Primary teacher job: ১৪ বছর আইনি লড়াইয়ের পর প্রাথমিকের চাকরি পেলেন বীরচক্রধারী প্রাক্তন BSF কর্মী

একসময় একাই ৪ জঙ্গিকে আহত করেছিলেন। সাহসিকতার জন্য তিনি বীর চক্র পেয়েছিলেন। সেই প্রাক্তন বিএসএফ কর্মী টানা ১৪ বছর ধরে আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে পেলেন প্রাথমিকে শিক্ষকের চাকরি। ওই বিএসএফ কর্মীর নাম আনুয়ার আনসারি।  তিনি পুরুলিয়ার বাসিন্দা। যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও নানা অজুহাতে তাঁকে চাকরি দিতে গিয়ে টালবাহানা করে পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। অবশেষে তিনি হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে চাকরি পেলেন। তবে তাঁর চাকরির মেয়াদ আর মাত্র ২ বছর।

আরও পড়ুন: পোস্টিং দুর্নীতি মামলায় কোমর বেঁধে নামল সিবিআই, তলব করল বেশ কয়েকজন শিক্ষককে

মামলার বয়ান অনুযায়ী, এক্স সার্ভিসম্যান ক্যাটাগরিতে ২০০৯ সালে প্রাথমিকের চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন আনুয়ার আনসারি। সেইমতো পরীক্ষাও দিয়েছিলেন। পরীক্ষাতে তিনি পাশও করেন। কিন্তু, ইন্টারভিউ দেওয়ার আগেই শুরু সমস্যা। তিনি একজন প্রাক্তন বিএসএফ কর্মী হওয়ায় তাঁকে এক্স সার্ভিস ম্যান হিসেবে গণ্য করতে আপত্তি জানায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। এরপর ২০১২ সালে তিনি কলকাতায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই সময় মামলাটি উঠেছিল বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দারের এজলাসে।

মামলাকারীর আইনজীবী আলি আহসান আলমগীর জানান, সেই সময় বিচারপতি সমাদ্দারের প্রাক্তন বিএসএফ কর্মীরা এক্স সার্ভিসম্যান হিসেবে গণ্য হবে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। তার ভিত্তিতে কমিটি রিপোর্ট দিয়ে জানায় প্রাক্তন বিএসএফ কর্মীরাও এক্স সার্ভিসম্যান ক্যাটাগরিতেই পড়েন। তার প্রেক্ষিতে বিচারপতি সমাদ্দার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রার্থী যোগ্য হলে তাঁকে চাকরি দিতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশের পর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ আনোয়ারকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডেকে পাঠায়। তারপরে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তরফে হাইকোর্টে রিপোর্ট দিয়ে জানানো হয়, তাঁর প্রাপ্য নম্বর কাট অফ স্কোরের থেকে কম। পর্ষদ দাবি করে, কাট অফ স্কোর ১৯.০৩। তবে মামলাকারী জানতে পারেন কাট অফ স্কোর হল ১৮.৫৭। এরপর আবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন আবেদনকারী।

দ্বিতীয়বার মামলাটি উঠেছিল বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে।  সেখানে মামলাকারীর আইনজীবী জানান, আবেদনকারীর প্রাপ্য নম্বর কাট অফ স্কোরের থেকে বেশি রয়েছে। তা মেনে নেয় পর্ষদ। সেই মামলায় ২০১৭ সালে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় দ্রুত আবেদনকারীকে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু, তারপরেও হাইকোর্টের নির্দেশ মান্য করা হয়নি। শেষে পর্ষদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননায় মামলা করেন আবেদনকারী। সেই মামলাটি করা হয়েছিল করোনা চলাকালীন। মামলার শুনানিতে তখন উপস্থিত থাকতে পারেননি পর্ষদের আইনজীবী। এরপর জেলা প্রাথমিক শিক্ষাপর্ষদের তরফে আবার আদালতকে জানানো হয়, কাট অফ স্কোরের নিচে রয়েছে আবেদনকারীর প্রাপ্য নম্বর। কিন্তু, করানোর সময় মামলাকারীর আইনজীবী উপস্থিত না থাকতে পারার কারণে সেই সময় মামলাটি নিষ্পত্তি করে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট।

আবারও কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন আনুয়ার আনসারি। এবার মামলাটি ওঠে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। তবে এবার পর্ষদের তরফে জানানো হয়, এনসিসির জন্য যে এক নম্বর বরাদ্দ সেটা আবেদনকারীকে দেওয়া যাচ্ছে না। সেই কারণে তাঁর নম্বর কমে গিয়েছে। আইনজীবী যুক্তিতে জানান, ২০০১ সালের রিক্রুটমেন্ট রুলস অনুযায়ী এনসিসিতে এক নম্বর পাওয়ার যোগ্য আবেদনকারী। শেষে পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সেটা মেনে নেয় এবং শেষমেষ আনুয়ার আনসারিকে নিয়োগ করে।