ওই যে ডুবলাম আর ভাসতে পারিনি: মুনশী ওয়াদুদ

পাকিস্তান আমল থেকে তার গান লেখা শুরু। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ বেতারের প্রথম এনলিস্টেড গীতিকবি তিনি। যদিও ‘গীতিকবি’ শব্দটিতে তার আপত্তি ঘোরতর। তিনি মনে করেন, বাংলা শিল্প-সাহিত্যে ‘গীতিকার’ একটি স্বতন্ত্র ও গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। এটির মানোন্নয়নের জন্য ‘কবি’ শব্দটির প্রয়োজন পড়ে না। তার ভাষ্যে, ‘নেতা তো নেতাই। পাতি-নেতা আবার কী!’ প্রায় ছয় দশকের সংগীত ক্যারিয়ার। রেডিও, টেলিভিশন আর সিনেমা মিলিয়ে গান লিখেছেন দেড় হাজারের মতো। যার সঠিক হিসাব তার কাছেও নেই। এরমধ্যে রয়েছে অসংখ্য জনপ্রিয় গান। যেমন সিনেমায়, তেমন রেডিও আর টেলিভিশনে। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। যদিও এসব ছাপিয়ে বাংলা গানে তার নাম সবচেয়ে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা থাকবে ‘শুদ্ধ গীতিকার’ হিসেবে। তাকে নিয়ে সমসাময়িক গীতিকবি মুহাম্মদ রফিকউজ্জামানের মন্তব্যটিই এ ক্ষেত্রে  সূত্র হিসেবে টানা জরুরি। যিনি বলেছেন, ‘দেশের একমাত্র শুদ্ধতম গীতিকবি মুনশী ওয়াদুদ’। জানা যাক সেই শুদ্ধতম গীতিকবির জীবনের গল্প-

ব্যক্তিজীবনে সাদামাটা-সজ্জন হলেও সিনেমা পাড়ায় মুনশী ওয়াদুদের মজার একটা পরিচিতি রয়েছে। তাকে অনেকেই ‘নাখালপাড়ার জমিদার’ বলে ডাকেন! না, মজা করে নয়। কারণ, এখানেই (রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে নাখালপাড়া) তাদের পারিবারিক অনেক জমি ছিলো। সেটি স্কুল ও সামাজিক উন্নয়নে ভাগ-বাটোয়ারা করে এখন কমেছে বটে। তবে স্থানীয় হিসেবে মুনশী পরিবারের প্রভাব কিংবা ‘জমিদারি’ নাখালপাড়ায় এখনও বহাল রয়েছে সম্মানের সঙ্গে।

যদিও এমন ‘জমিদার’ পরিচিতিতে নিপাট ভদ্রলোক মুনশী ওয়াদুদ মোটেই তুষ্ট থাকেন না। বরং লজ্জায় জড়ো হয়ে যান। তার মতে, ‘আমি তো জমিদারি ফলানোর জন্য শিল্প-সংস্কৃতিকে বুকে লালন করিনি। বরং লেখার তাড়না আর সংগীতের প্রেমে ডুবেই লিখতে এসেছি। বাবার স্বপ্ন ছিলো পড়াশোনা করে তার ছেলে ব্যারিস্টার হবে অথবা পৈত্রিক স’মিলের ব্যবসায় মন বসাবে। কিন্তু এসবে আমার কোনও আগ্রহ ছিলো না। সংসারের বড় ছেলে হয়েও আমার সময় কাটতো স্কুল ফাঁকি দিয়ে রেডিও শুনে, উপন্যাস-গল্পের বই পড়ে আর সিনেমা দেখে।’    
 
মুনশী ওয়াদুদের জন্ম মূলত ১৯৫৪ সালের ৮ নভেম্বর। যদিও এসএসসি পরীক্ষার সুবাদে কাগজে কলমে সেটি এখন ১৯৫৩ সালের ১ ডিসেম্বর হয়ে গেছে। তাই সার্টিফিকেটের জন্মতারিখটাই এখন আসল হয়ে গেছে তার কাছে। এছাড়া উপায়ও নেই। এসএসসি পাস করেন তেজগাঁও পলিটেকনিক হাই স্কুল (বর্তমানে তেজগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়) থেকে। ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি দিয়ে, তেজগাঁও কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় পড়াশোনা করেন। তবে পাঠ্যপুস্তকের পড়াশোনায় বরাবরই অনীহা ছিলো মুনশী ওয়াদুদের। পড়াশোনায় ফাঁকি দিয়ে তিনি ডুবে থাকতেন রেডিও কোলে নিয়ে, নানাবিধ রহস্য উপন্যাসে চোখ ডুবিয়ে আর পুরান ঢাকার সিনেমা হলে উর্দু আর হিন্দি ছবি দেখে। মুনশীর ভাষায়, ‘এগুলোর কারণে আমি কী পরিমাণ মার খেয়েছি বাবার হাতে, সেটি এখন ভাবা যায় না। আমার পিঠে বেতের লাল দাগ থাকতোই। একটি দাগ শুকানোর আগে আরেকটি দাগ বসতো। কারণ, এমনও সময় গেছে আমি দু’তিন দিন বাড়িতেই ফিরতাম না। বন্ধুদের সঙ্গে হারিয়ে যেতাম সিনেমা দেখার লোভে। তবে এটাও ঠিক, ক্লাস পরীক্ষায় আমি আবার সব সাবজেক্ট পাস করতাম। স্মৃতিশক্তি ভালো ছিলো। পরীক্ষার আগে এক দুদিন পড়লেই হতো। শিক্ষাজীবনে আমার কোনও সাবজেক্ট ফেল করতে হয়নি। তবে এখনও বলি, পাঠ্যপুস্তকের প্রতি আমার কোনোদিন আগ্রহ জন্মায়নি।’

মুনশী ওয়াদুদের সংসারটা দারুণ পরিপাটি। ঝকঝকে তকতকে ফ্ল্যাট। পাশ দিয়েই চলে গেছে নাখালপাড়া ট্রেন লাইন ও এক্সপ্রেসওয়ে। স্ত্রী নিগার সুলতানা নারগিস আর তিনকন্যা জেবা ফারাহ মোহনা, দীবা ফারাহ হৃদিতা ও সাবা ফারাহ আঁচলকে নিয়ে সাজানো সংসার। না, গানের সঙ্গে তার সন্তানদের সখ্য হয়নি। কবির ভাষায়, ‘শুধু পরিবার নয়, আমার বংশের আর কেউ গানের সঙ্গে নেই। আগেও না, পরেও না। একমাত্র আমিই। যার যেটা আগ্রহ, সে সেটা করবে। সন্তানদের পড়াশোনা করিয়েছি, বাকিটা তাদের ইচ্ছা। আমার বাবাও একটা সময় অনেক মেরে মেরে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। বুঝতে পেরেছেন, মেরে ফেললেও আমি ব্যারিস্টার হবো না, গান-সিনেমার পেছনেই দৌড়াবো। সেটাই তো হলো। তাই আমার পক্ষ থেকে সন্তানদের প্রতি কোনও জোর বা আবদার নেই।’

মুনশী ওয়াদুদ গান লেখা শুরু করেন ৬০ দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে। তখন রেডিও পাকিস্তান। লিখছেন এখনও। ৫ দশকের ক্যারিয়ারে রেডিও, টেলিভিশন আর সিনেমা মিলিয়ে গানের সংখ্যা মাত্র দেড় হাজার। আগেই বলেছেন, তার বংশের কেউ এই গান-বাজনার সঙ্গে ছিলো না। তাহলে কেমন করে তিনি গানের মুনশী হয়ে উঠলেন, পেলেন শুদ্ধতম গীতিকবির সনদ। কবি একটু বিস্তারিতই বললেন এ প্রসঙ্গ তুলতে। ‘‘৬০ দশকের মাঝামাঝি সময়। হাফপ্যান্ট পরি। স্কুলে পড়ি। তখন আমাদের একমাত্র গান শোনার মাধ্যম ছিলো রেডিও। সেটাও সবার বাসায় ছিলো না। তো আমাদের একটা রেডিও ছিলো। সেটি শুনতে শুনতে গানের প্রতি ঝোঁক চলে এলো। আর ঝোঁক ছিলো পড়াশোনার প্রতি। পাঠ্য না। পড়তাম সিলেবাসের বাইরে। তখন তো বই তেমন পাওয়া যেতো না। পাবলিক লাইব্রেরি চলে যেতাম। রহস্য ঘরানার বই আমাকে টানতো। ‘দস্যু মোহন’ সিরিজটা খুব পড়তাম তখন।’’

মুনশী ওয়াদুদ অনেকটা অন্ধকারে থেকেও বই পড়ে আর গান শুনে আজন্ম আলোর সন্ধানে ছিলেন মুনশী ওয়াদুদ। জানালেন, ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে নাখালপাড়া হলেও, স্বাধীনতার অনেক পরে সেখানে বিদ্যুতের লাইন যায়। নাখালপাড়ার ‘জমিদার’ হয়েও তাদের শৈশব কেটেছে হারিকেন বা কুপি বাতির আলোয়। তার ভাষায়, ‘ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে থেকেও আমরা অন্ধকারে ছিলাম। তখন রাজশাহী, গাজীপুরের মানুষরাও আমাদের চেয়ে অনেক অগ্রসর ছিলো। কারণ আমাদের বিদ্যুৎ নাই, স্কুল নাই। এরমধ্যে আমি বেড়ে উঠি। এরপর আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে জমি দিয়ে স্কুল করি ১৯৫৭ সালে। কথাগুলো বলার কারণ, আমাদের পরিবেশ-পরিস্থিতিটা তুলে ধরার জন্য। সেই পরিবেশ থেকে গান শেখা, শোনা বা লেখা এবং গীতিকার হিসেবে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা ছিলো আমাদের জন্য অলীক স্বপ্ন। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি।’

অন্ধকার সেই সময়ে মুনশী ওয়াদুদ নতুন আলোর খোঁজ পান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নৌকাডুবি’ উপন্যাস থেকে। সঙ্গে বেতারের গান আর উর্দু-হিন্দি সিনেমার টান তো রয়েছেই। তবে মুনশী ওয়াদুদ মনে করেন, তার জীবনের মূল বাঁকটি বদলে দেয় ‘নৌকাডুবি’। তার ভাষায়, ‘‘রেডিও শুনছি। গান যা শুনছি সব খাতায় লিখে রাখছি। সিনেমা দেখছি। গল্প নয়। সিনেমায় আমার মূল টান ছিলো ফাইট আর গান। তখন হিন্দি তো বটেই, উর্দু ছবিতেও দারুণ দারুণ গান ছিলো। এগুলোর বাইরে হঠাৎ ছোট ফুপির বাসায় পেয়ে গেলাম ‘নৌকা ডুবি’ উপন্যাসটা। তখন আমার ১০/১১ বছর বয়স। মোটা বইটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। ওই যে পড়লাম, আমার মনোজগতটা ওলট পালট হয়ে গেলো। ওই যে ডুবলাম আর ভাসতে পারিনি। ডুবন্ত অবস্থায় আছি এখনও। গান আর উপন্যাসে একটা মেলবন্ধন হয়ে গেলো আমার ভেতর। এরপর বুকের ওপরে রেডিও আর বই- এ দুটি নিত্যসঙ্গী হলো।’’

মুনশী ওয়াদুদ তখন রেডিওতে শুনতে পেতেন ‘প্রেম একবারই এসেছিলো নীরবে’, ‘ও পলাশ ও শিমুল’, ‘সে যেন আসে না আমার দ্বারে’, ‘তুমি আর আমি শুধু জীবনের খেলাঘর’- এই গানগুলো। যা আজও তার মনে দোল দিয়ে যায়। তিনি মনে করেন, এই গানগুলোই তাকে লেখার ক্ষেত্রে উৎসাহী করে তোলে, তৈরি করে ভিত্তি।

চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডের বিচার প্রক্রিয়ায় নন্দিত শিল্পীদের সঙ্গে মুনশী ওয়াদুদ ‘‘এরপর লেখালেখিটা শুরু করে দিলাম। খাতায় তোলা অন্যের গান দেখে দেখে নিজেই গান লেখা শুরু করে দিলাম। গান কিভাবে লিখতে হয়, সেটা তো আর কিছুই জানতাম না। শিখবো যে, সেই সুযোগটাও তো নেই। থাকি তো ঢাকার অন্ধকার একটা মহল্লায়। তবুও লেখা থামাইনি। এভাবে লিখে পাকিস্তান আমলে ২৫টি গান বাই পোস্ট পাঠাই বেতারে। এনলিস্টেড হওয়ার জন্য ২৫টা গান পাঠাতে হয়, এটাই নিয়ম। কিন্তু আমার সেই গানগুলো মনোনীত হয়নি। মানে গান হয়নি সেগুলো। কিন্তু সেটা রেডিও পাকিস্তান ইংরেজিতে একটি চিঠি লিখে জানিয়েছে আমাকে। বলেছে, ‘লিখতে থাকো, হয়ে যাবে’। ওই চিঠিটাই যেন আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সনদ হয়ে গেলো। সেটা বুকপকেটে নিয়ে ঘুরতাম আর দেখতাম। কিছুদিন পর আবার ২৩টা গান পাঠালাম। মুক্তিযুদ্ধের আগে। ১৯৭০ হবে। এরপর ওখান থেকে আবার চিঠি এলো। জানালো ২১টা গান সিলেক্ট হলো আমার। ৫ টাকা করে কিনে ২১টা গান কিনে নিলো। যেহেতু ২৫টা গান পাঠাইনি, তাই এনলিস্টেড করলো না, তবে গান যেহেতু লেখা হয়েছে তাই কিনে নিয়েছে। তাতেই খুশি। গানও হলো টাকাও পেলাম। ১০৫ টাকা তখন কম নয়। এরমধ্যে যুদ্ধ চলে এলো, আমিও রাইফেল কাঁধে চলে গেলাম। ২ নম্বর সেক্টরে তেজগাঁও থানার অধীনে যুদ্ধ করি। দেশ স্বাধীন করে ফিরে এসেই ১৯৭২ সালের মার্চে রেডিওতে গিয়ে ৩২টি গান জমা দিলাম। কবি আজিজুর রহমান খাতা দেখলেন। ২৯টি গান সিলেক্ট করলেন। সেদিন থেকে এনলিস্টেড হলাম এবং রয়্যালটির জন্য নিবন্ধিত হলাম বেতারে। বলতে ভালো লাগে, বাংলাদেশ বেতারে আমিই প্রথম এনলিস্টেড গীতিকার। একই দিনে আরও ক’জন এনলিস্ট হয়েছেন বটে, কিন্তু আমার রোল নম্বর এক। এটাও এক ধরনের আনন্দ আমার মনে।’’ মুক্তিযুদ্ধ পেরিয়ে বেতারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার গল্পটা এভাবেই ছোট পরিসরে জানালেন মুনশী ওয়াদুদ।

মুনশী ওয়াদুদের গানের খাতা তার লেখা প্রথম প্রকাশিত গান ‘মনে পড়ে ওগো’। সময়কাল ১৯৭০। গেয়েছিলেন জোশেফ কমল রড্রিক্স। তখনকার সময়ের নজরুল ও আধুনিক গানের নামকরা শিল্পী ছিলেন কমল। যদিও এই গানটি প্রচারের সময় গীতিকারের নাম প্রকাশ হতো না পাকিস্তান বেতারে। দীর্ঘ ও সফল ক্যারিয়ারে এই আক্ষেপটা এখনও রয়েছে মুনশি ওয়াদুদের মনে।

বেতারে তালিকাভুক্ত গীতিকার হওয়ার পরপরই বাংলাদেশ টেলিভিশনেও গানের পাণ্ডুলিপি নিয়ে ছুটে যান মুনশী ওয়াদুদ। শেখ সাদী খান তখন নতুন নতুন সুর করছেন। মূলত তিনি বেতারে বেহালাবাদক হিসেবে ছিলেন। পরিচয় হয় দুজনার। এরপর টেলিভিশন থেকে শেখ সাদী খান ‘সুরবিতান’ নামের প্রোগ্রাম বের করলো। সেই অনুষ্ঠানে ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের একটি গান ছিলো। মুনশী ওয়াদুদের লেখা তিনটি গান গেলো। ৭৩ সালের কথা। এই অনুষ্ঠান দিয়েই মূলত টিভিতে মুনশী ওয়াদুদের শুরু। সেই সঙ্গে জুটি হিসেবেও মেলবন্ধন ঘটলো সাদী-মুনশীর। ওয়াদুদের ভাষায়, ‘বলতে পারেন ৫০ বছর ধরে আমরা গানের জুটি। স্বাধীনতার পর থেকে আমরা এখনও এক সঙ্গে কাজ করছি। এটা কিন্তু ইতিহাস। বছর হিসাবে আর এতো সময় একসঙ্গে কোনও জুটি নেই।’

ভারতের কণ্ঠশিল্পী শানের সঙ্গে মুনশী ওয়াদুদ রেডিও-টেলিভিশন হয়ে গেলো। এবার সিনেমার গল্প। সিনেমায় মুনশী ওয়াদুদের অভিষেক হতে পারতো দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘লিডার’ ছবির মাধ্যমে। অলিভিয়া-প্রবীর মিত্রের সেই ছবিটি অর্ধেক শুটিং হয়ে ভেস্তে যায়। হলো না অভিষেক। গল্পটা এমন, ‘‘দেলোয়ার জাহান ঝন্টু একটা ছবি করছে। নাম ‘লিডার’। প্রথমে অলিভিয়া-প্রবীর মিত্র। পরে অলিভিয়ার জায়গায় শাবানা যুক্ত হন। এটা ৭৪/৭৫ সালের কথা। রেডিওতে কাজী আব্দুল ওয়াদুদ নামে একজন প্রযোজক ছিলেন। হঠাৎ তিনি বললেন, ‘চলো ছবিতে গান লিখবা’। সাইকেল ছিলো ওনার। সেটার সামনে বসিয়ে নিয়ে গেলেন পুরনো জেলখানার কাছে, ইসলামপুরের দিকে। ছোট একটা খুপরি ঘরে বসে টোকা দিয়ে দিয়ে সুর বুঝিয়ে দিলেন নুরুল হক নামের এক সুরকার। লিখলাম। এরপর অর্ধেক শুটিং হয়ে বন্ধ হয়ে যায় ছবিটা। আর হলো না। প্রথমেই ধাক্কা খেলাম। যদিও গানের জন্য আমার যত টান ছিলো বেতারেই। সিনেমার প্রতি অতো আগ্রহ ছিলো না। তখন সিনেমায় তুমুল আগ্রহ নিয়ে গান লিখতেন মনিরুজ্জামান মনির। টিভিতে লেখার জন্য পড়ে থাকতেন নজরুল ইসলাম বাবু। আমরা একই সময়ের। তিন জনের তিনদিকে টান ছিলো। তবে প্রত্যেকের মধ্যে মনের টান আর সম্মান ছিলো অগাধ।’’

প্রথম সিনেমায় ধাক্কা খেলেও এক বছরের মাথায় ঠিকই সিনেমার গানে অভিষেক হলো মুনশী ওয়াদুদের। ৭৬/৭৭ সালে রকিব উদ্দিন আহমেদের (অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদের স্বামী) একটি সিনেমায়। ‘দয়ালরে তোর আশা বুকে লইয়া’ গানটি সুর করেন শেখ সাদী খান আর কণ্ঠে তোলেন সৈয়দ আব্দুল হাদী। ওই সিনেমায় একটিই গান ছিলো। যদিও সিনেমাটির নাম বলতে পারেননি মুনশী। এরপর ৮০ সাল থেকে মোটামুটি সিনেমায় নিয়মিত হন মুনশী ওয়াদুদ। বেশিরভাগ গানই করেন শেখ সাদী খানের সুরে।

মুনশী ওয়াদুদ মুনশী ওয়াদুদের লেখা গান হিট হয় মূলত মনতাজুর রহমান আকবরের ‘প্রেম দিওয়ানা’ ছবির মাধ্যমে। ৯০ এর দিকে হয় ছবিটি। শেখ সাদী খান ছিলেন সংগীত পরিচালক। মুনশী বলেন, ‘‘এই ছবিটাই আমাকে লাইম লাইটে নিয়ে আসে। ‘আমি দিওয়ানা প্রেম দিওয়ানা’, ‘চন্দ্র সূর্য সবই আছে আগের মতো’ এগুলো সুপারহিট হয়। এরপর টানাটানি শুরু হলো আমাকে নিয়ে। ‘ডিসকো ড্যান্সার’ ছবির সব গান হিট। এরপর ‘বাবার আদেশ’। যা লিখছি সবই হিট।’’

কিন্তু এই হিটের তকমা নিয়েও থমকে দাঁড়ান বাংলা গীতিকবিতার শুদ্ধতার প্রতীক মুনশী ওয়াদুদ। কারণ, নকল গান লেখার প্রস্তাব বাড়তে থাকে। কবি বললেন, ‘‘প্রচুর হিট হচ্ছে। ভালোই লাগছে। কিন্তু লক্ষ্য করলাম, পরিচালকরা শুধু ক্যাসেট নিয়ে আসে! মানে হিন্দি গানের ক্যাসেট। বলে, এগুলো শুনে হুবহু মিটারে বাংলা লিখে দেন। বললাম, এই কাজ আর করবো না। এই বলে আমি সিনেমা থেকে বেরিয়ে পড়ি। এর আগেও প্রায় দশ বছর আমি গান থেকে দূরে ছিলাম। পরে এফ আই মানিকের ‘এ বাঁধন যাবে না ছিঁড়ে’ ছবির গান লিখে আবার তৃপ্তি পাই। সুরকার আবু তাহেরের শেষ ছবি ছিলো এটা। সিনেমাটি করতে গিয়ে শাবনূর আমার লেখা খুব পছন্দ করেছেন। একদিন দেখা হলে সে বললো, ‘আপনি আমার সব ছবির গান লিখবেন!’ একজন গীতিকারের জন্য এটা অনেক বড় প্রাপ্তি।’’

সানিা ইয়াসমিন ও রুনা লায়লার মাঝে মুনশী ওয়াদুদ শুধু গানই নয়, সিনেমার সংলাপ চিত্রনাট্যও লিখেছেন মুনশী ওয়াদুদ। যদিও এর একটিতে তার নাম প্রকাশ হয়েছে। বাকি অসংখ্য ছবির চিত্রনাট্য-সংলাপে ইচ্ছে করেই নাম জড়াননি তিনি। কারণ, তিনি চাননি গীতিকারের বাইরে তার অন্য পরিচয় গড়ে উঠুক। মজার তথ্য যে ছবিতে তিনি চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেছেন আনুষ্ঠানিকভাবে, সেটি আজকের শাকিব খানের প্রথম সিনেমা। নাম ‘সবাই তো সুখী হতে চায়’। এই ছবির চিত্রনাট্য-সংলাপের পাশাপাশি ১৩টি গান লেখেন। সুর করেন তবলাবাদক দেবেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। মুনশী ওয়াদুদ বলেন, ‘ভাবতে ভালো লাগে সেই শাকিব খান এখনও আছেন। এবং সর্বোচ্চ নায়ক হিসেবে নিজের অবস্থান করে নিয়েছেন। এই ছবির কাজ করতে গিয়ে আমরা প্রায়সময় এক বেবিট্যাক্সিতে বাসায় ফিরতাম। শাকিব খানকে কেউ গুরুত্ব দিতো না তখন। এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু তার মধ্যে আগ্রহটা ছিলো। ভদ্রতা ছিলো। যেটা এখনও আমার সাথে বিদ্যমান আছে। সেদিনও কাজী হায়াতের ‘বীর’ ছবিতে আমাকে দিয়ে গান করান। পরে শুনেছি, কাজী হায়াতকে শাকিবই বলেছিলো, ‘মুনশী ভাই ছাড়া এই গান হবে না।’ তাই হলো। লিখে দিলাম ‘কি চমৎকার দেখা গেলো’ গানটি। শাকিব মহা খুশি। এবং সে এখনও বলেন, ‘মুনশী ভাই আমার প্রথম ছবি থেকে কতো হিট গান দিয়েছেন, তার হিসাব নাই।’ এতোকাল পর এই এপ্রিসিয়েশনগুলোই আসলে আমার বড় প্রাপ্তি।’’

মান্নার সঙ্গে মুনশী ওয়াদুদ (বামে) ও শেখ সাদী খান (ডানে) মুনশী ওয়াদুদ জানান, এফ আই মানিকের প্রায় সবগুলো সিনেমার চিত্রনাট্য-সংলাপে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তার হাত ছিলো। কিন্তু সেগুলোতে নাম না দিয়ে ‘গীতিকার’ পরিচয়টাই পছন্দ করেন নাখালপাড়ার ‘জমিদার’।

জমিদারই বটে। যার জীবনে কোনও হতাশা নেই। আবার প্রত্যাশাও নেই। যিনি জীবনে কোনও কিছু পরিকল্পনা করে করেননি। এখনও সেই ধারাতেই জীবনটাকে নিয়ে যাচ্ছেন। তাই তো ৫ দশকের ক্যারিয়ারে একটি মাত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্তি কিংবা একুশে পদক না পাওয়ার গ্লানি তাকে বিচলিত করে না। তিনি বলেন, ‘‘দেখুন শাকিব খান আমাকে এখনও স্মরণ করে সম্মান করে। মান্না ছিলো আমার হৃদয়ের একজন মানুষ। তার মতো মানুষ আমি আজও দেখিনি। এতো বড় হৃদয়ের মানুষ, যেটা বলে বোঝানো যাবে না। আমি ডিপজলের সঙ্গে অনেক ছবির গান লিখেছি। গানের মাধ্যমে ডিপজলের মন্দ থেকে ভালো চরিত্রে নিয়ে আসার পেছনে গানগুলো সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। ‘কোটি টাকার কাবিন’ দিয়ে শুরু করে ‘পিতার আসন’, ‘দাদী মা’, ‘চাচ্চু’, ‘মায়ের হাতে বেহেস্তের চাবি’সহ তার ভালো চরিত্রের সব ছবির গান করেছি আমি। সেই সম্পর্ক থেকে আমি বের হয়ে আসতে দ্বিধা করিনি। কারণ, একদিন ‘দাদী মা’ ছবির একটি গান রেকর্ডিংয়ে আলাউদ্দিন আলীর সঙ্গে একটি গানের সুর নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন ডিপজল। সেটা আমি মেনে নিতে পারিনি। সেদিনই আমি ডিপজলের ছবিতে গান লিখবো না বলে সিদ্ধান্ত নিই। এবং লিখিনি দীর্ঘদিন। এরপর একদিন কৌশলে আলাউদ্দিন আলী, এন্ড্রুকিশোর, মনির খান, এফআই মানিক শ্রুতি স্টুডিওতে ডেকে হাত মিলিয়ে ডিপজলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দেয়। এরপর আমি ডিপজলের সঙ্গে আরও গান করি। তো আমি আসলে কমপ্রোমাইজ করিনি গান লেখার লোভে। এটাই দিন শেষে আমার প্রশান্তি।’’

মুনশী ওয়াদুদ মুনশী ওয়াদুদ মনে করেন, ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড যারা পাচ্ছেন এবং দিচ্ছেন; তারা বেশিরভাগই অযোগ্য। তিনি রাজনৈতিক পরিচয় বা লবিং করে পুরস্কার নেননি বলেই তার একমাত্র রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিটি ঘরে উঠেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ২০০৭ সালের ‘সাজঘর’ চলচ্চিত্রে ‘এই তো জীবন/ কিছু হাসি কিছু ক্রন্দন’ লেখার জন্য একমাত্র জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারটি অর্জন করেন তিনি। তার মতে, অন্তত ১০টি গান আছে সিনেমায়, যেটার জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে পারতেন। কিন্তু পাননি। তার ভাষায়, ‘‘লবিং করে আমি যদি কোনও পুরস্কার ঘরে তুলি এবং সেটা আমার পরিবার টের পায়; তবে তা হবে কমিটেড সুইসাইডের মতো। কারণ সেই ব্যক্তিত্ব নিয়ে আমি আমার পুরো জীবনটা চালিত করে আসছি। আর এখন তো দিলেও নিবো না। কারণ, যারা এই পুরস্কার দিচ্ছে এবং নিচ্ছে; দুই পক্ষই চরম অযোগ্য। তারা আমার গানের মাপ নিয়ন্ত্রণ করার যোগ্য নয়। রবীন্দ্রনাথের লাইন চুরি করেও এখন ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পায়। তার মানে যারা এগুলোর বিচারক তারা রবীন্দ্রনাথকেই চেনে না।’’    

ভারতের কণ্ঠশিল্পী কবিতা কৃষ্ণমূর্তির সঙ্গে মুনশী ওয়াদুদ (মাঝে) নায়করাজ রাজ্জাককে টেনে এই সময়ের গীতিকবিতা কিংবা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে আরও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুনশী ওয়াদুদ। বলেন, ‘‘সত্যিকার অর্থে নায়করাজ রাজ্জাকের কথাই বলি। আমি বললে খারাপ শোনাবে। তিনি বলেছেন, ‘এখন না হচ্ছে নাটক, না হচ্ছে টেলিফিল্ম। সিনেমা তো প্রশ্নই আসে না।’ এখন শিষ্টাচার বহির্ভূত গানও অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছে। যেমন ‘তুই কি আমার হবিরে’। এ ধরনের নিকৃষ্টমানের গান জোড়াতালির গান- ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পায় কেমন করে? আরেকটা গান দেখলাম আসিফ-সামিনা পেলেন ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড। ‘আমার মাঝে নেই এখন আমি/ স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে স্বর্গে নামি’। তো স্বর্গ বলতে আমরা আসলে কোথায় মিন করি বা ফিল করি। মানুষ তো নরকে নামে। স্বর্গে আরোহন করে। অথচ গানে কি লেখা হলো- সিঁড়ি বেয়ে স্বর্গে নামেন তারা! এগুলো তো চরম ভুল লেখনি। তাহলে কাদের হাতে গান চলে গেছে। যারা জুরি বোর্ডে আছে, তারা কারা? তাদের কাজ কী? আমি একটা গান ভুল লিখতেই পারি। সেটা ধরবে তো জুরিবোর্ড সদস্যরা। তারা কী করলো? আমি যখন দেখি এসব অশুদ্ধ গানকে বছরের পর বছর পুরস্কৃত করছে- তখন সত্যিই মনটা ভেঙে যায়। মনে হয় দেশের জন্য গানের জন্য যুদ্ধ করলাম কেন?’’

মুনশী ওয়াদুদ মুনশী ওয়াদুদ অসংখ্য গান লিখেছেন গত ৫ দশকে। সংগ্রহে শেষ দিকের কিছু গান আছে। তবে এখনও তার স্মৃতিতে নিজের ও অন্যের লেখা হাজার হাজার গানের তথ্যভাণ্ডার রয়ে গেছে। মূলত সেই স্মৃতিকে পর্দায় তুলে ধরতেই গত সাত বছর ধরে বিটিভিতে একটি অনুষ্ঠানের গ্রন্থনা ও গবেষণা করছেন নিরলস ভাবে। ‘স্মৃতিময় গানগুলো’ নামের এই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও সংগীত পরিচালনায় আছেন মুনশী ওয়াদুদের পাঁচ দশকের সফর সঙ্গী শেখ সাদী খান। আর সার্বিক আলোচনায় থাকেন সৈয়দ আব্দুল হাদী। মুনশী ওয়াদুদের ভাষায়, ‘অনুষ্ঠানটি করার একমাত্র উদ্দেশ্য হারিয়ে যাওয়া বা অপ্রচলিত অসাধারণ সব গানগুলোকে এই প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা।’  

‘স্মৃতিময় গানগুলো’ অনুষ্ঠানের সেটে রেডিও, টেলিভিশন ও সিনেমা মিলিয়ে মুনশী ওয়াদুদের লেখা জনপ্রিয় গানের সংখ্যা অসংখ্য। যার মধ্যে অন্যতম ‘একি খেলা চলছে হরদম/ একদিকে নিরন্ন মানুষ আরেক দিকে এটম’। শেখ সাদী খানের সুরে বিটিভির জন্য তৈরি এই গানটি গেয়েছেন রফিকুল আলম। গানটিকে ঘিরে রয়েছে একটি ঘটনা। মুনশী ওয়াদুদ বলেন, ‘১৯৭৯ সালের গান এটা। প্রথম প্রচার হয় টেলিভিশনে। বরে বেতারেও। পৃথিবীর মানবিকহীনতাকে ঘিরে গানটি লিখি। আমি মনে করি এই গানের কথা বিশ্বজুড়ে এখনও প্রাসঙ্গিক। খেলা চলছে হরদম। তবে গানটি প্রচারের কিছুদিন পরই নিষিদ্ধ হয় বেতার-টেলিভিশন দুটোতেই। অভিযোগ, কেন নিরন্ন মানুষের কথা লিখেছি। তখনকার শাসকরা গানটির কথা পছন্দ করেনি। মজার অথচ হাস্যকর বিষয়, বাংলাদেশ বেতারে দীর্ঘ বছর ধরে আমার কোনও গান বাজানো ও রেকর্ড করাও হচ্ছে না। কেন, কী অপরাধে সেটা জানি না। বেতার থেকে ডাক পাই না। সেখানে আমার গান আর বাজে না। অথচ আমি আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি বেতারের প্রথম তালিকাভুক্ত গীতিকার। আমার জীবনের স্বর্ণালী সময়টা দিয়েছি সেই বেতারেই। আবার দেখুন বিটিভিতে কিন্তু ঠিকই সাত বছর ধরে অনুষ্ঠান করছি। তাতে আবার বেতারের বিপরীত অবস্থানে আছি! একি খেলা চলছে হরদম! একই প্রশ্ন আজও। উত্তর পাই না।’

মুনশী ওয়াদুদের পুরস্কার এবার চোখ বোলানো যাক মুনশী ওয়াদুদের লেখা নিজের পছন্দর কয়েকটি গান:

সাঁঝের বেলায় পাখি ফিরে নীড়ে তার
শিল্পী: সাবিনা ইয়াসমিন
সুর: এ এইচ মোঃ রফিক

তোমার চন্দনা মরে গেছে
শিল্পী: মিতালী মুখার্জী
সুর: শেখ সাদী খান

আমার নাই কোনও নাম নাই
শিল্পী: এন্ড্রু কিশোর
সুর: আলম খান
ছায়াছবি: চাচ্চু

চন্দ্রসূর্য সবি আছে আগের মতোই
শিল্পী: সামিনা চৌধুরী
সুর: শেখ সাদী খান
ছায়াছবি: প্রেম দিওয়ানা

সোহাগে আদরে বেঁধেছো আমারে
শিল্পী: খালিদ হাসান মিলু ও সাবিনা ইয়াসমিন
সুর: আবু তাহের
ছায়াছবি: এ বাঁধন যাবে না ছিঁড়ে

ভালোবাসা ফিরে এলো ভালোবাসার ঘরে
শিল্পী: এন্ড্রু কিশোর ও সাবিনা ইয়াসমিন
সুর: আলাউদ্দিন আলী
ছায়াছবি: জজ ব্যারিস্টার পুলিশ কমিশনার

ফুলের মতো একটা জীবন
শিল্পী: রুনা লায়লা
সুর: ইমন সাহা
ছায়াছবি: রাজা সূর্য খাঁ

তোমাকে ভালোবেসে হয় যদি মরণ
শিল্পী: সাবিনা ইয়াসমিন
সুর: দেবেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়
ছায়াছবি: সবাই তো সুখী হতে চায়

ভালোবাসা সীমাহীন এ জীবন সীমাহীন নয় তো
শিল্পী: মনির খান ও ন্যানসি
সুর: আলী আকরাম শুভ
ছায়াছবি: ভালোবাসা সীমাহীন

একটি স্বাধীন দেশ
একটি স্বাধীন পতাকা
শিল্পী: এন্ড্রু কিশোর
সুর: সুজেয় শ্যাম
ছায়াছবি: ৭১-এর মা জননী

মধুচন্দ্রিমার এই রাত যেন গল্প বলে যায়
শিল্পী: আবিদা সুলতানা
সুর: এ এইচ মোঃ রফিক

আমার দুই দিকে দুই পৃথিবী
শিল্পী: এন্ড্রু কিশোর, সাবিনা ইয়াসমিন ও রুনা লায়লা
সুর: ইমন সাহা
ছায়াছবি: দুই পৃথিবী

আকাশে চাঁদ উঠেছে
বাগানে ফুল ফুটেছে
শিল্পী: কনকচাঁপা
সুর: আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল
ছায়াছবি: আজ গায়ে হলুদ

একটা জীবন একটাই মন
শিল্পী: কনকচাঁপা
সুর: আলাউদ্দিন আলী
ছায়াছবি: স্বপ্নের বাসর

একি খেলা চলছে হরদম
শিল্পী: রফিকুল আলম
সুর: শেখ সাদী খান

মুনশী ওয়াদুদ জ্যেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে এই প্রজন্মের প্রতি কী পরামর্শ থাকবে মুনশী ওয়াদুদের। এমন প্রশ্ন করতেই খানিকটা বিষণ্ণ হলেন গীতিকবি সংঘ বাংলাদশ-এর এই আজীবন সদস্য। জানলার ফাঁক গলে এক্সপ্রেস ওয়েতে চোখ স্থির করে বললেন, ‘যে সমাজে রবীন্দ্রনাথকে চুরি করে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া যায়, সেখানে শুদ্ধতার গল্প বাতুলতা মাত্র। আমার এখনও একটা গান লিখতে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় লাগে। চাইলে ৫০ বছরে অন্তত ২০ হাজার গান লিখতে পারতাম। লিখিনি তো। দুহাতে ফিরিয়েছি। এ প্রজন্মেও ভালো গীতিকার যে নেই, তা তো নয়। আছে। কিন্তু সংখ্যাটা খুবই কম। আমার পরামর্শ, শুধু লাইনের শেষে পারবোনা, এসোনা, পারিনা লিখে দিলেই গান হবে না। আমি বলবো মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, গৌরি প্রসন্ন মজুমদার, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়- এসব মানুষের গান বার বার খাতায় লিখবে, পড়বে, শুনবে। তাহলেই ডেভেলপ হবে। শুদ্ধতায় ফিরবে। বহু কাছের মানুষ মজা করে বলে রফিকউজ্জামানের চেয়ে এক কাঠি সরেস মুনশী ওয়াদুদ। কারণ আমি অপ্রিয় সত্য কথাটা অকপটে মুখের ওপর বলে ফেলি। কিন্তু এখন তো দেখছি শত শত গীতিকার। শুদ্ধতা কোথায়? লিখতে হচ্ছে কারও না কারও হাত-পা ধরে। যাদের ব্যক্তিত্ব নেই তারাই বেশি লিখছে, পুরস্কারও পাচ্ছে। এভাবে আর কতো? অল্প লেখেন, ভালো লেখেন, শুদ্ধ লেখেন। অগ্রজ হিসেবে এটাই আমার বিনীত অনুরোধ।’ একটি লিরিক প্রতিযোগিতায় পাশাপাশি বসে গান বাছাই করছিলেন মুনশী ওয়াদুদ, রফিকউজ্জামান প্রমুখ

ছবি: মামাগ্রাফি ও মুনশী ওয়াদুদের অ্যালবাম থেকে