Tmc Mgnrega Protest: দলের ‘সেকেন্ড লিডারশিপ’ তৈরি! দিল্লি পর্বে অভিষেক কি তা প্রমাণ করতে পারলেন?

চিরঞ্জীব পাল

কথাটা বাংলায় কান পাতলেই শোনা যেত, ‘মমতা না থাকলে তৃণমূল দলটাই উঠে যাবে।’ পঞ্চায়েত ভোটের আগে শেষ হওয়া ‘নবজোয়ার যাত্রা’ থেকে সেই কথা কিছুটা ফিকে হতে শুরু করেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামের আগে সাংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে দলের ‘সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’ শব্দবন্ধটি। কারণ, ওই কর্মসূচি একক ভাবে পরিচালনা করেছেন অভিষেক। রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ তিনি পদযাত্রা করেছেন। তাবুতে রাত কাটিয়েছেন। পঞ্চায়েত ভোটে লড়াইয়ের দিশা দিয়েছেন কর্মীদের। ‘বেচাল’ কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ব্যবস্থা নিয়েছেন। এই নবজোয়ার যাত্রা পর্বে কয়েকবার হাজির ছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েকটি সভায় তিনি বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে শেষ হওয়া দিল্লির কর্মসূচির নেতৃত্বে আগাগোড়া অভিষেক। দলের সভানেত্রী কালীঘাট থেকে নজর রেখেছেন। মঙ্গলবার রাতে পুলিশি হেনস্থার প্রতিবাদ জানিয়েছেন এক্স পোস্ট (সাবেক টুইটার) করে। প্রশ্ন হল দিল্লি পর্বে কি অভিষেক প্রমাণ করতে পারলেন, তৃণমূলের ‘সেকেন্ড লিডারশিপ’ তৈরি? দিল্লিতে ‘ভাইপোর’ ভূমিকা দেখে অশ্বস্ত হলেন কি ‘পিসি’?

২১ জুলাই শহিদ সমাবেশের মঞ্চ থেকে দিল্লি অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই কর্মসূচিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও থাকার কথা ছিল। কিন্তু বিদেশ থেকে ফিরে হাঁটুর সমস্যার জন্য তিনি চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি বাড়িতে রয়েছেন। তাঁর হাঁটা চলার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ রয়েছে। চিকিৎসকরা তাঁকে দশ দিন বাড়িতে থাকতে বলেছেন। তাই তিনি দিল্লির কর্মসূচিতে হাজির হতে পারেননি। তবে একথা বলাইবাহুল্য যে, প্রতি মূহূর্তে তাঁর নির্দেশ, পরামর্শ পেয়েছেন অভিষেক। এ সব সত্বেও যে ভাবে অভিষেক কর্মসূচিকে নেতৃত্ব দিলেন, এগিয়ে নিয়ে গেলেন, তাতে বলাই যেতে পারে ‘সেকেন্ড লিডারশিপ’ পেয়ে গিয়েছে তৃণমূল।

দিল্লিতে আসা আন্দোলকারীদের গায়ে যাতে পুলিশ হাত না দেয় তার জন্য হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘বাংলা থেকে আসা একজন জবকার্ড হোল্ডারদের গায়ে হাত তো ছেড়ে দিন যদি আঁচড়ও পড়ে তা হলে মনে রাখবেন কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক প্রতিনিধিকে, বিজেপি-র বহু নেতা কর্মীকে কিন্তু বাংলায় থাকতে হয়। বিজেপি যে ভাষা বোঝে সেই ভাষাতেই উত্তর দেব।’ আবার বক্তৃতার শেষে ‘পিসি’র মতনই দলের-কর্মী সমর্থকদের অনুরোধ করেছেন নিজের অস্থায়ী আস্তানায় ফিরে যেতে। স্লোগান দিয়েছেন সভায় আগত জনতাকে সঙ্গে নিয়ে।

মন্ত্রককে দেখা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন। কিন্তু তিনি দেখা না করে চলে যান। কৃষিভবনে মন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করে সেখানে ধর্নায় বসে পড়েন অভিষেক এবং তাঁর সঙ্গে আসা অন্যান্য তৃণমূল সাংসদ ও বিধায়করা। পুলিশ টেনে হিঁচড়ে তাঁদের সরিয়ে দেয়। মুখার্জি নগর থানায় নিয়ে যায়। থানা থেকে বেরিয়ে অভিষেক হুঁশিয়ারি দেন এই আন্দোলন চলবে। এই হেনস্থার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন তিনি। এক কথায় বলা যায়, এত বড় আন্দোলনের নেতৃত্ব এই প্রথম একক ভাবে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রশ্ন হল তৃণমূল কংগ্রেস তো দিল্লিতে ‘সেকেন্ড লিডারশিপ’ পেল, বাংলা কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুঁজে পেল? ৩৪ বছরের বাম জামানার শেষের দিকে ক্ষমতার দম্ভ, দাপাদাপি– এ সবের থেকে মুক্তি চেয়েছিল বাংলা। বেছে নিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তাঁর কথা, আটপৌরে ভঙ্গির সঙ্গে একাত্ম বোধ করেছিল গ্রাম বাংলা। বিশেষ করে মহিলারা। ধুতিপরা ‘পলিসড’ বামবাবুদের দূরে ঠেলে দিয়ে তাঁকেই বেছে নিয়েছিল। সে জায়গায় কি পৌঁছতে পারলেন অভিষেক?

ঝাঁ চকচকে চারতলা বাড়ি, লিপস অ্যান্ড বাউন্স, ইডি-র ডাক, রাজ্যে দলের ক্ষমতায় থাকা, এ সব চাপ নিয়েই এগোতে হবে অভিষেককে। এর মধ্যে চোরা স্রোতের মতো বইছে দলের মধ্যে অন্তর্বিরোধ। যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তার সামনে খুব সহজেই বিনীল হয়ে যায়। পারবেন কি অভিষেক এই সব ‘হার্ডেলস’ টপকে বাংলা জনতার আর্শীবাদে তৈরি সোনার মেডেলটি গলায় পরতে?