ১ অক্টোবর সকাল ৮টা পর্যন্ত খুমেক হাসপাতালে ১৮৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত এবং ১৩ জনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি, খুলনা সদর হাসপাতালসহ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক এবং উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৯৬৪ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত এবং দুই জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাগেরহাটের মানসুরা (৩০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে খুলনায় ১৬ জনের মৃত্যু হলো। এরমধ্যে খুমেক হাসপাতালে ১৩ এবং খুলনার অন্যান্য হাসপাতালে তিন জন মারা গেছেন।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. সুহাসরঞ্জন হালদার জানান, শনিবার এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এ হাসপাতালে ১ অক্টোবর সকাল ৮টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মোট ভর্তি ডেঙ্গু রোগী ৩৮ জন এবং ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬৬ জন। বর্তমানে হাসপাতালে অবস্থান করা মোট রোগীর সংখ্যা ১৩৬ জন। এ বছর সর্বমোট রোগীর সংখ্যা এক হাজার ৮৩৬ জন। এ সময়ে মারা গেছেন ১৩ জন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ হাসপাতালে খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫ জেলাসহ ২০ জেলার মানুষ চিকিৎসার জন্য আসেন। ২০২২ সালে এ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত ছিল ৬৬৬ জন এবং মৃত্যু হয় ৮ জনের।’

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. মো. সবিজুর রহমান জানান, খুলনা সদর হাসপাতাল, বেসরকারি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২০ জন, ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৫ জন। বর্তমানে হাসপাতালে থাকা রোগীর সংখ্যা ৬২ জন। ২০২৩ সালের সর্বমোট রোগীর সংখ্যা ৯৬৪ জন। মারা গেছেন ২ জন। গত বছর খুলনায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত ছিল ৯৩৪ জন এবং মারা গেছেন ৮ জন।

খুলনার নাগরিক নেতা অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘নগরীত মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়, কিন্তু মশার উৎপাত কমে না। রাতে কয়েল দিলেও মশা যায় না।’

এ বিষয়ে নগর পর্যায়ে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ কমিটির কমিটির সদস্য সচিব ডা. স্বপন কুমার হালদার বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেক রোগী বিভিন্ন জেলা থেকে খুলনা মহানগরীতে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাদের অনেকেই খুলনার ঠিকানা ব্যবহার করেন। প্রকৃতপক্ষে তারা খুলনা মহানগরী এলাকা থেকে আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগী নন।’

কেসিসির সহকারী কঞ্জারভেন্সি অফিসার আব্দুর রকীব বলেন, ‘ডেঙ্গুরোগের প্রাদুর্ভাব রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। এ রোগের জন্য দায়ী এডিস মশার বংশবিস্তার রোধ করতে হবে। খুলনা শহরে নির্মাণাধীন ভবনগুলোয় পরিষ্কার পানি জমে থাকতে দেখা যাচ্ছে। যেখানে এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে।’

খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘মশকনিধন কার্যক্রম অব্যাহত ও জোরদারের মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধ করতে হবে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঝোপ-ঝাড় থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করাসহ বর্জ্য ও পানি অপসারণ করার নির্দেশ দিয়েছি।’ সিটি মেয়র মহানগর এলাকায় ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগ বিস্তার রোধে মশক প্রজননের স্থানে সকাল-বিকাল ওষুধ স্প্রে করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।