বন্যা বিধ্বস্ত সিকিমে এখনও পর্যন্ত ৩৮ জন মৃত, নিখোঁজ বহু, দেহ ভেসে উঠছে

সিকিমে বেড়াতে না পেরে আতঙ্ক নিয়ে বাড়ি ফিরলেন বহু পর্যটক। কলকাতা–সহ রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে অনেক পর্যটকই উত্তর সিকিমের সেই দুর্ঘটনাস্থল থেকে আগে ঘুরে এসেছেন। অনেকের এবার যাওয়ার কথা ছিল। আবার অনেকে গিয়ে এখন তাঁরা নিখোঁজ। ঝাড়গ্রামের একই পরিবারের পাঁচজন সদস্য এখনও নিখোঁজ। কিন্তু বড় বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে। তাই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে কেউ আবার ফিরে এলেন। তিস্তার ভয়ালরূপ আর পাহাড়ের যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে তা সহজে ভোলার নয়। আর এই মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং প্রকৃতির ভয়াবহতায় ৩৮ জন এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন এবং ৭৮ জন এখনও নিখোঁজ।

এদিকে বিপর্যস্ত সিকিমে সময় যত গড়াচ্ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে ধ্বংসের ছবি। চারিদিকে শুধুই হাহাকার। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। বাড়ছে আতঙ্ক। ২৪ ঘণ্টা পরেও নামছে ধস। আর তার জেরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক রাস্তা। চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী খরস্রোতা তিস্তায় জোরকদমে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনীর ক্যাপ এখানে ভেসে গিয়ে ২৩ জন জওয়ান নিখোঁজ হন। তাঁদের কারও মৃতদেহ এদের মধ্যে আছে কিনা তা জানা যায়নি। সিকিম প্রশাসন সূত্রে খবর, বিপর্যয়ে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজনের। মেঘভাঙা বৃষ্টি হয় উত্তর সিকিমের লোনক হ্রদের উপর। তার জেরে ফেটে যায় লেক। হুড়মুড়িয়ে জল নেমে আসে তিস্তায়। তখন থেকেই চলে ধ্বংসলীলা।

অন্যদিকে তিস্তার জল যত নেমে এসেছে তত দেহ ভেসে উঠেছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়। গাজলডোবা, ময়নাগুড়ি, কোটওয়ালি, কুচলিবাড়ি, হলদিবাড়ি ও মিলনপল্লি এলাকায় একাধিক দেহ উদ্ধার হয়। আবার বাংলাদেশের গালিবান্ধায় নানা মৃতদেহ ভেসে ওঠে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে লাচেন এবং লাচুংয়ে প্রায় ৩ হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিকিমের মুখ্যসচিব বিজয় ভূষণ পাঠক বলেন, ‘‌৭০০ থেকে ৮০০ গাড়িচালক আটকে রয়েছেন। ৩,১৫০ জন মোটরসাইকেল আরোহীও আটকে বিপর্যস্ত এলাকায়। সেনা এবং বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে সবাইকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন:‌ স্যুটকেসের মধ্যে পড়ুয়ার দেহ, অপহরণ করে খুনের অভিযোগ উঠল নিউটাউনে গ্রেফতার ২

আর কী জানা যাচ্ছে?‌ সমতল থেকে সিকিমে যাওয়ার ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক জলের তোড়ে ভেঙে গিয়ে বিচ্ছিন্ন এখন। তবে আলগাড়া–পেদং–লাভা–গরুবাথান হয়ে সমতলে আসা যাচ্ছে। সিকিম পুলিশের ডিআইজি তাশি ওয়াঙ্গেল বলেন, ‘‌১০ নম্বর জাতীয় সড়কের মেতামতের কাজ চলছে। মাল্লি, বুরদাং, লিকুভিড়, শ্বেতীঝোড়ায় কাজ চলছে।’‌ পূর্ব সিকিমের হেল্প লাইন নম্বর ৮৭৫৬৯–৯১৮৯৫ এবং উত্তর সিকিমের হেল্প লাইন নম্বর ৮৭৫০৮–৮৭৭৪১। জাতীয় সড়ক সেভক দিয়ে সিকিমে যাওয়া ছাড়া গ্যাংটক পৌঁছনর আরও দু’টি বিকল্প পথ আছে। একটা বাগরাকোট, চুনাভাটি, লোলেগাঁও, লাভা, পেদং হয়ে রংপো রুট ধরে সিকিম। তবে ওই রাস্তাটি এখন বেহাল। দুই, আলগাড়া, পেদং, লাভা, গরুবাথান, ডামডিম হয়ে শিলিগুড়ি। এই রাস্তা দিয়েই পর্যটকদের পাহাড় থেকে নামিয়ে আনা হচ্ছে।