ছেলেদের খেলা দেখতে আমরা মেয়েরা ভীষণ মুখিয়ে থাকি

ছেলেদের ক্রিকেট দেখেই ক্রিকেটার হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। কারণ তখন মেয়েদের ক্রিকেট আমাদের দেশে সেভাবে শুরুই হয়নি। ছেলেদের ম্যাচ যখন দেখতাম, তখন আমারও খেলতে ইচ্ছা হতো। এছাড়া বিশ্বকাপ এলেই আমার ভাইয়াদের মধ্যে অন্যরকম একটা উৎসাহ লক্ষ করতাম। আমি তখন ছোট, সেভাবে বুঝতাম না। বড় ভাইয়া এবং কাজিনরা উৎসব করে খেলা দেখতো। বাসায় মেয়েরাও এই উৎসবে শামিল হতো। ক্রিকেট বরাবরই আমাদের বাসায় উৎসব এনে দেয়, সেখানে বিশ্বকাপ তো অন্যরকম বিষয়।

ছোটবেলার বিশ্বকাপের স্মৃতি তেমন মনে নেই। তবে ২০১৫ বিশ্বকাপের কথা খুব মনে পড়ে। আমরা প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেললাম। সেই বছর ক্যাম্পে ছিলাম। সবাই মিলে যেন খেলা দেখতে পারি, ক্রিকেট বোর্ড আমাদের ব্যবস্থা করে দিলো। ওই বিশ্বকাপে অনেক আনন্দ করেছিলাম, অনেক খুনসুটির স্মৃতিও আছে।

বাংলাদেশের যে দলটা এখন আছে, আমি মনে করি দারুণ ব্যালেন্সড। অন্তত সেমিফাইনাল খেলার শক্তি আর সামর্থ্য আছে। এখন শুধু দরকার এই বিশ্বাস– আমরা শিরোপা জিততে পারি। এই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই তো বাংলাদেশ ওয়ানডেতে বদলে গেছে।
 
উপমহাদেশের কন্ডিশনে ফেবারিট ভারত ও বাংলাদেশ। ভারতে বিশ্বকাপ হচ্ছে, বাংলাদেশের তুলনায় উইকেটে কিন্তু খুব বেশি তফাত নেই। আমরা যেহেতু এসব উইকেটে অনেক ভালো খেলি, সেহেতু কেন সেমিফাইনাল খেলবো না? এশিয়ার বাইরের দেশগুলো এখানে স্ট্রাগল করবে। ফলে অবশ্যই বাংলাদেশের সম্ভাবনা আছে সেমিফাইনালে যাওয়ার। এছাড়া ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশ অনেক শক্ত প্রতিপক্ষ। আমাদের দলে সব ধরনের বৈচিত্র্য আছে। নতুন যারা আছে, তারা ভালো করছে। এর বাইরে সিনিয়ররাও ভালো করছেন। স্কিলের দিক থেকে বলবো, আমরা অনেক ভালো অবস্থানে আছি। এখন কেবল বাস্তবায়নের পালা।

ইচ্ছা থাকলেও ভারতে গিয়ে মাঠে বসে বাংলাদেশের কোনও ম্যাচ দেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যখন বিশ্বকাপ চলবে, তখন পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের খেলা। তবে ছেলেদের খেলা দেখতে আমরা ভীষণ মুখিয়ে থাকি। অনুশীলন সেশন থাকলেও ফাঁকে ফাঁকে ম্যাচ দেখি। অবসর থাকলে তো কথাই নেই, সিনেমা দেখতে গেলে যেরকম আয়োজন করা হয় তেমনটা করি। সবাই মিলে একসঙ্গে খেলা দেখার জন্য পুরো ঘর সাজানো হয়, নিচে ম্যাট বিছিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়। খেলা দেখতে বসার আগে বিভিন্ন ধরনের খাবার আইটেম সাজানো থাকে। আমরা প্রত্যেকেই বেশ উপভোগ করি। প্রতিটি ওভারেই আমাদের মধ্যে প্রেডিকশন হয়, আলোচনা হয়। সব মিলিয়ে দারুণ উপভোগ্য সময় কাটে। আমাদের মধ্যে ২-৩ জন তো পুরাই পাগলা। যেমন-পিংকি আপু। অনুশীলনের সময়ও তার মন পড়ে থাকে ভাইয়াদের ম্যাচের দিকে। একটু পরপর কেবল বলে, দেখেন তো আপু কত স্কোর। কোন অবস্থায় বাংলাদেশ। আমাদের মতো মরিয়া সমর্থক পুরো দেশবাসীই। 

বিশ্বকাপের ম্যাচ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা খুব কঠিন। নির্দিষ্ট দিনে ভালো খেলা জরুরি, ওটা করতে পারলেই বাংলাদেশ অনায়াসেই জিতবে। আমার তালিকায় শ্রীলঙ্কা আছে, আমি ভারতকেও ধরবো। এর আগেও আমরা বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়েছি। পাকিস্তান আছে, আফগানিস্তান আছে। আমি মনে করি, এশিয়ার চারটা দলের তিনটিকে অন্তত বাংলাদেশের হারানো উচিত। 

অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারলে খুবই ভালো হয়। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার ভিন্ন হিসাব, ওরা শক্তির দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। এছাড়া কোয়ালিফায়ার খেলে আমাদের প্রতিপক্ষ হয়েছে নেদারল্যান্ডস। তাদের বিপক্ষে জয় ধরতেই হবে। তাদের ছোট করছি না, তবে শক্তি-সামর্থ্যের বিচারে বাংলাদেশ তাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে।

ক্রিকেট দলীয় খেলা হলেও বাংলাদেশের তিন জনের ওপর বিশেষ আস্থা রাখতে চাই। প্রথমে অবশ্যই সাকিব আল হাসান। তিনি গেম চেঞ্জার। লুকিং ফরওয়ার্ড টাইপ আছেন তাওহীদ হৃদয়। আরেকজন লিটন দাস। তারা যদি ম্যাচে প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স করতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশের ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।

বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৌড়ে প্রথমেই রাখবো বাংলাদেশকে। এরপর ভারত কিংবা অস্ট্রেলিয়া। আমরা যদি ক্যালকুলেশন করে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে এই ফল অসম্ভব নয়। দলে সাকিব ভাইয়ের মতো খেলোয়াড় আছে। তার নেতৃত্বে খেলবে দল। তরুণরাও ভালো করছে। সব মিলিয়ে আমাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এটাই সঠিক সময়। সেমিফাইনাল যদি খেলি, তাহলে ফাইনাল কেন নয়! আশা করি সবকিছু ব্যাটে-বলে মেলাতে পারবে আমাদের ক্রিকেটাররা। আশা করি, বাংলাদেশ এবার সবার প্রত্যাশা পূরণ করবে।

লেখক: নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, ছবি: সাজ্জাদ হোসেন