Israel-Palestine War: ‘মরার মতো পড়েছিলাম…’ মিউজিক ফেস্টিভালে গিয়ে হামাসের আক্রমণ থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে বললেন ব্যক্তি

আতঙ্ক যেন সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। সবখানেই যেন পাতা মৃত্যু ফাঁদ। এমন ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে কোনও ক্রমে প্রাণে বেঁচে ফিরলেন এক ব্যক্তি। যেখানে বাঁচার আশা প্রায় ছিলই না সেখান থেকে ফিরে এসেছেন তিনি।

প্যালেস্তাইনের জঙ্গি সংগঠন হামাস ইজরায়েলে ঢুকে সেখানে বোমা ফেলে শতাধিক নিরপরাধ, সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। সম্প্রতি এই আক্রমণকে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হত্যালীলার আখ্যা দিয়েছেন।

সব থেকে ভয়ঙ্কর আঘাত করা হয় ইজরায়েলের একটি গানের ফেস্টিভালে। এই অনুষ্ঠানের জায়গায় ঢুকে জঙ্গিরা হামলা করে। এই ঘটনার জেরে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৬০ জন। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে। বহু মানুষ, প্রায় হাজারের বেশি মানুষ এখানে সেদিন উপস্থিত ছিলেন। অতর্কিতে সেখানে ঢুকে পড়ে প্যালেস্তাইনীয় জঙ্গিরা সাধারণ মানুষের উপর গুলি চালায়। তাঁরা পালাতে গেলেও গুলি করে হত্যা করা হয় তাঁদের।

এই ঘটনার পর সেখান থেকে বেঁচে ফিরে আসা এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে হিন্দুস্তান টাইমস। তিনি জানান তাঁর বাঁচার বিন্দুমাত্র আশা ছিল না। তিনি এবং তাঁর প্রেমিকা সেখানকার একটি বারে কাজ করছিলেন এই হামলার সময়।

আরও পড়ুন: প্যালেস্তাইনকে সমর্থন করার জের, কাজ হারালেন প্রাক্তন পর্ন তারকা মিয়া খালিফা!

আরও পড়ুন: ভিডিয়ো- সহনাগরিকের সাহায্য করতে এসে বিপাকে ফাউদার ডোরোন, কোনওক্রমে প্রাণ বাঁচালেন লিওর রাজ

তাঁর কথায়, ‘আমরা তখন হাঁটছিলাম। ভাবছিলাম সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে কফি খাব আর রেস্ট নেব একটু। তখনই রকেট হামলা শুরু হয়। আমার এক বন্ধু ফোন করে জানায় ওদের গুলি করা হচ্ছে। আমি আর আমার প্রেমিকা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে ছুটে যাই। তারপরই বুঝি এটা জঙ্গি হামলা। আমরা পুলিশের একটি বুথে গিয়ে লুকিয়ে পড়ি। সবাই তখন মাটিতে বসে। কেউ কেউ কাঁদছেন। কেউ চিৎকার করছেন। কেউ আবার একেবারে নিশ্চুপ করে গিয়েছিলেন।’

তিনি সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি মনে করে আরও বলেন, ‘পুলিশ আমাদের বললো প্রার্থনা করুন আর পালান। ওরা কাছে একটি মাঠে পালিয়ে যায়। তখনও সমানে গুলি চালানো হচ্ছিল।’ এরই মাঝে প্রেমিকার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান সেই ব্যক্তি। তাঁর কথায়, ‘এরপর একটা গাড়ি আসতে দেখে তাতে উঠে পড়ি। যাঁর গাড়ি তিনি সেই অনুষ্ঠানে ছিলেন। উনি হাইওয়ের টদিকে যাচ্ছিলেন আর বাঁচার জন্য আমাদের এখান থেকে দ্রুত বেরোনোর দরকার ছিল। আমরা গাড়িতে ওঠার পরই আমাদের উপর গুলি ছোঁড়া শুরু হয়। তখন আমাদের গাড়ি বালিতে আটকে যায়। আমি নিজেকে বলি গণহত্যার কথা মনে আছে, চুপচাপ মরার মতো পড়ে থাকো বাঁচতে চাইলে। আমি তখন নিজেকে বালিতে ঢেকে প্রায় ঘণ্টাখানেক ওভাবেই পড়েছিলাম। এরপর কিছু পায়ের শব্দ পাই। আমাকে ৮জন জঙ্গি খুঁজে পায়।’

সেই ব্যক্তি এরপর জানান তিনি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলেন কিন্তু জঙ্গিরা এসে কেবল তাঁর কাছে যা যা ছিল সেগুলো কেড়ে নেয়। আর তাঁর দিকে এমন ভাবে তাকায় যেন তিনি কোনও মাংসপিণ্ড। তাঁর কথায়, ‘আমাদের সঙ্গে একজন ছিলেন সে তো ভয়ে কেঁদেকেটে একশা। আমি তখন ওকে থামতে বলি। জঙ্গিদের কাছে ছুরি, হাতুড়ি সহ অনেক কিছুই ছিল। সেই ছেলেটি যে অত কাঁদছিল তাঁকে আমাদের সামনেই ওরা হত্যা করল।’

সেই ব্যক্তিকে একপ্রকার তখন ভয় দেখিয়ে কিডন্যাপ করে জঙ্গিরা। ওঁকে ভয় দেখিয়ে বলে যে পালাতে চাইলে গুলি করা হবে। ছুরি দিয়ে ভয় দেখানো হয়। কিন্তু একজন জঙ্গি সেই ব্যক্তিকে তার জ্যাকেট দিয়ে সাহায্য করেন। এরপর তিনিই তাঁকে যেতে বলেন। তখন প্রাণভয়ে তিনি দৌড়াতে শুরু করেন। তখন ওরা পিছন দিয়ে গুলি করে বলেই জানান সেই ব্যক্তি।

তাঁর কথায়, ‘আমি মাটিতে পড়ে যাই। পাশে ছড়িয়ে থাকা মৃতদেহের রক্ত নিজেদের গায়ে মেখে এমন ভাবে পড়ে থাকি যেন আমি মারা গেছি।’ এরপর তাঁকে ইজরায়েলের সরকারের তরফে লোক এসে উদ্ধার করে। তাঁর সামনেই তাঁর প্রেমিকাকে হত্যা করা হয় বলেই সেই ব্যক্তি জানান।