ভাঙ্গন ‘অপ্রতিরোধ্য’ হলেও সবক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদই সমাধান নয়, মত সুপ্রিম কোর্টের

ভাঙন অপ্রতিরোধ্য ধরে নিয়ে সব ক্ষেত্রে বিবাহ বিচ্ছেদ মঞ্জুর করা বাঞ্ছনীয় নয়। এই মামালার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার মত প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের মতে, বিয়ে এখনও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটি ধার্মিক, আধ্যাত্মিক এবং মানসিক বন্ধন, যা শুধুমাত্র আইনের অক্ষর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না, সামাজিক নিয়মাবলী দ্বারাও পরিচালিত হয়।

৮৯ বয়সি চিকিৎসক এবং বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিচ্ছেদের আবেদন করেন। সেই মামলার শুনানির সময় আদালত এই মন্তব্য করে। ১৯৯৬ সালে এই মামলা হয়। বর্তমানে তাঁর স্ত্রীর বয়স ৮২ বছর। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা। স্বামী ২০০০ সালে স্বামী পরিবারিক আদালত থেকে বিচ্ছেদের রায় পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৯ সালে পঞ্জাব হাইকোর্ট সেই রায় খারিজ করে দেয়। তিনি সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ। আদালতের কাছে আবেদন জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি সাংবিধানিক বেঞ্চে মত নেওয়ার জন্য।

স্বামী নির্মল সিং পানেসারের আবেদন খারিজ করে বিচারপতি অনিরুদ্ধ বোস এবং বেলা এম ত্রিবেদীর বেঞ্চ বলে, ‘এটা কোনও ‘স্ট্রেট জ্যাকেট ফর্মুলা নয়। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অধীনে বিবাহবিচ্ছেদ।”

এই মামলায় দেখা গিয়েছে স্বামী-স্ত্রী ২১ বছর ধরে একসঙ্গে পঞ্জাবে বাস করছেন। তাঁদের তিনটি সন্তানও রয়েছে। যাদের তাঁর স্ত্রী লালন-পালন করে বড় করেছেন। স্ত্রী শ্বশুরবাড়ি ও সন্তান ছেড়ে চেন্নাইয়ে স্বামীর কর্মস্থলে যেতে নারাজ। অন্য দিকে স্ত্রী আদালতে জানিয়েছেন, তিনি স্বামীর দেখভাল করতে চান। ৬০ বছর ধরে যে বিয়েকে বহন করে নিয়ে এসেছেন মরার আগে বিচ্ছেদের কলঙ্ক নিয়ে মরতে চান না।

রায়ে বিচারপতি ত্রিবেদী বলেন, ‘আমাদের মতে বিবাহ সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তাই তাকে অবহেলা করা উচিত না। আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা ক্রমবর্ধমান হওয়া সত্ত্বেও বিয়েকে এখনও ভারতীয় সমাজেও স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে একটি ধার্মিক, আধ্যাত্মিক এবং অমূল্য বন্ধন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ‘

আদালত তার রায়ে আরও বলেছে, ‘বিচ্ছেদ বর্তমান সামজে কলঙ্ক নয়। আমরা বিবাদির উত্তর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তবে বিবাহ শুধামাত্র আইনের অক্ষর নয়, সামাজিক নিয়ম দ্বারা পরিচালিত হয়। বিবাহ থেকে মানুষ নতুন সম্পর্কে আবদ্ধ হয়।’

আদালত পাঁচজন বিচারককে নিয়ে তৈরি সাংবিধানিক বেঞ্চের সিদ্ধান্তও বিশ্লেষণ করেছে। যাতে বলা হয়েছে, ভাঙনের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত যত্ন ও সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োগ করা উচিত। যাতে উভয়পক্ষ ন্যায় বিচার পায়।

পাঁচ বিচারক-বেঞ্চ আরও বলে, যে বিবাহবিচ্ছেদ মঞ্জুর করার আগে, আদালতকে সম্পূর্ণরূপে মনে করতে হবে এবং সন্তুষ্ট হতে হবে যে বিবাহটি সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর, মানসিকভাবে মৃত এবং পরিত্রাণের বাইরে এবং তাই, বিবাহ ভেঙে দেওয়াই সঠিক সমাধান। তখনই বিচ্ছেদের রায় দিতে হবে।

বেঞ্চ বলে, ‘স্ত্রীর অনুভূতি বিবেচনা ও সম্মান করে আদালতের মত, বিয়ে অপ্রতিরোধ্য ভাবে ভেঙে গিয়েছে ধরে নিয়ে তা ভেঙে দেওয়া হলে স্ত্রী প্রতি অবিচার করা হবে।’