জাবির বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদে ভাঙন, নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বিকালে সংগঠনটির একাংশের শিক্ষকরা মিলে নতুন সংগঠন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদের’ ঘোষণা দিলে ভাঙনের বিষয়টি সামনে আসে।

নতুন সংগঠনের কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) অধ্যাপক মোতাহার হোসেনকে। সদস্য সচিব করা হয়েছে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক খো. লুৎফুল এলাহীকে। এছাড়া ৯ সদস্য বিশিষ্ট এই আহ্বায়ক কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) অধ্যাপক আইরিন আক্তার, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মালিহা নার্গিস আহমেদ, ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) সহযোগী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ সহযোগী অধ্যাপক শামীমা নাসরীন জলি, ইতিহাস বিভাগ সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা পারভীন ও জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ সহযোগী অধ্যাপক আমিনা ইসলাম।

আত্মপ্রকাশের পর নতুন শিক্ষক সংগঠনের নেতারা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ায় আমরা সবাই আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর কতিপয় সুবিধাবাদী শিক্ষকের ইন্ধনে আওয়ামীপন্থি জ্যেষ্ঠ অনেক শিক্ষককে আস্থায় না নিয়ে উপাচার্যের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে গত বছরের ১১ অক্টোবর বিতর্কিতদের দিয়ে সংগঠনটির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি নিজের ব্যক্তি ও সুবিধাবাদী গোষ্ঠী স্বার্থ হাসিলে সংগঠনটিকে ব্যবহার করতে তার চরম স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত এক বছরে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে উপাচার্য ভীষণভাবে বিতর্কিত হয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাইরে আমাদের দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। একই সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলে তিনি সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতির নির্বাচনি বোর্ডে যোগ্য ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের বাদ দিয়ে একাডেমিক ইথিকস ও পেশাদারিত্বের অভাব দেখিয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সম্প্রতি বেশ কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে অনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার, উপাচার্য পদ ও সরকারের জন্য ভীষণ অসম্মানজনক ও বিব্রতকর।

এতে উল্লেখ করা হয়, যাদের কখনও জাতীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি তারাই তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য উপাচার্যকে ক্রীড়নকে পরিণত করেছে। সর্বোপরি বিশেষ সুবিধাবাদী গোষ্ঠী ও উপাচার্যের এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ড জাতীয় অঙ্গনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ও বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে ও করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থে সরকার ও দলের ভাবমূর্তি উন্নয়নে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মূলধারার একটি শিক্ষক সংগঠন গঠন করা অপরিহার্য হয়ে পড়ায় ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ নামে শিক্ষক সংগঠন গঠন করেছি।

এদিকে নতুন সংগঠন গঠনের পর পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন নেতারা। আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকের কাছে নির্মোহভাবে উপস্থাপন করতে চাই। এই নতুন সংগঠন নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। আসন্ন সিনেট নির্বাচনে সকলের সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করছি।

নতুন সংগঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, আমরা সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বসবো। তারপর এ বিষয়ে কথা বলবো।

এ বিষয়ে জানতে বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের পৃষ্ঠপোষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পেলে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের নতুন সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু-আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ গঠন করেন। যার বর্তমান নাম ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’। তবে গত বছর অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম তার দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব শেষ হলে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নূরুল আলম উপাচার্যের দায়িত্ব পান। উপাচার্যের দায়িত্বে এসে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের প্রশাসনে যেসব শিক্ষক বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন তাদের স্থলে নতুনদের স্থলাভিষিক্ত করতে শুরু করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এছাড়া গত বছরের ১১ অক্টোবর উপাচার্যের পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। একমিটিতে আওয়ামীপন্থি জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রাধান্য দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন নতুন দল গঠন করা শিক্ষকরা। এছাড়া গত সোমবার (২ আগস্ট) রাতে সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনকে কেন্দ্র বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ থেকে প্যানেল ঘোষণা করা হলে সেখানেও এই শিক্ষকদের রাখা হয়নি বলে জানা যায়।