বাবা-মা-সন্তানকে গলা কেটে হত্যা: কক্ষের জিনিসপত্র স্বাভাবিক ছিল

‘বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টার দিকে মোক্তারের সঙ্গে শেষ কথা হয় পরিবারের। এর পর থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অনেকবার চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করা যায়নি। পরে সর্বশেষ শনিবার রাতে আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছ থেকে হত্যার বিষয়টি আমরা জানতে পারি।’

কথাগুলো বলছিলেন আশুলিয়ায় নিজ কক্ষে বাবা-মা ও ১২ বছরের ছেলে সন্তানকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় নিহত বাবুল হোসেন ওরফে মোক্তারের বড় ভাই আয়নাল হোসেন। কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে বা কারও সঙ্গে কোনও শত্রুতা ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তার ভাই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে প্রায় ১৫ বছর ধরে আশুলিয়া এলাকায় বসবাস করছিলেন। তাদের তেমন কোনও শত্রু নেই। এ জন্য কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বা জড়িত থাকতে পারে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারেনি তিনি।

এদিকে, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তবে আশুলিয়া থানার এসআই জোগাব আলী জানান, ঘটনার পরপরই তিনি সেখানে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেন। নিহতদের সুরতহাল রিপোর্টও তৈরি করেন। নিহতদের কক্ষের জিনিসপত্র স্বাভাবিক পাওয়া গেছে। এমনকি মোবাইল ফোন দুটিও বিছানায় ছিল। তবে সেগুলো বন্ধ অবস্থায় ছিল।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর যেকোনও সময় এই ঘটনা ঘটেছে। হত্যাকারী তাদের পূর্ব পরিচিত এবং পরিকল্পিতভাবেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তাদের রান্নাঘরে বরফ জমানো মাংস পানিতে ভেজানো ছিল। এ ছাড়াও কক্ষে রাখা পাঁচটি চায়ের কাপ দেখে মনে হচ্ছে ঘটনার কিছু সময় আগে চা খাওয়ানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খাবারের মধ্যে চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ানোর পর তাদের হত্যা করা হয়।

নিহত বাবুলের বোন মনোয়ারার বেগম জানান, তার ভাইয়ের তেমন কোনও শত্রুতা ছিল না। থাকলে তাকে অবশ্যই জানাতেন। তিনি দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং কঠোর শাস্তি দাবি করেন।

প্রতিবেশী মামুন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘বাবুল পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় থাকলেও তাদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিল না। কয়েক মাস আগে তার ছেলের জন্ম দিনের দাওয়াতে গিয়েছিলাম। তবে ওই সময়ও তেমন কোনও কথা হয়নি তাদের সঙ্গে।’

এদিকে, ঘটনার পর পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের গোয়েন্দা শাখা, র‍্যাব, সিআইডির সদস্যরাও ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়াও রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঢাকার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানসহ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। এ সময় দ্রুত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের পাশাপাশি জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) আব্দুল্লাহ হিল কাফি বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত এই মামলায় কেউ আটক হয়নি, আমরা গুরুত্বের সঙ্গে ঘটনাটি তদন্ত করছি।’