Durga Puja 2023 in Berlin: কলকাতা থেকে এসেছে লালপেড়ে শাড়ি, পঞ্জাবি; বার্লিনের পুজোয় পুরোহিত জার্মানির

পঞ্চমীর রাতে ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২টা ছুঁইছুঁই (বার্লিনের স্থানীয় সময় অনুযায়ী)। বাইরে তাপমাত্রা ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। তারইমধ্যে ভিতরে জোরকদমে চলছে বার্লিন সর্বজনীন দুর্গোৎসবের শেষমুহূর্তের প্রস্তুতি। অধিকাংশ মানুষ যে দিনভরের অফিস, কাজকর্মের পর এসেছেন; তা বোঝাই যাচ্ছে না। চোখেমুখে ক্লান্তির লেশমাত্র নেই। আর থাকবেই বা কীভাবে, আর কিছুক্ষণ পরে তো জার্মানির অন্যতম বড় শহর বার্লিনেও ‘মা আসছেন’।

গত তিন বছর ধরে আমাদের এখানেও দুর্গাপুজো হচ্ছে। বার্লিনের গণেশ মন্দিরে পুজোর আয়োজন করা হয়। কলকাতায় আমাদের পাড়ার পুজোয় যেমন প্রতি বছর একেবারে নতুন করে মণ্ডপ গড়ে তোলা হয়, বার্লিনে সেরকম করা সম্ভব হয় না। কিন্তু পুজো-পুজো ভাবটা চেটেপুটে নিতে নিয়ম মেনে আমরা ‘খুঁটিপুজো’ করি। এবার যেমন ১৬ জুলাই জমজমাটভাবে ‘খুঁটিপুজো’ হয়। তারপর থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল। অবশেষে পঞ্চমীতে আমরা মা দুর্গা ও তাঁর সন্তানদের আমরা ‘বাইরে’ এনেছি। আগামী চারটা দিন মা আমাদের কাছে থাকবেন – নিজের ‘বাবার বাড়িতে’, সেই বাড়ি প্রবাসী বাঙালিদের বার্লিনে।

এখন মনে হতে পারে যে কেন মা দুর্গা ও তাঁর সন্তানদের আমরা ‘বাইরে’ নিয়ে এসেছি বললাম? কারণ এবার যে মূর্তিতে পুজো হবে, সেই মূর্তি ২০২১ সালে কলকাতার কুমোরটুলি থেকে আনা হয়েছিল। শিল্পী মিন্টু পালের তৈরি করা সেই মূর্তি জাহাজে চেপে এসেছিল বার্লিনে। পাঁচ বছর সেই মূর্তিতে পুজো হবে। তারপর ফের নতুন মূর্তি আসবে কলকাতা থেকে। তাই এখন প্রতিবার পুজোর শেষে কাঠের বাক্সে করে বিশেষ লকারে মায়ের প্রতিমা রেখে দেওয়া হয়। বার্লিনেই থাকে সেই লকার। প্রতিমা নিরঞ্জন হয় না। আবার পরেরবার পুজোর আগে লকার থেকে প্রতিমা বের করে আনা হয়। করা হয় পুজো।

আসছেন মা। (ছবি সৌজন্যে অরিজিৎ পাত্র)

তবে প্রতি বছরই দশকর্মার যাবতীয় সামগ্রী আনা হয় কলকাতা থেকে। পুজো কমিটির সঙ্গে যুক্ত কাকু-জেঠুরা কলকাতায় গিয়ে থেকে দশকর্মার সামগ্রী পার্সেল করে দেন। তা দিয়েই পুজো করা হয়। আর সেইসঙ্গে যেন চলে আসে কলকাতার আবেগও। পুজোর কয়েকটা দিন মনে হয় যে নিজের পাড়ার পুজোয় আছি। সেই পাড়ার পুজোর মতো মজা হয়। চলে দেদার আড্ডা, পেটপুজো। বার্লিনের প্রবাসী বাঙালিরাই পাড়ার বন্ধু-বান্ধব হয়ে ওঠেন।

শুধু বার্লিনই নয়, ফ্রাঙ্কফুট, ডুসেলডর্ফের মতো জার্মানির বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রবাসী বাঙালিরা আমাদের পুজো প্রাঙ্গণে আসেন। এমনকী নেদারল্যান্ডস থেকেও অনেকে বার্লিনের পুজোয় আসেন। সকলে মিলে পুজোর দিনগুলো উপভোগ করি। পুজোর সময় বাড়ি ফিরতে না পারার জন্য যে একটা মনখারাপ থাকে, সেটা কেটে যায়। আর যেটুকু মন খারাপ থাকে, সেটা পুজোর শুরুতে পুরোহিত মশাইয়ের মন্ত্র শুনলে কেটে যায়। যিনি ডুসেলডর্ফ থেকে এসে পুজো করেন। তখন বার্লিনই আমার কাছে হয়ে ওঠে কলকাতা।

আর কলকাতার দুর্গাপুজোর সঙ্গে আমাদের দুর্গাপুজোর আরও একটি মিল আছে। পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুজোয় যেমন পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তের মানুষের দ্বার খোলা থাকে, তেমনই হয় আমাদের দুর্গাপুজোয়। প্রবাসী বাঙালিরা তো বটেই, প্রচুর প্রবাসী ভারতীয়ও পুজোয় আসেন। থাকেন বিদেশিরাও। এবার তো পুজোর মধ্যে জার্মান ভাষায় নাটক করবেন ভারতীয়রা। পুজোর পাঁচদিনই থাকছে বিভিন্নরকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ষষ্ঠীতে বিশেষ পুজোবার্ষিকীও প্রকাশ করা হবে।

<p>পুজো স্পেশাল খাওয়া-দাওয়াও থাকবে। (ছবি সৌজন্যে অরিজিৎ পাত্র)</p>

পুজো স্পেশাল খাওয়া-দাওয়াও থাকবে। (ছবি সৌজন্যে অরিজিৎ পাত্র)

আর হ্যাঁ, অঞ্জলির জন্য কলকাতা থেকে লালপাড় সাদা শাড়ি, ধুতি-পঞ্জাবিও আনা হয়েছে। অষ্টমীর সকালে অনেকেই সেই আবেগের পোশাক পরবেন। দেবেন অঞ্জলি। আর সেই মুহূর্তটার জন্য অপেক্ষা করছি।

(লেখক পরিচিতি: গত দেড় বছর কর্মসূত্রে বার্লিনে আছেন কলকাতার ছেলে অরিজিৎ পাত্র। পেশায় তিনি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারি। বার্লিনে এটা তাঁর দ্বিতীয় পুজো।)