Morbi bridge tragedy: গুজরাটে মৌরবি ব্রিজ দুর্ঘটনার চূড়ান্ত রিপোর্ট দিল সিট, কাদের দিকে উঠল আঙুল?

মৌলিক পাঠক

শতাব্দী প্রাচীন মৌরবি ব্রিজ দুর্ঘটনার চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করল বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। ব্রিজ ভেঙে ভয়াবহ দুর্ঘটনার সিট গঠন করার ঘোষণা করে গুজরাট সরকার। দুর্ঘটনার এক বছর পর রিপোর্ট পেশ করল সিট। তদন্তকারী দল ব্রিজটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থা ওরেভা কোম্পানির পরিচালকমণ্ডলী এবং সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর জয়সুখ প্যাটেলকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এছাড়া মৌরব পুরসভার এক উচ্চপদস্থ আধিকারিককে এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেছে।

এই ব্রিজ দুর্ঘটনায় ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়। গত জানুয়ারি মাসে জয়সুখ প্যাটেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পর থেকে তিনি জেলেই রয়েছেন। 

মৌরবি জেলার মাচ্ছু নদীর উপর ব্রিটিশ আমলের ঝুলন্ত ফুট ব্রিজটি ভেঙে পড়ে। সিটের রিপোর্টে মৌরবি পুরসভার তিন জন কার্যনির্বাহী আধিকারিকেরও নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মঙ্গলবার গুজরাট হাইকোর্টের কাছে পাঁচ সদস্যদের সিট এই রিপোর্টটি জমা দিয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস এই রিপোর্টের প্রতিলিপি দেখেছে। 

মৌরবি দুর্ঘটনার পর আদালত স্বতঃপ্রণোদিত জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে।  সিটের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওরেভা কোম্পানির দায়হীনতার ফলে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। 

সিট তার রিপোর্টে বলেছে, ‘এই দুর্ঘটনার জন্য প্রাথমিক ভাবে দুই ম্যানেজিং ডিরেক্টর দীনেশ ডেভ এবং দীপক পারেখ-সহ কোম্পানির পুরো ম্যানেজমেন্ট দায়ী। তাঁদের দায়িত্ব আলাদা আলদা হতে পারে কিন্তু কেউ এই দোষের থেকে বাইরে থাকতে পারেন না।’ রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোম্পানির দিক থেকে প্রযুক্তি ও পরিচালনগত ত্রুটি ছিল। 

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ১৬ অগস্ট সরকারে সঙ্গে কোম্পনি মউ স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার পর তার আরও দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল। তাছাড়া ব্রিজে চড়ার টিকিটের দাম বাড়ানোর জন্য পুরসভার কাছে চিঠি লিখে আবেদন জানানো হয়েছিল। 

ওরেভার জানিয়েছে, মউ শেষ হয়ে যাওয়া মুখে তারা পুরসভাকে চিঠি লিখে জানিয়েছিল, ব্রিজের পোস্টগুলির জরাজীর্ণ দশ সম্পর্কে। তার টিকিটের দাম বাড়ানোর আবেদন জানায়। কিন্তু পুরসভার পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়।

বরং পুরসভার পক্ষ থেকে বলা হয় তৎকালীন টিকিটের দামেই কাজ চালিয়ে যেতে এবং মউ শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেতুর দায়িত্ব ফিরিয়ে দিতে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি সেতু হস্তান্তর করেনি এবং সেতুর অবস্থার উন্নতির জন্য কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। 

এরই মধ্যে ২০২২ সালের ৪ মার্চ ওরেভা কোম্পানির সঙ্গে পুরসভার চুক্তিটি পুনর্নবীকরণ। বেসরকারি সংস্থাটি আগামী ১৫ বছরের জন্য সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পায়। 

রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোনও পেশাদার বিশেষজ্ঞ সংস্থার সাহায্য না নিয়ে, পুরসভার সঙ্গে পরামর্শ না করে, ব্রিজ মেরামতের দেবপ্রকাশ সলিশনস নামে এক অযোগ্য সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়।

মেরামতের কাজ শেষ হওয়ার পর পুরসভার ফিটনেস রিপোর্ট ছাড়াই ২৬ অক্টোবর ২০২২ সালে সেতুটি খুলে দেওয়া হয় জনসাধারণের জন্য। একটি নির্দিষ্ট সময়ে সেতুতে প্রবেশকারীর সংখ্যার কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। যার ফলে সেতুতে অবাধ চালচল শুরু হয়। এছাড়া সেতুটিকে জনসাধারণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ছিল না। 

দুর্ঘটনার পর, রাজ্য সরকার মৌরবি পুরসভার তৎকালীন চিফ অফিসার সন্দীপ সিং ঝালাকে বরখাস্ত করে। যিনি বেসরকারী সংস্থার সঙ্গে মউ স্বাক্ষর করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে।

 

গুজরাট মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্ট, ১৯৬৩-র ধারা ৬৫ (৩) (সি) অনুসারে, প্রতিটি চুক্তির কার্য সম্পাদন চুক্তির তারিখে বর্তমান সরকারি বছরের মধ্যে সম্পন্ন করা যাবে না। পুরসভার একটি সাধারণ সভায় প্রস্তাবের মাধ্যমে এর অনুমোদন প্রয়োজন। ওরেভা কোম্পানীর সঙ্গে মউ স্বাক্ষর হওয়ার পর তারা কাজ শুরু করে দেয়।

তা ঘটনায় পুরসভায় কর্তারা দায় এড়াতে পারেন না যারা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন।

সিসিটিভি ফুটেজ, দুর্ঘটনাগ্রস্ত এলাকার পর্যবেক্ষণ এবং সিটের তদন্ত অনুসারে, ব্রিজের উজানে মূল তারের ভাঙা, অর্থাৎ দরবারগড়ের দিকে মৌরবিতে ঝুলন্ত সেতুর ভেঙে পড়ার প্রধান কারণ হিসাবে দেখা গেছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘সমস্ত নিরাপত্তার দিক এবং নকশা বিবেচনা করে লা যেতে পারে, সেতুটি ৭৫ থেকে ৮০ জনকে বহন করার পক্ষে নিরাপদ (যদি সমস্ত ৯৪টি তারের সব কটি কার্যকরী অবস্থায় থাকে)। কিন্তু সাইট পর্যবেক্ষণ করে দেখা গিয়েছে, ক্ষয়জনিত কারণে ৪৯টি তারের মধ্যে ২২টি তার ইতিমধ্যেই ভেঙে গেছে, তাই সেতুর লোড ক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে’।

পরিশেষে বলা যায়, সেতুটির দায়িত্ব বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ পদ্ধতি মানা হয়নি। পাশাপাশি, সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ এবং জনসাধারণের কাছে খুলে দেওয়ার আগে কোনও নিয়ম নীতি মানা হয়নি।