জলরঙে আঁকা কলকাতা! শরতেও শহর ভিজিয়ে দিয়ে দর্শকের মন জয় শিল্পী অবনিশ ত্রিবেদীর

রণবীর ভট্টাচার্য

অবনিশ ত্রিবেদী। আদ্যোপান্ত চল্লিশ ছুঁই ছুঁই কলকাতার যুবক। তার শরীর ও মননে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রয়েছে জলরং আর কলকাতা। আদিত্য চোপড়া, লিয়েন্ডার পেজ, ইমতিয়াজ আলি থেকে শুরু করে অনেকেই তার ফ্যান আবার পেট্রন ও বটে। প্রথাগত আর্ট কলেজের ছাপ নিয়ে তার বায়োডাটায়, কিন্তু তুলির টানে জ্যান্ত করে দিতে পারেন যে কোন মুহূর্ত। শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে সেই তরুণ তুর্কির কলকাতা নিয়ে ছবির প্রদর্শনী হয়ে গেল। প্রদর্শনীর পোশাকি নাম ‘পেন্টস অ্যান্ড স্ট্রোকস’।

মধ্য কলকাতায় বড় হওয়া অবনিশের আঁকা জুড়ে রয়েছে কলকাতা আর আশি আর নব্বইয়ের দশক। তাই কখনও কলেজ স্ট্রিট, কখনো ডালহাউসি উঁকি দেয় গোল্ড স্পট বা হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি নিয়ে। বারবার করে মাঝরাস্তার ক্যানভাসে আসে ট্রাম, হাতে টানা রিকশা আর সিপিআইএম এর কাস্তে হাতুড়ি চিহ্ন। জলরং আর অ্যাক্রিলিকে সিদ্ধহস্ত অবনিশ ত্রিবেদী সহজ বিচরণ করেন কলকাতার লোডশেডিং এর সময়কে। আবার হঠাৎ করেই যেন দেখা দিয়ে দেয় শাহরুখ খানের পরদেশ এর পোস্টার কিংবা অতীত ছুঁয়ে ফেলা হাওড়া ব্রিজ।

অবনিশের ছবিতে এক রহস্যময় মহিলা, যার পিঠে ট্যাটু এবং সবসময়েই যেন আড়াল করে থাকা, দৃষ্টি আকর্ষণ করে দর্শকের। সেই মহিলা আসলে বাস্তব জীবনে ওর ছবির খুব ফ্যান। কিন্তু জনসমক্ষে তার ব্যাপারে এর চেয়ে বেশি বলতে চান না অবনিশ। এই রহস্য না হয় থাকুক, চায় সে।

একটু খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যে রঙের গভীরতা ব্যবহারের মধ্যে অদ্ভুত মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন অবনিশ। কেন কলকাতা? কেন দিল্লি, মুম্বাই, বারাণসী বা হায়দরাবাদ নয়? এই প্রশ্নের সহজ উত্তরে অবনিশ জানিয়েছেন, ‘আমি অনেক শহর ঘুরেছি। তবে কলকাতার মত শহর দেখিনি। এটি এমন এক আন্তর্জাতিক শহর যার পরতে পরতে রয়েছে আভিজাত্য, রোম্যান্স আর অদ্ভুত ভালোলাগা। আমার ছোটবেলার মধ্য কলকাতা তাই ভীষণ প্রিয় একটি বিষয়।’

কলকাতা সিরিজ

যে কোন শিল্পীর কাছেই ডিটেলস বা খুঁটিনাটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। অবনিশের ছবির মধ্যে বিস্তারিত খুঁটিনাটির ভীষণ ভাবে দেখা যায়। এক্ষেত্রে ওর পরিবারের সাহায্য নেহাত কম নয়। এখনও অবনিশের বাবা যিনি ডালহাউসি অঞ্চলে চাকরি করেন, বিভিন্ন খুঁটিনাটি নিয়ে অবনিশকে সমৃদ্ধ করেন। বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত দুই সন্তানের বাবা অবনিশের কাছে জলরঙের মধ্যে রয়েছে অদ্ভুত।ভালোলাগা। এই রঙ তাকে কখনো পৌঁছে দিয়েছে নিউইয়র্ক বা লাস ভেগাসের পাঁচতারা হোটেলের প্রদর্শনীতে। সামনের দিনে তাকে রঙের ছটা ছড়িয়ে পড়ুক দেশ বিদেশে, এটাই সবচেয়ে বড় চাওয়া অবনিশ ত্রিবেদীর।