দেশের প্রায় সব প্রেক্ষাগৃহে ‘মুজিব’

ঢালিউডের কলিযুগ শুরু হওয়ার পর হুহু করে কমেছে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা। একসময়ের হাজারোর্ধ হল এখন একশ’র গণ্ডিতে! সাধারণত বছরজুড়ে ৬০টির মতো সিনেমা হল সচল থাকে। তবে বন্ধ থাকা আরও শতাধিক প্রেক্ষাগৃহের দরজা খোলে ঈদ মৌসুমে। গেলো কোরবানির ঈদে ‘প্রিয়তমা’, ‘সুড়ঙ্গ’ ছবিগুলোর দারুণ ব্যবসার সুবাদে কয়েক মাস ধরেই দেড় শতাধিক হল চালু রয়েছে। এর প্রায় সবগুলো (বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ ১৫৩টি হল চূড়ান্ত) হলেই শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) থেকে দেখা যাবে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ ছবিটি।

জাজ মাল্টিমিডিয়ার পরিবেশনায় ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। তাদের পক্ষ থেকেই দেড় শতাধিক প্রেক্ষাগৃহের তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়েছে। যেটা সাম্প্রতিক সময়ে ঢালিউডের যে কোনও সিনেমার জন্য সর্বোচ্চ, রেকর্ড।

এ নিয়ে কানাঘুষা চলছিল, সরকারি সিনেমা বলেই ছবিটি এতো হলে উঠছে। তবে বিষয়টি পরিষ্কার করে জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজ বলেছেন, “আমরা মনে করি না, জোরজবরদস্তি রিলিজ করছি। হল মালিকেরাই আগ্রহী। বিশেষ করে ট্রেলার দেখার পর তারা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশের ছবিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো কান্না আর আবেগ। যে ছবি দেখে দর্শক কাঁদে, সেটা হিট। ‘মুজিব’র ট্রেলার দেখে হল মালিকদের মনে হয়েছে যে, এটা দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে।”

মুক্তি উপলক্ষে ‘মুজিব’র উল্লেখযোগ্য তথ্যগুলোয় চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক… 

ঘোষণা ও প্রাথমিক পর্যায়

২০১৭ সালে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যেটার একটি উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন অবলম্বনে সিনেমা নির্মাণ করা। এরপর ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ ছবিটির ঘোষণা দেওয়া হয় এবং একই সময়ে ছবির নির্মাতা হিসেবে বলিউডের প্রখ্যাত নির্মাতা শ্যাম বেনেগালকে চূড়ান্ত করা হয়। আর ছবির চিত্রনাট্যকার হিসেবে যুক্ত হন বলিউডের অতুল তিওয়ারি। তিনি ২০১৯ সালে বাংলাদেশে এসে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে গবেষণা করেন। ছবিটির বাজেট ধরা হয় ৮৩ কোটি টাকা। যেটার ৬০ ভাগ বাংলাদেশ ও ৪০ ভাগ বহন করেছে ভারত সরকার।  

মুজিব: একটি জাতির রূপকার অভিনয়শিল্পীরা

ঘোষণার সময়ই এটা নিশ্চিত করা হয়েছিল যে, এই ছবির বেশিরভাগ শিল্পী বাংলাদেশ থেকে নেওয়া হবে। সেটার প্রতিফলন দেখা যায় কাস্টিংয়ে। ২০২০ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস ধরে অডিশনের মাধ্যমে বাছাই করা হয় শিল্পী। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের জন্য ১৫ জন শিল্পীর অডিশন নেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে পাঁচবার অডিশন শেষে আরিফিন শুভকে চূড়ান্ত করা হয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব রেনুর ভূমিকায় নুসরাত ইমরোজ দ ও প্রার্থনা ফারদিন দীঘি (রেনুর ছোটবেলার চরিত্রে), শেখ হাসিনার চরিত্রে নুসরাত ফারিয়া, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের ভূমিকায় শহীদুল আলম সাচ্চু, খন্দকার মোশতাক চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবু, আব্দুল হামিদ খান ভাসানির চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদ, তাজউদ্দীন আহমদের চরিত্রে রিয়াজ, বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফুর রহমানের চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী, মাতা সায়েরা খাতুনের চরিত্রে দিলারা জামান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর চরিত্রে তৌকীর আহমেদসহ শতাধিক অভিনয়শিল্পী ছবিটিতে কাজ করেছেন। 

শুটিং, সম্পাদনা ও সংগীত

প্রি-প্রোডাকশন ও করোনা মহামারির কারণে দফায় দফায় পেছাতে হয়েছিল ‘মুজিব’র শুটিং। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতে এর চিত্রায়ন শুরু হয়। এরপর একই বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশে ধারণ করা হয় বেশ কিছু দৃশ্য। এরপর যথারীতি শুরু হয় সম্পাদনার কাজ। পাশাপাশি চলে সংগীত পরিচালনার প্রক্রিয়াও। ভারতের গুণী মিউজিক ডিরেক্টর শান্তনু মৈত্র ছবির সংগীত পরিচালনার ভার সামলেছেন। 

মুজিব: একটি জাতির রূপকার প্রথম দর্শন

‘মুজিব’ সিনেমার প্রথম ঝলক সামনে আসে ২০২২ সালের ১৭ মার্চ। এ দিন বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ছবিটির প্রথম পোস্টার প্রকাশ করা হয়। এরপর প্রথম ভিডিও ঝলক প্রকাশ্যে আসে ২০২২ সালের মে মাসে, বিখ্যাত কান চলচ্চিত্র উৎসবে। সেখানকার বাণিজ্যিক শাখায় ছবির ট্রেলার উন্মোচন করা হয় এবং ছাড়া হয় অন্তর্জালে। তবে ট্রেলারটি দর্শকের মন জয় করতে পারেনি। ফলে পোস্ট প্রোডাকশনে আরও সময় দিয়ে ঘষামাজা করা হয়েছে। গত ১ অক্টোবর ছবির আরও একটি ট্রেলার উন্মুক্ত করা হয়।

প্রথম প্রদর্শনী

গেলো সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত ‘টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’-এ ‘মুজিব’ সিনেমার প্রথম প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সেখানকার বাণিজ্যিক সেকশনে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে একটি হল ভাড়া করে ছবিটি দেখানো হয়। এছাড়া মুক্তির প্রাক্কালে বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য একটি বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে অনুষ্ঠিত সে প্রিমিয়ারে তিনি ছবিটি উপভোগ করেছেন। 

সেন্সর ও মুক্তি

প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা মুক্তির প্রধান শর্ত সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র। গত ৩১ জুলাই ‘মুজিব’ ছাড়পত্র পায়। সেই সুবাদে এবার বড় পর্দায় এলো ছবিটি। আগামী ২৭ অক্টোবর ভারতের প্রেক্ষাগৃহেও মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে ‘মুজিব’। তবে সেখানে ছাড়পত্র পেয়েছে কিনা, এ বিষয়ে এখনও কোনও খবর পাওয়া যায়নি। মুজিব: একটি জাতির রূপকার